সারাগামাপা’র চ্যাম্পিয়ন নিয়ে পক্ষপাত, মুখ খুললেন বিচারকেরা
রবিবার সারেগামাপা ২০২০ বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। অর্কদীপ মিশ্রর হাতেই উঠেছে এবারের চ্যাম্পিয়ানস ট্রফি। যদিও এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক জারি রয়েছে। নেটিজেনদের একটা বড় অংশের মতেই নীহারিকা বা আনুশকা অনেক বেশি যোগ্য এই ট্রফির। ইমন চক্রবর্তীর টিমের সদস্য অর্কদীপ, তবে এটাই শেষ কথা নয়, তিনি ইমনের ‘গুরুভাই’ও বটে। অর্কদীপের হাতে সেরার ট্রফি ওঠায় স্বভাবতই খুশি ইমন। কারণ এই জয় তারও।
নেটিজেনরা বলছেন, ‘একদম জাজমেন্ট ঠিক হয়নি, নিহারীকাই বেশি যোগ্য ছিল’। এই নিয়ে কালের কণ্ঠ অনলাইন ভার্সনও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেখানে উঠে আসে সারাগামাপা নিয়ে পক্ষপাত ও সঙ্গীতপ্রেমীদের তীব্র প্রতিবাদ। এঁর প্রেক্ষিতে মুখ খুলতে শুরু করেছেন বিচারকেরা। শুধু তাই নয়, তাদের প্রতি যে অভিযোগের তীর ছোঁড়া হয়েছে সেটাকে বাধাগ্রস্তও কোরতে চাইছেন প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে।
অধিকাংশ মানুষই ভেবেছিলেন ‘সারেগামাপা’ এর এই সিজনের বিজয়ী হবেন অনুষ্কা নয়তো নীহারিকা। কিন্তু তাদের সব ইচ্ছায় জল ঢেলে বিচারকদের মতে প্রথম স্থান পায় অর্কদীপ মিশ্র। দ্বিতীয় স্থান নীহারিকা, তৃতীয় বিদিপ্তা এবং চতুর্থ অনুষ্কা। সঙ্গে অনুষ্কা পেয়ে যান ‘কালিকা প্রসাদ ভট্টাচার্য স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ফেসবুক দর্শকদের বিচারে ‘ভিউয়ারস চয়েস অ্যাওয়ার্ড’। এছাড়াও ওইদিন বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন শঙ্কর মহাদেবন, কেকে, শান।
ডয়চে ভেলে বলছে, প্রতিবাদ জানিয়েছেন সংগীত শিল্পী ইমন চক্রবর্তী৷ তার গুরুকুলেরই সদস্য অর্কদীপ৷ ফেসবুক লাইভে ইমন বলেন, ‘‘নীহারিকা প্রথম হলেই যে অভিযোগ থেমে যেতো, তা নয়৷ তখন বলা হতো, অর্কদীপ কেন প্রথম হলো না? আপনাদের এই অভিযোগ চলতেই থাকবে৷’’ বিচারক জয় সরকারও বলেছেন, ‘‘চূড়ান্ত পর্বের ছ’জনকে সমান ধরেই আমরা বিচার করেছি৷ আর সবাই আগেও বলেছিলেন যে অবিচার হচ্ছে৷ দিন এগিয়েছে, ট্রল বেড়েছে৷ তারও তো ফিনালের দরকার ছিল!’’
তাতেও নেটিজেনরা চুপ থাকেনি। তাঁরা এবার অতীতে ইমন ও শোভনের সঙ্গে সম্পর্ক ও সারেগামাপা এর মঞ্চে ইমনের নাচ করা নিয়েও অনেক কথাই বলেন। আর তাঁর উত্তরে ইমন আফসোস করে বলেন যে, সত্যিই যদি মানুষ শিল্পীর সাধনা বোঝেন তাহলে প্রতিযোগিতার মঞ্চে বিচারক কেন নাচবেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতেন না। সম্প্রতি এইসব কথাই আবার প্রকাশ্যে এসেছে।
তবে বিজয়ী অর্কদীপ মিশ্র গোটা প্রতিযোগিতায় তার গাওয়া বিভিন্ন ধরনের গানের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘‘লোকগান গাইলে কি প্রতিযোগিতায় সেরা হওয়া যায় না? এটা আগে জানলে তো সারেগামাপার পুরষ্কার ফিরিয়ে দিতাম৷’’]
এছাড়া রবিবারেই তিনি একটি ফেসবুক পোস্ট করে বলেন, “যারা আমায় পছন্দ করেন বা যারা অপছন্দ করেন প্রত্যেকের উদ্দেশ্যে জানাই আমার অনেক শ্রদ্ধা ভালোবাসা এবং প্রণাম। এই ভাবেই আমার পাশে থাকুন। শুধু আমার নয় এই মঞ্চে আমরা সবাই যারা এতদিন আপনাদের গান শোনালাম প্রত্যেকের পাশে থাকুন এবং ভালবাসুন। হয়তো এই বারের মতো এই মঞ্চের লড়াই শেষ। তবে জীবনের লড়াইয়ে যেন জয়ী হতে পারি এই আশীর্বাদ করে সবাইকে তাঁর পাশে থাকার জন্যে আর্জি জানিয়েছেন।”
সারেগামাপা’র ফলাফল ঘোষণা ও ট্রল-বন্যার প্রেক্ষিতে সংগীত দুনিয়ার বহু গুণীজন জানিয়েছেন প্রতিক্রিয়া৷ সংগীত শিল্পী লোপামুদ্রা মিত্রের প্রশ্ন, ‘‘যে ছেলেটি প্রথম হয়েছে, তার কী দোষ? তার ওপর কতটা মানসিক চাপ পড়ছে, তা ভেবে দেখছেন? প্রথম হয়ে সে ফাঁসির আসামী?’’ মনোময় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘গুরু হিসেবে আমি ও বাকিরা কিন্তু বিচারকদের কোনোভাবেই প্রভাবিত করেননি৷ আমি যেমন মনে করি, ‘যুগ্ম সেরা’ বাছা যেতেই পারতো৷’’
শুধু সারেগামাপা’র সাথে যুক্ত শিল্পীরাই নন, সামাজিক গণমাধ্যমে অর্কদীপসহ প্রতিযোগিতার সাথে জড়িতদের যেভাবে হয়রানি করা হচ্ছে তা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন শিল্পী রূপঙ্কর বাগচী, স্নিগ্ধজিৎ ভৌমিকসহ অনেকে৷ জি বাংলা সা রে গা মা পা’র সাবেক প্রতিযোগী স্নিগ্ধজিৎ ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, টাকার বিনিময়ে বিজয়ী ঘোষণার ধারণাটি অমূলক, জি বাংলা বরং শিল্পীদের টাকা দিয়ে সহায়তা করে৷
জি বাংলা চ্যানেলের ‘সা রে গা মা পা’-র হাত ধরেই বাঙালি সংগীতপ্রেমীদের নজরে আসেন বাংলাদেশের কন্ঠশিল্পী মইনুল আহসান নোবেল৷ প্রতিযোগিতা শেষে নোবেল পান তৃতীয় স্থান৷ নোবেল তা মানতে পারেননি৷ বিচারকদের রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তার অনুরাগীদের এক অংশ৷ কিছুদিনের মধ্যে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত নিয়ে প্রশ্ন তুলেও বিতর্কে জড়ান নোবেল৷