বাফুফেকে চিঠি দিলো ফিফা
দুই কর্মকর্তার মুখের কথা আর লিখিত বক্তব্যে গরমিলের কারণে সন্দেহ তো কমেইনি, উল্টো বেড়েছে। সন্দেহ ফিফার অনুদান নিয়ে, সেটা স্থগিত করা হয়েছে নাকি বহাল আছে? ৩০ মার্চ ফিফার একটি চিঠি পেয়ে পরশু বাফুফের ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান সালাম মুর্শেদী এক সংবাদমাধ্যমে বেশ ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবু হোসেনের কর্মকাণ্ড নিয়ে। অর্থাৎ তিনি হিসাব-নিকাশ সুষ্ঠুভাবে ফিফায় পাঠাতে ব্যর্থ হওয়ায় ফিফা কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এ খবরে যখন হাওয়া গরম তখন বাফুফে সাধারণ সম্পাদক ও ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান—কাউকেই আর ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে তাঁরা গতকাল জুম মিটিংয়ে বসেন ফিফার মেম্বারস অ্যাসোসিয়েশন ও ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে। সভা শেষে সালাম মুর্শেদী নিজের ব্যাবসায়িক অফিসে সংবাদ সম্মেলনে যে লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে উল্লেখ করা হয় ফিফার সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা। তাতে লেখা হয়েছে, ‘বাফুফের ফিন্যান্স সম্পর্কিত কার্যক্রমে আরো স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ফিফার পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়। বাফুফের ক্রয়নীতি, টেন্ডার-প্রক্রিয়া ও অর্থ পরিশোধ ইত্যাদি বিষয়ে লিখিত নীতি প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়, যা ফিফা ফরোয়ার্ড প্রজেক্ট ফান্ড বাফুফের অনুকূলে ছাড়করণের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’ লিখিত বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে পরিষ্কার হয় বাফুফের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা নেই এবং গোঁজামিল আছে আর্থিক লেনদেনেও। এসব কারণে ফিফা ফরোয়ার্ড প্রজেক্টে বাংলাদেশের জন্য বিধি-নিষেধ জারি করা হয়েছে।
কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে সালাম মুর্শেদী দাবি করছেন, ‘গত চার বছরে আমাদের আর্থিক কর্মকাণ্ড ৯১ শতাংশ স্বচ্ছ। স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা শব্দগুলো ব্যবহারের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।’ এরপর এক দিন আগেই প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কর্মকাণ্ড নিয়ে ভীষণ অসন্তোষ প্রকাশ করার ব্যাপারে তাঁর ব্যাখ্যা, ‘উনার নিয়মিত অফিসে না আসা এবং দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার জন্য বলেছিলাম।’
সেই চিঠিখানাই যেন রহস্যে ঘেরা, তাতে আসলে কী ছিল? পাশে বসা সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ গোপনীয়তার দোহাই দিয়েছেন, ‘চিঠির কথা তৃতীয়পক্ষকে জানাতে নিষেধ করেছে ফিফা।’ এরপর তিনি দাবি করেন, ‘ফিফা-এএফসি থেকে আমরা বিভিন্ন অনুদান নিয়মিত পাচ্ছি। তবে ফিফার কভিড-১৯ ফান্ডটা এখনো পাইনি, সেটা ছাড় করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে আজকের (গতকাল) সভায়।’ করোনা শুরুর পর গত বছরের শুরুর দিকেই ফিফা এই ফান্ড বিতরণের ঘোষণা দেয়। অনেক দেশ ফিফার এই অনুদান পেয়ে গেলেও এখনো বাংলাদেশকে দেয়নি। কেন দেয়নি, সে প্রশ্নের উত্তর দেননি বাফুফে সম্পাদক।
সালাম ও সোহাগের কথা শুনলে মনে হবে বাফুফে নিয়ম-নীতির চূড়ান্ত ‘বাতিঘর’। অথচ এই ঘরের অডিট রিপোর্ট নিয়ে প্রতিবার ঘরের ভেতরই প্রশ্ন ওঠে। এখন ফিফাও বলছে স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার কথা।