বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Wednesday, December 25, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » ডা. সাবিরাকে হত্যার পর লাশ পোড়ানোর চেষ্টা

ডা. সাবিরাকে হত্যার পর লাশ পোড়ানোর চেষ্টা 

রাজধানীর কলাবাগান ফার্স্ট লেনের ৫০/১ ভবনের তিনতলার একটি ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন ডা. কাজী সাবিরা রহমান লিপি।সোমবার (৩১ মে) সকালে আগুনের খবরে প্রথমে ফায়ার সার্ভিস আসে, পরে কলাবাগান থানা পুলিশ। ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর ডা. কাজী সাবিরা রহমান লিপি (৪৭) নামে এক নারী চিকিৎসকের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার শরীরে একাধিক গভীর ক্ষতের চিহ্ন দেখে পুলিশ জানায়, পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হতে পারে রাজধানীর গ্রিন লাইফ হাসপাতালের এই নারী চিকিৎসককে।পুলিশ ধারণা করছে, ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার পর মরদেহ আগুনে পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করা হতে পারে। আত্মীয়-স্বজনদের পাশাপাশি বিষয়টি দেখে হতবাক পুলিশও। সাবিরাকে খুন করা হয়েছে নাকি তিনি আত্মহত্যা করেছেন তা নিয়ে চলছে তদন্ত। সাবিরার প্রথম স্বামী ছিলেন চিকিৎসক। ২০০৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যুর পর ২০০৫ সালে শামসুর আজাদ নামের একজন ব্যাংকারকে বিয়ে করেন লিপি। দুই সংসারে তার দুই সন্তান রয়েছে। প্রথম সংসারের ছেলের বয়স ২১ বছর। তিনি গত কয়েক মাস ধরে কানাডা যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আর দ্বিতীয় সংসারের একমাত্র মেয়ের বয়স ১০ বছর। মেয়েটি কলাবাগানের একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে। বর্তমান স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় ডা. সাবিরা আলাদা থাকতেন বলে জানা গেছে।খবর পেয়ে সোমবার ঘটনাস্থলে যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট। তারা মরদেহ থেকে আলামত সংগ্রহ করে। ক্রাইম সিন জানায়, সাবিরাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা (ব্রুটালি কিলড) করা হয়েছে। তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের পর বিছানায় আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। দাহ্য পদার্থ না থাকায় আগুন তেমন ছড়ায়নি। তবে, সাবিরার শরীরের কিছু অংশ এতে দগ্ধ হয়।

তিন কক্ষের ফ্ল্যাটের প্রথম কক্ষটিতে থাকতেন নিহত চিকিৎসক ডা. সাবিরা। দ্বিতীয় কক্ষে থাকতেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থী। আর তৃতীয় কক্ষে থাকতেন আরও একজন শিক্ষার্থী, তবে তিনি মডেল হিসেবে পরিচিত বলে জানান স্থানীয়রা। অর্থাৎ ফ্ল্যাটটির একটি কক্ষে ডা. সাবিরা একাই থাকতেন এবং বাকি দুইটি কক্ষ সাবলেট হিসেবে বাড়ির মালিকের অজান্তেই ভাড়া দিয়েছিলেন তিনি।ওই ফ্ল্যাটে সাবলেট হিসেবে থাকা একজন ঈদের আগে বাড়ি গিয়ে ফেরেননি। অপরজন ভোরে বাসা থেকে বের হন শরীর চর্চা করতে। তার নাম কানিজ সুবর্ণা। তিনি সকাল পৌনে ১০টায় ঘরে ফিরে দেখেন চিকিৎসকের কক্ষ থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। এই তরুণী একজন মডেল। স্নাতক পাস করেছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।ওই ভবনের নিচতলায় দারোয়ান থাকেন। সকালে কেউ বাসায় ঢুকেছেন, এমনটি দেখেননি বলে দাবি করেছেন তিনি। তাকেও নিয়ে গেছে ডিবি। সেই মডেলের এক ছেলেবন্ধু যার নাম মাহাথির মোহাম্মদ স্পন্দন তাকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে পুলিশ।সাবিরা আট থেকে নয় বছর ধরে গ্রিন লাইফ হাসপাতালে চাকরি করছেন। বছর পাঁচেক আগে তার চাকরি স্থায়ী হয়। কাজ করতেন রেডিওলজি বিভাগে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পড়া শেষ করে ঢাকায় এসে কয়েকটি হাসপাতালে চাকরির পর তিনি যোগ দেন গ্রিন লাইফ হাসপাতালে। ওই ভবনে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা নেই বলে জানিয়েছেন ফ্ল্যাটের মালিক মাহবুব ইসলাম। ফলে কে বা কারা ঘরে ঢুকেছেন সেটি দেখার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ‘খুনি সেই ফ্ল্যাটেও অবস্থান করতে পারেন, তবে আপাতত কাউকে সন্দেহও করতে পারতে পারছি না।’

 
বর্তমান স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় ডা. সাবিরা আলাদা থাকতেন বলে জানা গেছে। তবে তাদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল বলে জানিয়েছেন সাবিরার একজন স্বজন। দ্বিতীয় স্বামী শামসুর আজাদের বাসা রাজধানীর শান্তিনগরে। সাবিরা খুনের সংবাদ পেয়ে তিনি কলাবাগানের বাসায় আসেন।তিনি বলেন, ‘শাশুড়ি ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে আমাকে বলেন, লিপি হয়তো বেঁচে নেই, তুমি একটু ঘটনাস্থলে যাও। এরপর বাসায় ছুটে আসি। তবে প্রথমে পুলিশ আমাকে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। দুপুর আড়াইটার দিকে ঘরে প্রবেশ করে বিছানার ওপর স্ত্রীকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পাই। ‘আমার স্ত্রীকে নিঃসন্দেহে হত্যা করা হয়েছে। হয়তো খুনিরা হত্যার মোটিভ ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য আগুন লাগিয়ে থাকতে পারে। এখানে ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ। তাদের ওপর আস্থা রাখতে চাই। আমি মনে করি, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। এ হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক তদন্ত ও দোষীদের বিচার হবে।’স্ত্রীর সঙ্গে না থেকে কেন তিনি আলাদা বাসায় থাকতেন- জানতে চাইলে আজাদ বলেন, ‘আমার ১০ বছরের মেয়ে কলাবাগানের একটি স্কুলে পড়াশোনা করে। আমার বৃদ্ধা শাশুড়িকে দেখভালের সুবিধার্থে লিপি কলাবাগানের এই বাসায় থাকতেন।’রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আজিমুল হক বলেন, ‘সবাই ভেবেছিলেন ডা. সাবিরা আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। পরে ডিবি পুলিশ এসে তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন পায়। আমরা তদন্ত করছি। চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আশা করছি, দ্রুত রহস্য উদঘাটন করতে পারব।’

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone