উন্নয়নশীল দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা নিতে পারে : তথ্যমন্ত্রী
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, করোনা মহামারির মতো দুর্যোগের মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে শুধুমাত্র ডিজিটালাইজেশনের প্রেক্ষিতে। বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। করোনা মহামারীর মধ্যে পৃথিবীর ২০টি দেশ পজিটিভ জিডিপি গ্রোথ রেট ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে, এরমধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার হার ৫.৪, যেটি পৃথিবীতে তৃতীয়। এটা কখনোই সম্ভব হতো না যদি ডিজিটাল বাংলাদেশ না হতো।
আজ মঙ্গলবার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে স্থানীয় সাংবাদিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক এক অনলাইন কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। সরকারের এটুআই প্রকল্প ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসস যৌথভাবে এই কর্মশালার আয়োজন করে।
বাসসে’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন এটুআই প্রকল্পের পরিচালক আব্দুল মান্নান।
এ সময় এটুআই প্রকল্পের যুগ্ম পরিচালক সেলিনা পারভেজ, বাসস’র ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুর রহমান, প্রধান বার্তা সম্পাদক এ জেড এম সাজ্জাদ হোসেন সবুজ, সিটি এডিটর মধুসূদন মন্ডল, প্রধান প্রতিবেদক তারেক আল নাসের ও জাতীয় ডেস্কের সমন্বয়ক কাজী তানভীর আলাদীন রিসোর্স পারসন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বাসসের ইনফোটেইনমেন্ট ইনচার্জ মাহফুজা জেসমিন। বাসসে কর্মরত সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের মোট ১৮ জন জেলা প্রতিনিধি এই কর্মশালায় যোগ অংশগ্রহণ করেন।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারির মধ্যেও সরকারের কোনো কর্মকাণ্ড থেমে নেই। প্রধানমন্ত্রী এখনও নিয়মিত আগের মতোই মন্ত্রিসভা ও একনেক বৈঠকে সভাপতিত্ব করছেন ডিজিটালি। আমরা যারা এসব সভায় উপস্থিত থাকি, তিনি যখন বাস্তবে আমাদের সামনে সভায় উপস্থিত থাকতেন তখন যে ধরনের ইন্টারেকশন হতো, এখনো ঠিক তেমনি ইন্টারেকশন হয়। বিন্দুমাত্র মনে হয় না যে, প্রধানমন্ত্রী দূর থেকে অনলাইলে আমাদের সাথে সভাগুলো করছেন। অর্থাৎ সরকারের সমস্ত কর্মকাণ্ড এ ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ার কারণে আজকে আমরা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি এবং বাংলাদেশ পজেটিভ জিডিপির ধরে রাখার ক্ষেত্রে পৃথিবীতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ডিজিটাল হওয়ার প্রেক্ষিতে আজকে এই দুর্যোগের মধ্যেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের ২০টি দেশ ছাড়া আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ অনেক দেশের অর্থনীতি যখন সংকুচিত হয়েছে, তখন আমাদের দেশে ৫.৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এই ২০টি দেশের মধ্যে যে দুটি দেশ আমাদের উপরে রয়েছে, এই দুটি দেশ হচ্ছে আফ্রিকার ছোট অর্থনীতির দেশ।
মন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের এই ধারণাটি এসেছিল প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাছ থেকে। সেই আইডিয়া দিয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ করেছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নের কথা আমরা যখন ২০০৮ সালে বলি তখন একটি স্বপ্ন ছিল কিন্তু আজকে এখন এটি আর স্বপ্ন নয় এটি একটি বাস্তবতা। বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের দেশে ১৪ কোটি মোবাইল সিম ব্যবহারকারী। অর্থাৎ শিশু ছাড়া বাকি সবারই মোবাইল ফোন রয়েছে। এখন বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটি বেশি। আমাদের তরুণ প্রজন্ম ডিজিটালি অনেক বেশি শিক্ষিত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে যেভাবে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে তা সমগ্র বিশ্বের কাছে একটি উদাহরণ এবং সেই উদাহরণের কথা বারাক ওবামা যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন তিনি যখন তার বাবার দেশ কেনিয়াতে প্রথম সফর করেন, ওই সময় তিনি বলেছেন মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বা গেছে সেটা থেকে আফ্রিকার দেশগুলো তথা উন্নয়নশীল দেশগুলো শিক্ষা নিতে পারে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের সাফল্যের উদাহরণ দিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে করোনা মহামারির যখন দ্বিতীয় ঢেউ চলছে, সরকার যদিও লকডাউন ঘোষণা করেছে কিন্তু আমাদের কোনো কর্মকাণ্ড থেমে নেই। বাংলাদেশের একজন কৃষক এখন তার ফসলের ক্ষেতে গিয়ে ফসলে কোনো পোকা ধরেছে সেটির ছবি তুলে সেই ছবি উপজেলা সদরে বা ব্লক সুপারভাইজারের কাছে পাঠিয়ে দেয় এবং মোবাইল ফোনে জিজ্ঞেস করে আমার ক্ষেতে এই পোকা ধরেছে আমি কোনো ওষুধ ব্যবহার করবো। ব্লক সুপারভাইজার বা কৃষি অফিসার বলে দেন তিনি কি ওষুধ ব্যবহার করবেন। এজন্য কৃষি অফিসারকে প্র্যাকটিক্যালি তার ক্ষেত পর্যন্ত যেতে হয় না। এটি সম্ভব হয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ার কারণে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, ভোলার মনপুরার একজন রিক্সার ড্রাইভার তার গ্রামের বাড়িতে প্রয়োজন অনুযায়ী বিকাশে কিংবা রকেটে টাকা পাঠাতে পারছেন। একজন ছাত্র বাংলাদেশের প্রান্ত সীমানা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন করতে পারেন, এজন্য তাকে ঢাকায় আসতে হয় না। এই সিস্টেম চালু হওয়ার পর বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছাত্রদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির হার বেড়ে গেছে। পরীক্ষার ফলাফল এখন মোবাইল ফোনে এসএমএস করা হলে ফিরতি এসএমএসে জানিয়ে দেয়া হয়। এই পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশের কারণে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সাংবাদিকরা বড় ভূমিকা পালন করছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এখন দেশের প্রায় সমস্ত পত্রিকার অনলাইন ভার্সন রয়েছে এবং অনলাইনে ব্যাপকসংখ্যক সাংবাদিক কাজ করেন। আমরা আজকের পত্রিকায় যা ছাপা হচ্ছে গতকাল এই সংবাদটি আমরা অনলাইনের মাধ্যমে পড়তে পেরেছি। এটি সম্ভব হয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ফলে।
তিনি বলেন, এখন পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে যেসব সাংবাদিক কাজ করেন তারা স্পটে বসেই সাথে সাথে নিউজ আপলোড করে দিতে পারেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
বর্তমান সময়ে অনলাইন গণমাধ্যমের যে বিস্তৃতি এটা সম্ভব হয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ফলে উল্লেখ করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, অনলাইন গণমাধ্যমের নিবন্ধনের কাজ আমরা শুরু করেছি। মন্ত্রণালয়ে অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিবন্ধনের জন্য ৫ হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়েছে। ইতোমধ্যে দুইশত অনলাইন নিউজপোর্টালকে নিবন্ধন অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে, এতো বেশি অনলাইন থাকার প্রয়োজন আছে কিনা, এটি এখন একটি বড় প্রশ্ন। কারণ, অনেক অনলাইন সঠিক বা প্রকৃত উদ্দেশ্যে সাংবাদিকতা ব্যবহার করে না। আবার অনেক অনলাইন মানুষের চরিত্র হননের জন্য বা গুজব ছড়ানোর কাজে অনেক সময় ব্যবহৃত হয়। সেজন্য সতর্কতার সাথে কয়েক দফা তদন্ত করে আমরা নিবন্ধনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছি। শিগগিরই আইপি টিভি নিবন্ধনের কাজ শুরু করবেন বলেও তিনি জানান।