বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Sunday, December 22, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » শর্ত সাপেক্ষে ভারতের সাথে সমুদ্রের তেল-গ্যাস অনুসন্ধান চুক্তি

শর্ত সাপেক্ষে ভারতের সাথে সমুদ্রের তেল-গ্যাস অনুসন্ধান চুক্তি 

gas ai

ডেস্ক রিপোর্ট : বিভিন্ন সংগঠন ও বিশেষজ্ঞদের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও সমুদ্রের তেল গ্যাস ইজারা দেয়া হলো ভারতকে। চুক্তি সাক্ষরের মাধ্যমে সরকার তাই করেছে বলে মনে করেন এখাতের বিশেষজ্ঞরা। অগভীর সমুদ্রের ৪ ও ৯ নম্বর ব¬কে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান এবং উত্তোলনে ভারতীয় অয়েল অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস কর্পোরেশনের দুই কোম্পানি ওএনজিসি বিদেশ লিমিটেড (ওভিএল) ও অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেডের (ওআইএল) সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বিশেষজ্ঞরা ব লছেন আগের চেয়ে আরও ক্ষতিকর শর্তে ভারতের সাথে এই চুক্তি সাক্ষরিত হলো।download

সোমবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলা কার্যালয়ে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে সিনিয়র সহকারী সচিব খাদিজা নাজনীন, পেট্রোবাংলার পক্ষে কোম্পানি সচিব ইমাম হোসেন ও বাপেক্সের পক্ষে কোম্পানি সচিব আব্দুস সবুর স্বাক্ষর করেন। অন্যদিকে ভারতীয় কোম্পানি ওভিএলের পক্ষে কোম্পানির এমডি ও সিইও এ জে দুর্গাল এবং ওআইএলের পক্ষে এন হাজারিকা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

চুক্তির আওতায় কোম্পানিগুলো ১৪ হাজার ২শ’ ৯৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ২-বি সাইসমিক ছাড়বে ও দু’টি কূপ খনন করবে। এ সব ব¬কে গ্যাস বা তেল পাওয়া গেলে উত্তোলিত গ্যাস পেট্রোবাংলার কাছে বিক্রি করতে হবে। তবে পেট্রোবাংলা যদি কিনতে না চায় সেক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করতে পারবে তারা। তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে ১০ শতাংশ শেয়ারে কাজ করবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন-বাপেক্স।

চুক্তি অনুযায়ী দু’টি ব¬কে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিতে হবে বাংলাদেশ থেকে। চুক্তি সাক্ষরের সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহি চৌধুরী, ভারতের হাই কমিশনার পঙ্কজ শরণসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তাদের আশা এ চুক্তি দুই দেশের জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে। পঙ্কজ সমুদ্রে ভারতীয় কোম্পানিকে গ্যাস অনুসন্ধানের সুযোগ দেওয়ায় বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

চুক্তি শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনময়কালে ভারতীয় অয়েল অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস কর্পোরেশনের এমডি ও সিইও ডিকে শারাফ বলেন, ‘এ দু’টি কোম্পানি শুধু ভারত-বাংলাদেশ নয় মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, নাইজেরিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের ৩৭টি ব¬ক ও সাইটে কাজ করছে। তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে ওভিএল ও ওআইএলের অতীত অভিজ্ঞতা রয়েছে। আশা করছি তারা এ দু’টি ব¬কে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে সফলতা দেখাবে।’

এদিকে, ভারতের ওএনজিসির ও যুক্তরাষ্ট্রের কনোকো-ফিলিপসের সঙ্গে সমুদ্রের গ্যাস ব¬ক অনুসন্ধানে চুক্তির তীব্র বিরোধিতা করেছেন তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল¬াহ এবং সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

তারা বলেন, আমরা সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, সরকার সংশোধিত ‘পিএসসি ২০১২’ অনুযায়ী ভারতের ওএনজিসির সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের দু’টি গ্যাসব্ল¬ক এবং এ মাসের শেষে যুক্তরাষ্ট্রের কনোকো-ফিলিপসের সঙ্গে একটি গ্যাস ব¬ক চুক্তি করতে যাচ্ছে। বঙ্গোপসাগরের গ্যাস সম্পদ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ জ্বালানি নিরাপত্তার প্রধান অবলম্বন। অথচ এ চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে, নিজ দেশের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তাহীন করে, বিদেশি কোম্পানির ব্যবসায়িক স্বার্থ যোগান দেওয়ার অর্থ দাঁড়ায় দেশের গ্যাস সম্পদ যেন বাংলাদেশের জন্য অভিশাপ। তাই এ চুক্তি না করার জন্য আমরা সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি। জাতীয় কমিটির এ শীর্ষ দুই নেতা এক বিবৃতিতে সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানান।

তারা বলেন, পিএসসি ২০০৮-এ রফতানির বিধান নিয়ে আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম, জনপ্রতিরোধ ও জনমতের চাপে পিএসসি ২০১২ তে রফতানির বিধান রাখা হয়নি। এটি জনগণের আন্দোলনের বিজয় বলে আমরা মনে করি। কিন্তু সংশোধিত পিএসসি ২০১২ তে বিদেশি কোম্পানির অধিকতর মুনাফার স্বার্থে গ্যাসের ক্রয়মূল্য আগের চুক্তির তুলনায় শতকরা ৬০-৭০ ভাগ বাড়ানো হয়েছে। দ্বিতীয়ত, প্রতিবছর গ্যাসের দাম শতকরা ৫ ভাগ হারে বৃদ্ধির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তৃতীয়ত, ব্যয় পরিশোধ পর্বে বিদেশি কোম্পানির অংশীদারিত্ব শতকরা ৫৫ ভাগ থেকে বৃদ্ধি করে শতকরা ৭০ ভাগ করা হয়েছে। চতুর্থত, যথেচ্ছ দামে তৃতীয় পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রির অনুমতি দেয়া হয়েছে।

তারা বলেন, পুঁজির অভাবের কথা বলে এ রকম চুক্তি করা হচ্ছে, অথচ এতে ওএনজিসি যে বিনিয়োগ করবে তার দ্বিগুণ অর্থ গ্যাস উন্নয়ন তহবিলে অলস পড়ে আছে। এ রকম মডেলে চুক্তি স্বাক্ষর করলে বঙ্গোপসাগরের গ্যাস সম্পদ যে শুধু বিদেশি কোম্পানির দখলে চলে যাবে তাই নয়, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্পায়নের জন্য গ্যাস সম্পদ কাজে লাগানও সম্ভব হবে না। আমদানি করা গ্যাসের চাইতেও বেশি খরচ হবে নিজ দেশের গ্যাস ক্রয়ে। উপরন্তু চুক্তির কারণে বাংলাদেশের আর্থিক বোঝাও সীমাহীন হবে। আমরা সরকারকে এ ধরনের চুক্তি স্বাক্ষর থেকে বিরত থাকার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। পরিবর্তে জাতীয় সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি করে প্রয়োজনে সাবকন্ট্রাক্টের মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন কার্যক্রম গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।

তারা আরও বলেন, এ ধরনের পিএসসি প্রক্রিয়া বঙ্গোপসাগরের বিশাল সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার ধারাবাহিক কার্যক্রমের অংশ। এর মধ্য দিয়ে জাতীয় নিরাপত্তাও হুমকির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে। জনগণকে বঞ্চিত করে, ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে দেশের সম্পদ উজাড় করে দেওয়ার এ অশুভ চক্রান্তের বিরুদ্ধে আমরা দেশবাসীকে আবারও প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধভাবে শামিল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone