সাম্প্রদায়িক হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ দাবি
সুনামগঞ্জের শাল্লায় সংখ্যালঘু পরিবারের বাড়ী-ঘরে হামলা এবং সারাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন বাস্তবায়ন জাতীয় নাগরিক সমন্বয় সেলের।
সুনামগঞ্জের শাল্লায় সংখ্যালঘু পরিবারের বাড়ী-ঘরের উপর হামলা, ভাংচুর এবং সারাদেশে হেফাজতে ইসলামের ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পনের বর্তমান প্রেক্ষিতে ২৯ মার্চ ২০২১ অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন বাস্তবায়ন জাতীয় নাগরিক সমন্বয় সেলের এক জরুরী ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মানবাধিকার কর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এড. সুলতানা কামাল, আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো: নিজামুল হক, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর এড. রাণা দাশগুপ্ত, সামাজিক আন্দোলনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এড. তরারক হোসাইন, অর্পিত সম্পত্তি প্রতিরোধ আন্দোলনের এড. সুব্রত চৌধুরী এবং হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উপদেষ্টা কাজল দেবনাথ, এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ব্লাস্টের আইনজীবী এড. বরকত আলি প্রমুখ যুক্ত ছিলেন। নারী নেত্রী ও নিজেরা করি’র সমন্বয়কারী খুশী কবির এতে সভাপতিত্ব করেন।
এড. তবারক হোসেন বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তিতে সারাদেশে হেফাজত যে তান্ডব চালিয়েছে তাতে মানবাধিকার, সংবিধান এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লংঘিত হয়েছে। শাল্লায় ঘটনায় পুলিশ তিন হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তির নামে মামলা করেছে। যা গ্রেফতার বাণিজ্যে পরিনত হবার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া থানাকে অবশ্যই নিভা রানী দাশের মামলা নিতে হবে। তিনি আরো বলেন, সুনামগঞ্জে মামলাটির ফলো-আপ করা প্রয়োজন। শাল্লায় সংখ্যালঘুর ওপর আক্রমনের ঘটনা কোন নতুন বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি সাথিয়া, রামু, নাসিরনগর, গংগাচড়ার ঘটনারই সর্বশেষ রূপ বলে উল্লেখ করে এড. সুব্রত চৌধুরী বলেন, সংখ্যালঘু নির্যাতন রোধে একটি ধর্মীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করতে হবে। তারাই ওয়াচ ডগ হিসেবে কাজ করবে।
শামসুল হুদা বলেন, এ ঘটনায় শুধু মানবাধিকারই লংঘিত হয়নি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে উড়িয়ে দেয়া হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা বের করে আনতে উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। তাছাড়া এসব ঘটনায় আইনী সহায়তা প্রদানের জন্য শক্তিশালী আইনজীবী দলও তৈরী করতে হবে। সুনামগঞ্জের ডিসি ও এসপিকে এবিষয়ে জবাবদিহিতার আওতায় আনা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন।
এড. রাণা দাশগুপ্ত বলেন, শুধু শাল্লায় না নিয়মিতভাবেই দেশের কোথাও না কোথাও সংখ্যালঘুদের উপর নিয়মিতভাবে হামলা হচ্ছে। এটা যেন ৭১ সালের সংখ্যালঘুদের নিশ্চিহ্ন বা নি:স্বকরনের একটি সংস্করণ। সংখ্যালঘুরা তাদের সুরক্ষা চায়, অন্যথায় একসাথে সবাইকে দেশ ত্যাগের ব্যবস্থা করার কথা বলছেন। এ ধরণের ঘটনা যাতে আর না ঘটে তার জন্য তিনি সরকারকে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেন।
বিচারপতি নিজামুল হক শাল্লার ঘটনায় মামলার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের উপর চাপ অব্যাহত রাখার জন্য আইনজীবীদের একটি ওয়াচ ডগ কমিটি করতে হবে। তাছাড়া সিভিল সোসাইটির পক্ষ থেকেও একটি সংখ্যালঘু কমিশন করার প্রস্তাব দেন।
এড. সুলতানা কামাল বলেন, গত ২৬শে মার্চের পর থেকে যেভাবে অশুভ শক্তির আস্ফালন দেখছি এবং সেই সাথে পুলিশ সরকারি দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে যেভাবে প্রতিহত করার চেষ্টা করছে তাও আমাদের কাম্য নয়। শাল্লায় হেফাজতের ঘটনাসহ সারাদেশে যেভাবে তাদের তান্ডব চালাচ্ছে তাতে সরকারের অবস্থান আমাদের কাছে পরিস্কার হচ্ছেনা। তিনিও একটি সংখ্যালঘু কমিশন তৈরীর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।
“রুখে দাড়াও বাংলাদেশ”এর মতো একটি প্লাটফরম করা খুবই জরুরী বলে মনে করে কাজল দেবনাথ বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙ্গছে, ধীরেন্দ্র নাথ দত্তের বাসায় হামলা করছে, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর সঙ্গীত একাডেমি ভাঙ্গছে তাঁদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র কি করেছে। তাহলে কি দেশ একটি ধর্মীয় রাষ্ট্রের দিকে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ডিসি সাহেবরা অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আপীল ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে রিট আবেদন করছেন অর্থাৎ অনির্দিষ্টকালের জন্য অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি এর বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য দৃষি আকর্ষন করছেন।
সভাপতির বক্তব্যে খুশী কবির বলেন, আমরা আহবান জানাতে পারি বৃহত্তর একটা ঐক্যর জন্য। এটা অত্যন্ত দু:খজনক যে, কিছু দল এবং ব্যক্তি হেফাজতের তান্ডব না দেখে পুলিশ তাদের উপর নির্যাতন করেছে তাতে মানবাধিকার লংঘনের কথা বলছেন, যা হেফাজতকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। আমরা এগুলোকে প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা অচিরেই একটি সংবাদ সম্মেলন করে আমাদের পরবর্তী করণীয় তুলে ধরা হবে।