গ্যাসের সমস্যা সমাধানের কিছু সহজ এবং কার্যকরী ঘরোয়া উপায়
এসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা আমাদের সকলের কাছেই খুবই পরিচিত একটি রোগের নাম। আমরা সকলেই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে এ সমস্যায় ভুগে থাকি। এটি এক ধরনের পরিপাক সংক্রান্ত সমস্যা যা আমাদের পাকস্থলির গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থিতে অতিরিক্ত এসিড উৎপন্ন হওয়ার দরুণ ঘটে থাকে। যখনই পাকস্থলীতে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত এসিড উৎপন্ন হয় তখন সাধারণ পর্যায়ে নানা রকম উপসর্গ দেখা দেয় যেমন বুকজ্বলা, বুকে ব্যাথা, মুখ টক হয়ে থাকা, বমিভাব, পেট ফেঁপে যাওয়া, হিচকি উঠা, বিনা কারণে স্বাস্থ্যহানি ঘটা, বিরক্তি বোধ করা ইত্যাদি। সবার ক্ষেত্রে সব রকম উপসর্গ দেখা যায়না। একেকজন একেকরকম সমস্যায় ভুগে থাকেন। এমন কে আছেন যিনি গ্যাসের সমস্যার ভুগেন না ! কেউতো আবার দিন শুরুই করেন গ্যাসের ওষুধ খেয়ে। এই গ্যাসের কারণে শরীরে বাসাবাধে নানান অসুখ বিসুখ। তবে কিছু ঘরোয়া উপায়ে গ্যাস থেকে মুক্তি মিলতে পারে। জেনে নেয়া যাক এমন কিছু উপায়:-
১) কলা: কলা কার না প্রিয়! কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে, আর এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড। অ্যাসিড রিফ্লাক্সের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে একটা করে কলা খাওয়া যেতে পারে খালি পেটে।
২) তুলসী পাতা: তুলসী পাতা পাকস্থলীতে শ্লেষ্মার মতো পদার্থ উৎপাদনে সাহায্য অরে। সকালে চায়ের মধ্যে কয়েকটা তুলসী পাতা ফেলে দিন। চায়ের সঙ্গে ফুটিয়ে খালি পেটে সেই চা খান। সুস্বাদু চায়ের পাশাপাশি গ্যাসের ব্যথা থেকে মুক্তি মিলবে দ্রুত।
৩) মৌরি: খাওয়ার পরে মৌরি চিবিয়ে খেলে অ্যাসিড হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। রাতের বেলা ঘুমাতে যাওয়ার আগে পানিতে মৌরি ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন সকালে খালি পেটে খান। কিংবা গরম পানিতে মৌরির সঙ্গে কয়েকটি পুদিনা পাতা দিয়ে ফুটিয়ে খেতে পারেন। গ্যাসের সমস্যা থেকে মিলবে প্রশান্তি।
৪) আদা-রসুন : আদা-রসুন গ্যাস, অম্বলের হাত থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। আদা খাবার হজমেও সাহায্য করে। তাই খাওয়ার আধ থেকে এক ঘণ্টা আগে আদা কুঁচি করে বিটনুন দিয়ে খান। এতে খাওয়ার পরে অম্বলের সমস্যা থাকবে না। রসুন শুধু রান্নায় স্বাদ বাড়ায় না। রসুনে থাকা প্রচুর পরিমাণে ফাইবার হজমে বেশ কাজে দেয়।
৫) জিরা: জিরা পেটের গ্যাস, বমি, পায়খানা, রক্তবিকার প্রভৃতিতে অত্যন্ত ফলপ্রদ।
৬) লবঙ্গ: দুই থেকে তিনটি লবঙ্গ মুখে দিয়ে চুষলে একদিকে বুক জ্বালা, বমিবমিভাব, গ্যাস দূর হয়। সে সঙ্গে মুখের দুর্গন্ধ দূর করে চমৎকারভাবে।
৭) টকদই: টকদইয়ে থাকে ক্যালসিয়াম, যা পাকস্থলীতে গ্যাস তৈরি হতে দেয় না। এর সঙ্গে বিটনুন মিশিয়ে খেতে পারেন। টকদইয়ে থাকা ল্যাকটিক অ্যাসিড হজম প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী বানায়।
৮) পেঁপে: পেঁপেতে রয়েছে পাপায়া নামক এনজাইম যা হজমশক্তি বাড়ায়। নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস করলেও গ্যাসের সমস্যা কমে।
৯) ঠাণ্ডা দুধ: পাকস্থলির গ্যাসট্রিক এসিডকে নিয়ন্ত্রণ করে অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি দেয় ঠাণ্ডা দুধ। এক গ্লাস ঠাণ্ডা দুধ পান করলে অ্যাসিডিটি দূরে থাকে।
১০) দারুচিনি: হজমের জন্য খুবই ভালো। এক গ্লাস পানিতে আধ চামচ দারুচিনির গুঁড়ো দিয়ে ফুটিয়ে দিনে ২ থেকে ৩ বার খেলে গ্যাস দূরে থাকবে।
১১) শসা: শসা পেট ঠাণ্ডা রাখতে অনেক বেশি কার্যকরী খাদ্য। এতে রয়েছে ফ্লেভানয়েড ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা পেটে গ্যাসের উদ্রেক কমায়।
১২) এলাচ: লবঙ্গের মতো এলাচ গুঁড়ো খেলে অম্বল দূরে থাকে।
এছাড়া ঘরোয়া আরও অনেক উপায় আছে যা নিয়মিত পালনে গ্যাস থেকে মুক্তি মেলে। তবে খাদ্যাভ্যাস মেনে চলার বিকল্প নেই। তবে সবকিছুকে আবার গ্যাসের ব্যাথা মনে করে বসে থাকা উচিত নয়। জরুরী মুহূর্তে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।