ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে বেলারুশের বিমান যোগাযোগ বন্ধ
বেলারুশ সরকার রোববার এথেন্স থেকে ভিলনিয়াসগামী রায়ান এয়ারের একটি ফ্লাইট ঘুরিয়ে মিনস্ক নিয়ে এসে তার সমালোচনাকারী এক সাংবাদিককে আটক করার প্রেক্ষিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ বেলারুশের সাথে বিমান যোগাযোগ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।উল্লেখ্য, রায়ান এয়ারের এফআর ৪৯৭৮ ফ্লাইটটি রোববার গ্রিসের এথেন্স থেকে লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে যাচ্ছিলেন। লিথুয়ানিয়া সীমান্তে প্রবেশের অল্প কিছু আগে ফ্লাইটিকে মিনস্কে ঘুরিয়ে দেয়া হয়। বিমানে ১৭১ জন যাত্রী ছিলো বলে গ্রিস ও লিথুয়ানিয়া কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। বেলারুশ কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার কারন দেখিয়ে ফ্লাইটটিকে ঘুরিয়ে দিলেও তল্লাশি চালিয়ে এর ভেতর কিছুই পাওয়া যায়নি।এ ঘটনার কারনে বিশ্ব নেতবৃন্দের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে বেলারুশ। একে অনেকে ‘বিমান ছিনতাই’ আবার কেউ কেউ ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জোরপূর্বক বিমান ঘুরিয়ে দিয়ে সাংবাদিককে আটক করার বিষয়টিকে আর্ন্তজাতিক রীতিবিরুদ্ধ বলে বর্ণনা করেছেন।
ব্রাসেলসে সোমবার ইইউ নেতৃবৃন্দ বৈঠক করে আটককৃত সাংবাদিককে ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়ছেন। একইসঙ্গে তারা বেলারুশের এয়ারলাইন্সের জন্য ইইউ ব্লকের আকাশসীমা বন্ধ এবং ইইউ ভিত্তিক এয়ারলাইন্সগুলোও বেলারুশের আকাশসীমা এড়িয়ে চলবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিরোধী মতের ওপর দমন পীড়ন চালানোর জন্য ইইউ নেতৃবৃন্দ আবারো অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ সম্পর্কিত প্রস্তাব অনুমোদনের বিষয়ে বেলারুশের কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছে। তারা ইতোমধ্যে কালো তালিকাভুক্ত বেলারুশ সরকারের ৮৮ ব্যক্তি ও সাত কোম্পানীর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করবে বলেও হুঁশিয়ার করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এ উদ্যোগের আগে বেলারুশের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে আটককৃত ২৬ বছর বয়স্ক ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিক রোমান প্রোতাসেভিচকে ৩০ সেকেন্ডের জন্য দেখানো হয়েছে এবং নিশ্চিত করা হয়েছে তিনি মিনস্কের কারাগারে বন্দী আছেন এবং গণবিক্ষোভ আয়োজনের দায় স্বীকার করেছেন।
নির্বাসিত বিরোধী নেত্রী স্ভেতলানা টিকানোভস্কিয়া জানান, বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকডান্ডার লুকাশেঙ্কোর সরকার রোমান প্রোতাসেভিচের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ আনার পর ২০১৯ সালে দেশ ছাড়েন তিনি। এরপর নেক্সটা মিডিয়ার মাধ্যমে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের খবর প্রকাশ করেন প্রোতাসেভিচ। এদিকে বেলারুশ কর্তৃপক্ষ প্রোতাসেভিচকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এ কারনে তাঁর মৃত্যুদন্ড হতে পারে বলে আশংকা করছেন স্ভেতলানা টিকানোভস্কিয়া। তিনি তার মুক্তি দাবি করেছেন। গত বছর বেলারুশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর(৬৬) কাছে পরাজিত হন স্ভেতলানা টিকানোভস্কিয়া। ওই নির্বাচনে ব্যাপকভাবে জালিয়াতি হয় বলে অভিযোগ করে আসছেন তিনি।
লুকাশেঙ্কো ১৯৯৪ সাল থেকে বেলারুশ শাসন করে আসছেন। তিনি গত বছর আগস্টের ওই নির্বাচনের পর থেকে ভিন্নমতাবলম্বী ও সমালোচকদের ওপর ব্যাপক দমন পীড়ন চালাচ্ছেন। অনেক বিরোধী নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন অথবা স্ভেতলানা টিকানোভস্কিয়ার মতো কেউ কেউ বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। আটককৃত সাংবাদিক রোমান প্রোতাসেভিচও পোল্যান্ডে নির্বাসিত ছিলেন।