বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Sunday, December 22, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » লাইফ স্টাইল » স্বার্থপর চেনার যত উপায়

স্বার্থপর চেনার যত উপায় 

sd1

নিউজ ডেস্ক : চলতি পথে অথবা কাজের পরিমণ্ডলে কত লোকের সঙ্গেই না আলাপ হয় আপনার। প্রথম দেখাতেই তো আর সব মানুষকে চেনা যায় না। নিজের স্বার্থটাকে বড় করে দেখেন এমন মানুষ কিন্তু কম নেই। এ ধরণের মানুষ আপনার ক্ষতির কারণ হতে পারে। এমন মানুষের কারণে জীবনের রঙও বিবর্ণ হতে পারে কখনো কখনো। তাদের চেনারও আছে কিছু উপায়। সে সব জানা থাকলে স্বার্থপরদের এড়িয়ে নিজের অবস্থান ঠিক রেখে তাদের সঙ্গে পাশাপাশি কাজ করতে পারেন আপনিও।

স্বার্থপরেরা নিজের দিকটাই বড় করে দেখেন। অন্যের স্বার্থ তার কাছে তুচ্ছ। এরাই সমাজে স্বার্থপর হিসেবে চিহ্নিত। দেখা যাবে, সে আলোচনার সব বিষয় নিজের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। নিজের মহত্ত্ব প্রকাশে গর্ব করছে। সমাজের আর দশজন তাকে সব ক্ষেত্রে আলাদা করে দেখুক, এটাই সে চায়। সবসময় আবার স্বার্থপর চেনা মুশকিল। কারণ অনেক সময় তাদের বৈশিষ্ট্যগুলো স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায় না।

জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি বিভাগের প্রধান ও স্বার্থপরতা বিষয়ক গবেষক ডব্লিউ কেনেথ কম্পবেল বলেন, যারা স্বার্থপরতামূলক বৈশিষ্ট্য ধারণ করে তাদের মধ্যে চলমান একটা স্বভাবসুলভ আচরণ লক্ষ্য করা যায়। তবে স্বার্থপরতার মাত্রা হিসেবে অধিকাংশ স্বার্থপর মাঝামাঝি পর্যায়ের। যদিও কেউ কেউ চরম পর্যায়ের স্বার্থপরতায় লিপ্ত থাকে।

প্রথম সাক্ষাতেই পছন্দ হবে স্বার্থপর : এ ধরনের স্বার্থপর প্রথম প্রকাশ ভঙ্গিতেই নিজেকে বড় করে উপস্থাপন করে। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করে। এরা চাকরির সাক্ষাৎকারে নেতিবাচক ফল করে। প্রথম দেখাতেই এদের ভালো লাগতে পারে যে কারোর। কিন্তু দীর্ঘ সময় পর এদের থেকে অনেক নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য বেরিয়ে আসে।

কম্পবেল বলেন, ‘তখন হঠাৎ করেই তার প্রতি অবাক হয়ে যেতে হয় এবং আক্ষেপ করে বিস্ময়ের সঙ্গে বলতে হয় আমি যাকে এত ভালো জেনেছিলাম, সে এত নেতিবাচক!’

লাজুক এবং শান্ত প্রকৃতির স্বার্থপর : আগ বাড়িয়ে এরা নিজেকে বড় করে দেখাতে আসে না এবং বেশি কথা বলে না। তবে যখন তাদের সঙ্গে কেউ কথা বলতে আসে এবং কম কথার মাঝে যে দু-চারটে কথাই তারা বলে। সে কথাগুলোর মাধ্যমে নিজেকে বড় করে জাহির করতে চেষ্টার কমতি থাকে না।

ইয়োয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. জেলাটন ক্রাইজেন বলেন, ‘একপ্রকার স্বার্থপর নিজেকে প্রবলভাবে কর্তৃত্বপূর্ণ হিসেবে উপস্থাপন করে। আরেক প্রকার লাজুক, যারা নিজেকে সহজে স্পষ্ট করে উপস্থাপন করে না এবং সংকীর্ণ প্রকৃতির হয়। কিন্তু তারা দৃঢ়ভাবে মনে করে তাদের দিন একদিন আসবে।’

নিজেকে নেতা হিসেবে জাহির করে : সফল না হলেও তারা নিজেকে সর্বদা নেতৃত্বের পর্যায়ে রাখতে তৎপরতা দেখায়। সান ডিয়াগো স্টেট ইউনিভার্সিটির সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর ও স্বার্থপরতা বিষয়ক গবেষণায় কম্পবেলের সহযোগী ড. জিয়ন টুয়েনজ বলেন, এরা সবসময় নিজেকে নেতা হিসেবে দেখতে চায়। কিন্তু ভালোভাবে নেতৃত্ব দিতে পারছে কি না, তা দেখে না। তারা নিতান্তই নেতা হতে চায়, যে করেই হোক না কেন।

গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে : কম্পবেল বলেন, এ ধরনের স্বার্থপর নিজের অবস্থান আরো বড় করে দেখানোর জন্য বড় বড় গুরুত্বপূর্ণ মানুষের নাম উল্লেখ করে এবং তাদের বিখ্যাত উক্তি, সূত্র, ঘটনা প্রভৃতি তুলে ধরে। আলোচনার মধ্যে নিজের অবস্থানকে আরো সুদৃঢ় করতে তারা এ কৌশল নেয়। তাদের সঙ্গে নিজের যোগাযোগ বা খাতিরের সত্য-মিথ্যা গল্পও হাজির করে।

ভালো জিনিস পছন্দ করে : সব স্বার্থপরই নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশে তৎপর থাকে। তবে কৌশল ভিন্ন। ঠিক এভাবেই একপ্রকার স্বার্থপর নিজের শ্রেষ্ঠত্বকে জাহির করতে তার ভালো ভালো পছন্দের জিনিসের নাম উল্লেখ করে। টুইনজ বলেন, সে বলতে পারে বিখ্যাত ব্র্যান্ডের গাড়ি ফেরারি তার পছন্দ। অথবা খেতে ভালোবাসে দামি কোনো রেস্টুরেন্টে।

সব স্থানে তাদের উপস্থিতি : গবেষক টুইনজ বলেন, এই প্রকারের স্বার্থপরেরা সব স্থানে নিজের উপস্থিতি জানান দেয়ার একটা প্রবল তৎপরতা দেখায়। তারা নিজেকে অন্যের কাছে আকর্ষণ করতে শারীরিকভাবেও তৎ্পরতা দেখায়। যেমন: তারা বিভিন্ন স্টাইলের চুল, নখ প্রভৃতি দিয়ে অন্যের আকর্ষণের কারণ হতে চায়।

সভ্য এবং মহৎ হিসেবে উপস্থাপন : গবেষক ড. কম্পবেল বলেন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে একপ্রকারের স্বার্থপর নিজেকে সভ্য এবং মহৎ হিসেবে উপস্থাপন করে। তারা আলোচনার সময় বলে, আমার এত এত বন্ধু ফেসবুকে বা আমার প্রোফাইলে কোনো খারাপ ছবি নেই। এসব বলে সে নিজেকে আলোচনার ক্ষেত্রে গর্ব করে।

নিজের সমালোচনা সহ্য করে না : তার সমালোচনা কোনোভাবেই মেনে নেয় না। কম্পবেল বলেন, তার সমালোচনা কেউ করলে সে সহ্য করতে পারে না। এমন কি সে নিজের সমালোচনামূলক কোনো নেতিবাচক কিছু স্বীকারও করে না কোনোভাবেই।

ব্যর্থতার দিক এড়িয়ে যাবে : জীবনে অবশ্যই অনেক ব্যর্থতার দিক থাকবে কিন্তু সে তার ব্যর্থতার দিকগুলো এড়িয়ে যাবে। এমনকি যখন শুনবে তার কাছের বন্ধু বা সহপাঠী বিপদে বা খারাপ পরিস্থিতিতে আছে, তখন সে তাদের এড়িয়ে যাবে। কম্পবেল বলেন, সম্পর্কের ক্ষেত্রে এরা অন্যকে সন্দেহের চোখে দেখে। সম্পর্ক নষ্ট করতে তাদের এ রকম ব্যবহারে অন্য জন আর কখনো তাকে বিশ্বাস করে না।

প্রতারণাপূর্ণ মনোভাব : এদেরকে অনেক আকর্ষণীয় মনে হতে পারে বাহ্যিকভাবে কিন্তু এরা প্রতারণামূলক আচরণ করে থাকে। কম্পবেল বলেন, এদেরকে কেন প্রতারক বলা হবে, সেটা বুঝতে হলে প্রশ্ন করুন কেন এরা সবাইকে অবিশ্বাস করে?

নিজেকে কখনই স্বার্থপর মনে করে না : কখনই নিজেকে স্বার্থপর হিসেবে মনে করে না। এমনকি সে নিজেকে কখনই স্বার্থপর হিসেবে বুঝতেও চায় না বা চেষ্টাও করে না। গবেষক ক্রাইজেন বলেন, সহপাঠীরা তার মধ্যে স্বার্থপরতার প্রমাণ পেয়ে ছেড়ে চলে গেলেও সে নিজেকে একজন স্বার্থপর হিসেবে স্বীকার করে না। বরং সে বলে আমি তো ঠিক আছি, আমার সব কিছুই তো ভালো কিন্তু কেন সবাই আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে?

আত্মমর্যাদায় তুঙ্গে : এই প্রকারের স্বার্থপরেরা নিজের স্ট্যাটাস সব সময় উঁচুতে রাখতে সচেষ্ট থাকে। গবেষক টুইনজ বলেন, এরা নিজেকে সবসময় উচ্চ আত্মমর্যাদায় রাখতে চায় এবং কখনই নিজেকে অনিরাপদ ভাবে না। কম্পবেল বলেন, এ ধরনের স্বার্থপরকে খুব আত্মবিশ্বাসী মনে হয়।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone