হাওয়ার সঙ্গে লড়ছেন এরশাদ ?
মোরশেদ ইকবাল, ঢাকা : ১২ ফেব্রুয়ারি দলীয় এক অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বক্তব্য জাতীয় পার্টিতে নতুন আলোচনার খোরাক তৈরি করেছে। এরশাদ নিজে সংসদ সদস্য এবং প্রধানমন্ত্রীর মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত। অথচ সেদিন এরশাদ বলেছেন, তার কথা অমান্য করে যারা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গিয়েছেন তাদের তার কাছে ফিরে আসতে হবে।
৫ জানুয়ারির ওই নির্বাচনের আগে থেকেই জাতীয় পার্টি, বিশেষ করে এরশাদের অবস্থান এবং বক্তব্য নিয়ে দলের ভেতরে এবং বাইরে নানা বিতর্ক হচ্ছে। নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে সর্বদলীয় সরকারে যোগ দেয়া, আবার পরে সরকার থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে মনোনয়নপত্র তুলে নেয়ার কথা বলেছেন এরশাদ। তিনি নিজে ঢাকা-১৭ আসন থেকে মনোনয়নপত্র তুলে নিলেও রংপুর-৩ এবং লালমনিরহাট-১ আসনে আবেদন করেননি যথাযথ প্রক্রিয়ায়। ফলে প্রার্থিতা থেকে যায় তার। এর মধ্যে লালমনিরহাটে হারলেও রংপুর থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এরশাদ।
একেকবার একেক কথা বলে রাজনীতির ময়দানে গুরুত্ব হারানো এরশাদ তার অবস্থান খুইয়েছেন দলের ভেতরেও। তাকে বাদ দিয়ে তার স্ত্রী রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতা করেছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। একে নিজের জন্য বিব্রতকর বলে একটি জাতীয় পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন সাবেক এই স্বৈরশাসক।
এরশাদ আর রওশনকে ঘিরে জাতীয় পার্টিতে এখন স্পষ্ট দুটি ধারা সক্রিয়। দলের ৩৪ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে চার থেকে পাঁচজনের সঙ্গে কেবল সুসম্পর্ক আছে সাবেক রাষ্ট্রপতির। ১২ ফেব্রুয়ারি এরশাদের অনুষ্ঠানে যোগ দেন কেবল তারাই। জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ওই অনুষ্ঠানে গেলেও থাকেননি বেশিক্ষণ। তবে সেখানে যোগ দেননি তার স্ত্রী সংসদ সদস্য রত্মা হাওলাদার।
১৯৮১ সালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর মেজর জেনারেল মঞ্জুর হত্যা মামলার রায়ের দিন ঘোষণার পর থেকেই হঠাৎ করেই নড়েচড়ে বসেছেন এরশাদ। তবে বিচারক বদল হওয়ায় ঘোষণা থাকলেও ১০ ফেব্রুয়ারি হয়নি রায়। নতুন বিচারক এই মামলার যুক্তিতর্ক ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন করে শুনবেন। আইনজীবীরা জানান, নতুন করে যুক্তিতর্ক হলেও এই মামলাটির রায় দিতে খুব বেশিদিন লাগবে না। এই অবস্থায় আদালত থেকে ফেরার পর নানা কথা বলতে শুরু করেছেন এরশাদ।
দলের সভাপতি হয়ে নেতা-কর্মীদের তার কাছে ডাকছেন এরশাদ। বলেছেন, যারা তার কথার অবাধ্য হয়ে নির্বাচনে গেছেন, তাদের তার কাছে ফিরে আসতে হবে। ৩০ জন সংসদ সদস্য তার পথের বাধা হতে পারবে না বলেও মন্তব্য করেন এরশাদ। তবে এরশাদের এই বক্তব্যকে পাত্তাই দিচ্ছেন না রওশনপন্থিরা। একজন সংসদ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এরশাদ নিজে সংসদ সদস্য হয়েছেন, অথচ বলছেন, তার কথার অবাধ্য হয়ে নির্বাচন করেছি আমরা। এটা কেমন কথা হলো ?’
আরেকজন নেতা বলেন, এরশাদ কেবল সংসদ সদস্য হননি, সংরক্ষিত নারী আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকারও নিয়েছেন। ওই নেতা বলেন, এরশাদ যদি মনে করেন দশম সংসদ নির্বাচনে যাওয়া ভুল ছিল তাহলে তিনি এখন কিভাবে সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় জড়ান? সরকারের কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করতে এরশাদ হঠাৎ করেই ‘গরম বক্তব্য’ দিচ্ছেন বলেও মনে করেন ওই নেতা।
জাতীয় পার্টির একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বারবার সিদ্ধান্ত বদলের কারণে জাতীয় পার্টি এবং এরশাদের নিজের অবস্থান আজ তলানিতে এসে ঠেকেছে। এই অবস্থায় দলে এরশাদকে গুরুত্বহীন করে দিতে একটি পক্ষ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। দলের বেশিরভাগ প্রভাবশালী নেতাই এই পক্ষে আছেন।’
মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টির একজন সদস্য বলেন, ‘তার কথার কোনো ঠিক নেই। তিনি নিজে মন্ত্রী মর্যাদার একটি পদে থেকে কিভাবে বলেন যে, জাতীয় পার্টির সরকারে যোগ দেয়া উচিত হয়নি। এমন স্ববিরোধী অবস্থান থাকলে তার কথা কিভাবে আমরা শুনব?’ তবে এরশাদপন্থি নেতারা মনে করেন, জাতীয় পার্টিতে দলের চেয়ারম্যানের গুরুত্ব হারানো সাময়িক। এরশাদকে ছাড়া দল চলতে পারে না বলে মনে করেন তারা।
দলের সভাপতিম-লীর সদস্য এবং সংসদ সদস্য সালমা ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দলে কিছু মতবিরোধ থাকতে পারে। তবে আমি মনে করি অচিরে সবাই এরশাদের কাছে ফিরে আসবেন।’ জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির সভাপতিম-লীর সদস্য এবং স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙা বলেন, ‘আমরা তো জাতীয় পার্টিতে আছি। কোথাও তো যাইনি, তাহলে ফিরে আসব কেন?