রোজায় শরীর সতেজ রাখতে যা খাবেন
রোজায় সারাদিন পানাহার থেকে বিরত থাকার কারণে ক্লান্তি লাগা খুব স্বাভাবিক। কয়েক বছর ধরে রমজান মাসের দিনগুলো বেশ বড়। আমাদের দেশে এ সময়টায় এখন অনেক গরম পড়ে। গরমে বেশ কষ্ট হয় রোজাদারদের। তারপরও মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে রোজাদাররা এই কষ্ট হাসিমুখে সহ্য করেন। রমজান মাসে রোজাদাররা বেশি ক্লান্তিতে ভোগেন। অন্যান্য সময় ক্লান্তি কাটাতে চা, কফি কিংবা চকোলেট জাতীয় খাবার আমরা খেয়ে থাকি। কিন্তু রোজায় এসব খাবার কম খাওয়াই ভালো। সেহরি এবং ইফতারে এমন খাবার থাকতে হবে যা আপনাকে সারাদিন শক্তি জোগাবে। চলুন জেনে নেয়া যাক সেরকম কিছু খাবার সম্পর্কে:-
খেজুর: পুষ্টিকর ফল খেজুর। খেজুরে রয়েছে ভিটামিন, আঁশ, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও জিঙ্ক। খেজুর একজন সুস্থ মানুষের শরীরে আয়রনের চাহিদার প্রায় ১১ ভাগই পূরণ করে। পুষ্টিবিদদের মতে, শরীরের প্রয়োজনীয় আয়রনের অনেকটাই খেজুর থেকে আসে। এছাড়া ডায়াবেটিস থাকলে প্রচলিত খেজুরের বদলে শুকনো খেজুরকে ডায়েটে রাখতে বলেন বিশেষজ্ঞরা।
পানি: ডিহাইড্রেশন অধিকাংশ শরীরের কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা প্রয়োজন লিম্ফ তৈরি করার জন্য। লিম্ফ একটি শরীরের ফ্লুইড এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার অংশ। শরীরের সব সিস্টেম ভালোভাবে কাজ করে পানি পূর্ণ অবস্থায়। ডিহাইড্রেশনের কারণে মানসিক চাপ, দুর্বলতা, রাগ, নেতিবাচক মানসিকতার সৃষ্টি হতে পারে। তাই রোজায় সুস্থ থাকতে ও ক্লান্তি দূর করতে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
ছোলা: উচ্চমাত্রার প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার ছোলা। প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যপোযোগী ছোলায় আমিষ প্রায় ১৮ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট প্রায় ৬৫ গ্রাম, ফ্যাট মাত্র ৫ গ্রাম, ২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ‘এ’ প্রায় ১৯২ মাইক্রোগ্রাম এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-১ ও বি-২ আছে। এছাড়াও ছোলায় বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন, খনিজ লবণ, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে।
ডিম: আমিষ ও চর্বিযুক্ত উপাদানের সমন্বয়ে তৈরি খাবারের নাম ডিম। গবেষকরা ডিমের মাধ্যমে ক্লান্তি দূর করার বিষয়ে বলেছেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকরা মনে করেন, চা-কফির চেয়েও শরীরের সতেজ ভাব আনতে দ্রুত কাজ করে ডিম। তবে দিনে একটির বেশি ডিম না খাওয়াই শ্রেয়।
ফল: ইফতারে নিয়মিত ফল খেলে আপনার শরীরে সহজেই রোগ দানা বাধতে পারবে না। ফল আপনার স্বাস্থ্য এবং আপনাকে শক্তিশালী করে তোলে। প্রায় সব ফলেই থাকে পানি, যা আপনার ত্বককে সুস্থ এবং নরম রাখতে সাহায্য করে থাকে। প্রতিটি ফলে থাকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা শরীরের খারাপ ব্যাকটেরিয়াগুলোর বিপরীতে কাজ করে থাকে।
লেবু: লেবুতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে। একে অ্যাসকরবিক অ্যাসিডও বলা হয়। ভিটামিন বি কমপ্লেক্সে থাকা থিয়ামিন ও রিবোফ্লাবিন শরীরে এনার্জি তৈরি করে। শরীরে কোষের বৃদ্ধি ও কোষকে কার্যক্ষম করে তুলতে সাহায্য করে লেবুর রস। ক্লান্তি দূরে রাখতে ইফতারে লেবুর শরবত খেতে পারেন।
কাঠবাদাম: ইফতার অথবা সাহরি খাওয়ার পর পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ কাঠবাদাম বা আমন্ড খেলে ক্লান্তি থেকে দূরে থাকা যায়। চিকিৎসকদের দৃষ্টিতে কাঠবাদাম বা আমন্ড খাওয়া বেশ ভালো একটি অভ্যাস। এতে আমিষ, ফাইবার, স্নেহ জাতীয় পদার্থ থাকায় শরীরকে সজীব-সতেজ করে দেয় সহজেই। কাঠবাদাম বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
রোজায় ফাইবারযুক্ত খাবারের বিকল্প নেই। এ সময় যদি কম শর্করা এবং ভালো ফ্যাটজাতীয় খাবার খান তাহলে শরীর অনেক শক্তি পাবে। শরীরকে সচল রাখতে রমজানে নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করুন।