মানসিক চাপ কমানোর ৯ উপায়
ডেস্ক রিপোর্ট : আধুনিক নাগরিক জীবন ঘিরে থাকে চরম ব্যস্ততা। এ কাজে সে কাজে সারাটা দিন দৌড়ের ওপর থাকতে হয়। প্রয়োজনে ও অপ্রয়োজনে নানা কারণে আমাদের ওপর ভর করে নানা মানসিক চাপ। বিরতিহীন খাটুনি ও পরিশ্রমের ফলে মানুষের মনোজগতে তৈরি হয় স্ট্রেস বা মানসিক চাপ। এই চাপ পুষে রাখলে মানুষের শরীরের ওপর প্রভাব পড়ে। সৃষ্টি নানা রকম জটিল রোগ।
এ চাপ থেকে দূরে থাকতে চলুন জেনে নিই ৯টি উপায়-
প্রাণ খুলে হাসুন
দৈনন্দিন কাজকর্ম ও পারিবারিক নানা দায়িত্ব পালনে শরীরে আসে ক্লান্তি। নানা রকম মানসিক চাপ ভর করে আমাদের মাথায়। ক্লান্তি ও চাপ থেকে মুক্তি পেতে আমরা কী করতে পারি?
গবেষকরা বলেছেন, মানসিক চাপ কমাতে আপনার পছন্দের কমেডি মুভি দেখুন, কাছের বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা জমান আর প্রাণ খুলে হাসতে থাকুন । এছাড়া, অতীতের মজার মজার স্মৃতি স্মরণ করেও হাসতে পারেন।
তারা বলেছেন, উচ্চস্বরে হাসলে মানুষের শরীরের অঙ্গপ্রতঙ্গে অক্সিজেন সরবরাহের মাত্রা বেড়ে যায়। আর এর ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই কমে যায় মানসিক চাপ।
প্রিয় পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটান
মানুষ সাধারণত শখের বশে অথবা ভালবেসেই কোনো প্রাণী পালন করে। এর ফলে প্রিয় পোষা প্রাণীটির সঙ্গে তৈরি হয় এক ধরনের মানসিক সংযোগ। গবেষকরা বলেছেন, পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটানো স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ যখন তার কোনো পোষা প্রাণী সেটা হতে পারে কুকুর অথবা বিড়াল বা অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটায় তখন তার শরীর থেকে সেরোটিনিন, প্রোলেক্টিন ও অক্সিটোসিন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ হরেমোন তৈরি হয় এবং মানসিক চাপ বাড়ানোর হরমোন ধ্বংস করে। ফলে উচ্চ রক্তচার ও অস্থিরতা কমে যায়।
গোছালো থাকুন
আপনার পরিসর কম কিন্তু ব্যবহারের জিনিসপত্র কি একাধিক? এগুলো গুছিয়ে রাখতে কি আপনি হিমশিম খান? যা আপনার মানসিক চাপের কারণ হতে পারে। এ ধরণের মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে ঘরের জিনিসপত্র গুলো সুন্দরকরে গুছিয়ে রাখুন। অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো বাঁছাই করে ডাস্টবিনে রেখে আসুন। যে জিনিসগুলো প্রয়োজনীয় কিন্তু আপনার বিরক্তির কারণ হতে পারে সেগুলো সাবধানে গুছিয়ে রাখুন।
গবেষকরা বলেছেন, সাজালো গোছালো পরিবেশ আপনাকে মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। সুস্থ পরিবেশে আমাদের মনও সুস্থতা অনুভব করে।
গৃহস্থালির কাজ করুন
প্রতিদিন একই ধরনের কাজ করতে করতে মানুষের মধ্যে এক ধরনের একঘেঁয়ে ভাব চলে আসে। এ জন্য দৈনন্দিন গৃহস্থলি ও ঘরের কাজে একটু হলেও ভিন্নতা আনার চেষ্টা করুন। অথবা একই কাজ একটু ভিন্নভাবে করার চেষ্ট করুন।
গবেষকরা বলেছেন, ভালোভাবে বাঁচতে হলে পৃথিবীর সব ধরনের কাজই করে দেখা উচিত। আর এ জন্য তাদের জন্য পরামর্শ হতে পারে, গৃহস্থালির কাজে অংশ নেয়া। যা মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। সপ্তাহে একদিন হলেও আপনি থালা-বাসন ধোয়া, ঘরের মেঝে পরিষ্কার করা ইত্যাদি ধরণের কাজ করতে পারেন। এ থেকে দুটো উপকার পাওয়া যায়। তাহলো, শরীর থেকে বাড়তি মেদ ঝরবে, শরীর হবে ঝরঝরে এবং মানসিক চাপও কমবে।
ফলের রস পান করুন
গবেষকরা বলেছেন, “লেবুর রসে প্রচুর পরিমান ভিটামিন সি থাকে। যা আপনাকে মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে।” ভিটামিন সি চাপের জন্য দায়ী ‘কর্টসেল’ জাতীয় হরমোন ধ্বংস করে। লেবুর জুস, স্ট্রবেরির জুস, আঙ্গুরের জুসে প্রচুর পরিমাণ রয়ে ভিটাসিন সি। তাই মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে খেতে পারেন ফলের জুস।
গলা ছেড়ে গান গেয়ে উঠুন
গবেষকরা জানিয়েছে, “প্রিয় গান মানুষের মানসিক চাপ কমাতে ভূমিকা রাখে। নানা ব্যবস্তার কারণে আপনি যখন মানসিক চাপ ও শারীরিকভাবে অবসাদগ্রস্ত তখন গলা ছেড়ে গেয়ে উঠুন প্রিয় কোনো গান। গান গাইতে হলে ভালো শিল্পী হতে হবে- এমন কোনো নিয়ম নেই। প্রত্যেক মানুষই তার প্রিয় গান গুনগুন করে গায়। এ জন্যই মানসিক চাপ কমাতে গাইতে থাকুন পছেন্দের কোনো গান। মুক্ত গলায় গান করার সময় মানুষের শরীরে কিছূ হরমোন তৈরি হয় । যা মানসিক চাপ কমিয়ে দেয়।
কিছুদূর হেঁটে আসুন
ব্যায়াম শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী বিষয়। যেকোনো ধরনের হালকা ব্যায়াম আপনাকে তাৎক্ষণিকভাবে চাপমুক্ত করতে পারে। আর হালকা ব্যয়ামের মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ হলো হাঁটা। মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে বাসার আশেপাশে অথবা খোলা কোন মাঠে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করতে পারেন।
গভীর ভাবে শ্বাস নিন
মানসিক চাপে যখন আপনি বিপর্যস্ত, এদিকে আবার হাতে সময়ও নেই। এ সময় চাপ কমাতে চোখ বন্ধ করে গভীর একটা শ্বাস নিন। এতে ‘কর্টিসল’ জাতীয় চাপের হরমোন ধ্বংস হয়ে যাবে। শরীরে বেড়ে যাবে অক্সিজেনের প্রবাহ। কমবে মানসিক চাপ। মুহূর্তেই আপনি নিজেকে হালকা অনুভূব করবেন।