বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Monday, December 30, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » শিল্প-সাহিত্য » চলে গেলেন ক‌বি হাবীবুল্লাহ সিরাজী

চলে গেলেন ক‌বি হাবীবুল্লাহ সিরাজী 

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। হাবীবুল্লাহ সিরাজী ক্লোন ক্যান্সারে আক্রান্ত ছি‌লেন। পাকস্থলীর সমস্যার কারণে গত ২৬ এপ্রিল হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। পরদিন ২৭ এপ্রিল তার অস্ত্রোপচার করা হয়। এর পর থে‌কে তিনি লাইফ সাপোর্টে ছি‌লেন। গেল কয়েক মাস ধরে তিনি শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন। ২০০৭-২০১৫ মেয়াদে জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি পদে থাকা হাবীবুল্লাহ সিরাজী ২০১৮ সাল থেকে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।তিনি ১৯৪৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর ফরিদপুর জেলার রসুলপুর গ্রামে আবুল হোসেন সিরাজী ও জাহানারা বেগম দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। ফরিদপুর জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক, ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিকের পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্নাতক (১৯৭০) ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।শিক্ষাজীবন থেকেই সাহিত্যচর্চায় মনোযোগী হওয়া হাবীবুল্লাহ সিরাজী আশির দশকে জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে তিনি ভূমিকা রেখে গেছেন কবিতা, শিশু সাহিত্যিক, গদ্যকার, অনুবাদক, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছড়াকার প্রভৃতি পরিচয়ে। বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে হাবীবুল্লাহ সিরাজী বিভিন্ন পুরস্কার-সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—একুশে পদক (২০১৬), বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯১), আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৯), সংহতি গুণীজন সম্মাননা পদক (যুক্তরাজ্য, ২০০৯), রূপসী বাংলা পুরস্কার (ভারত, ২০১০), মহাদিগন্ত পুরস্কার (ভারত, ২০১১), নলতা মিতালী কচিকাঁচার মেলা সম্মাননা (২০১১), বঙ্গবন্ধু স্মারক পুরস্কার (ভারত, ২০১৩), ফজল শাহাবুদ্দিন কবিতা পুরস্কার (২০১৬), জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার (২০১৮)। হাবীবুল্লাহ সিরাজী ৩৩টি কাব্যগ্রন্থ, ১০টি ছড়ার সংকলনসহ লিখেছেন দুটি উপন্যাস, স্মৃতিকথা ও অসংখ্য প্রবন্ধ। তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হলো- ‘দাও বৃক্ষ দাও দিন’, ‘মোমশিল্পের ক্ষয়ক্ষতি’, ‘মধ্যরাতে দুলে ওঠে গ্লাশ’, ‘স্বপ্নহীনতার পক্ষে’, ‘আমার একজনই বন্ধু’, ‘পোশাক বদলের পালা’, ‘প্রেমের কবিতা’, ‘কৃষ্ণ কৃপাণ ও অন্যান্য কবিতা’, ‘সিংহদরজা’, ‘জয় বাংলা বলোরে ভাই’, ‘সারিবদ্ধ জ্যোৎস্না’, ‘কতো কাছে জলছত্র’, ‘কতোদূর চেরাপুঞ্জি’ ‘ভুলের কোনো শুদ্ধ বানান নেই’ ইত্যাদি।কবিতা সংকলনের মধ্যে রয়েছে—প্রেমের কবিতা (১৯৮৯), বেদনার চল্লিশ আঙুল (১৯৯০), জয় বাংলা বলো রে ভাই (২০০০), নির্বাচিত কবিতা (২০০১), তুচ্ছ (২০০৩), স্বনির্বাচিত প্রেমের কবিতা (২০০৪), কবিতাসমগ্র (২০১১) এবং হাবীবুল্লাহ সিরাজীর প্রেমের কবিতা (২০১৬)। এছাড়া তার গদ্যগ্রন্থ—দ্বিতীয় পাঠ (২০১০), মিশ্রমিল (২০১২), গদ্যের গন্ধগোকুল (২০১৮), পায়ে উর্বর পলি (২০১৮); শিশুসাহিত্য—ইল্লিবিল্লি (১৯৮০), নাইপাই (১৯৮৪), রাজা হটপট (১৯৯৯), ফুঁ (২০০১), ফুড়–ৎ (২০০৪), মেঘভ্রমণ (২০০৯), রে রে (২০১০), ছয় লাইনের ভূত (২০১১), একে শূন্য (২০১৫), কানাকানি (২০১৩), ছড়াছড়ি (২০১৮), মিলটিল (২০১৯); ছড়া সংকলন—এই আছি মৌমাছি (২০০৮), ছড়াপদ্য (২০১২) রয়েছে। তিনি ‘আমার কুমার’ (২০১০) নামে আত্মজৈবনিক বইও লিখেছেন। করোনার আমাদের কবি-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই চলে গেছেন। এখন অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়ে হাবীবুল্লাহ সিরাজীও চলে গেলেন। তিনি তাঁর কাব্যানুরাগী, সাহিত্যানুরাগী বন্ধুদের মনে দীর্ঘকাল বেঁচে থাকবেন।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone