ঝুঁকিমুক্ত বাংলাদেশ
রোকন উদ্দিন, ঢাকা : অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এরমধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বা সংহতির প্রতি ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকা হতে বেরিয়ে আসলো।
সোমবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
মন্ত্রী জানান, গত বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের প্যারিসে অনুষ্ঠিত ফাইনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের প্লানারি সভায় সর্বসম্মতভাবে বাংলাদেশের মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মান অর্জন করেছে মর্মে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা অসুবিধায় ছিলাম। এটা দূর হয়েছে। আমরা গ্রে-লিস্টে ছিলাম, এ থেকে ব্লাক-লিস্টে আসতে পরতাম। অনেক দেশ ব্লাক-লিস্টে আছে। এখান থেকে আমরা মুক্তি পেয়েছি। গত কয়েক বছরে আমরা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে যেসব বিধি-বিধান তৈরি করেছি তার প্রেক্ষিতেই এফএটিএফের সভায় বাংলাদেশের ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদি আমরা কালো তালিকায় ঢুকে যেতাম তাহলে আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের মর্যাদা প্রশ্নের মুখে পড়তো।
অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, বাজেট বরাদ্দের অর্থ দিয়ে পদ্মাসেতু প্রকল্পের বৈদেশিক মুদ্রার দায় পরিশোধে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকার ডলার নেবে। পদ্মাসেতুর ডলার ব্যবহার নিয়ে একটা ভুল বুঝাবুঝি তৈরি হয়েছে। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাজেট বরাদ্দের অর্থ দিয়ে ডলার নেবো। পদ্মাসেতু প্রকল্পে ২২০ কোটি ডলার প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে আমাদের ১ হাজার ৮৫০ কোটি ডলারেও বেশি রিজার্ভ রয়েছে। তাই ২২০ কোটি ডলার নেওয়া খুব বেশি নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, আমরা যদি সফল না হতাম তাহলে আমরা একটা ঝুঁকিপূর্ণ দেশে পরিণত হতাম। কেউ আমাদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে চাইত না। এর থেকে আমরা মুক্তি পেয়েছি। তিনি বলেন, এখন ঋণপত্র (এলসি) খোলায় খরচ কম হবে। ধূসর বা কালো তালিকাভুক্ত থাকলে বৈদেশিক সাহায্য পেতেও সমস্যা হয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, সন্ত্রাস বিরোধী আইন ও অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তায় এবং বিধিমালা জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট কনভেনশন ও রেজুলেশনের আলোকে প্রণীত হয়েছে। মানি লন্ডারিং সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার, উচ্চ পর্যায়ের সচেতনতার প্রশংসা করা হয়।
প্রসঙ্গত, ফাইনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স হলো- ৩৪টি উন্নত দেশ ও দুটি আঞ্চলিক সংস্থা নিয়ে গঠিত আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংস্থা, যা মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করে।
ফাইনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের মানদণ্ড জাতিসংঘের বিভিন্ন কনভেনশন-প্রোটোকল এবং নিরাপত্তা পরিষদে সংশ্লিষ্ট রেজুলেশনের ওপর ভিত্তি করে রচিত, যা পৃথিবীর প্রায় ১৮০টি দেশ বা রাষ্ট্রের জন্য পালনীয়। ঝুঁকিপূর্ণ তালিকা হতে বেরিয়ে আসার ফলে একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যয় হ্রাস পাবে।