মায়ার শহর লিসবন
গ্রিসের এথেন্স ও ইতালির রোমের পর বিশ্বের তৃতীয় প্রাচীন শহর হলো লিসবন।প্রতি বছর পর্তুগালে সারাবিশ্ব থেকে বেড়াতে আসে প্রায় ১৫ মিলিয়ন মানুষ। সম্প্রতি পর্তুগাল ট্যুরিজমবান্ধব নীতিমালা প্রণয়নের ফলে বেশকিছু শহর বিশ্বের অন্যতম সেরা ও আকর্ষণীয় ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশনে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের সেরা ১০ ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশনের অন্তত দুটি এখন পর্তুগালের দখলে।পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হলো পর্তুগালে রাজধানী লিসবন। যার পর্তুগিজ নাম লিজবোয়া।
বৃহৎ সাতটি পাহাড় নিয়ে গঠিত টাগুস নদীর পাড়ের মনোরম এক শহর। এটি একটি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক শহর। সাগর, পাহাড়, নদীবেষ্টিত প্রাকৃতিক পরিবেশ, সঙ্গে রয়েছে বেশ কিছু বিশ্ব ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির স্থান। পুরোনোর সঙ্গে আধুনিকতার মেলবন্ধনের এক অপরূপ সৌন্দর্যের নাম লিসবন শহর।চলুন জেনে নিই তেমনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থান বা দর্শনীয় জায়গা। প্রথমে চলে আসে ‘Jeronimos Mongstery’-এর নাম। মূলত এটি হলো আবিষ্কারক ভাস্কো দ্য গামার সমাধিস্থল। এটি একটি বৃহৎ গির্জা বা মঠ এবং এটিকে বিশ্বের অন্যতম সুদর্শন মঠ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ষোড়শ শতকে নির্মিত এই সমাধিস্থল বা গির্জাটি একটি বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান হিসেবে স্বীকৃত। ১৪৯৮ সালে ভাস্কো দ্য গামার ইন্ডিয়ার উদ্দেশে যাত্রাকে স্মরণ করে এটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল এবং এর বেশিরভাগ অর্থের জোগান এসেছিল আমাদের উপমহাদেশের মসলা বাণিজ্য থেকে। লিসবন সিটি সেন্টার থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং বাস অথবা ট্রামে করে ১৫-২০ মিনিটে পৌঁছানো যায় সহজে।
Castelo de sao Jorge: লিসবনের প্রাণকেন্দ্রে, পাহাড়ের পাদদেশে আলফামার পাশে অবস্থিত। এই রাজপ্রাসাদটি পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। এখান থেকে লিসবনের ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ পাওয়া যায় খুব কাছ থেকে। টাগুস নদীর সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি সামান্য দূরে চোখ ফেললে আটলান্টিকের নীল জলরাশির দেখা মেলে। ১৯৪৭ সালের আগ পর্যন্ত মরিশরা এখান থেকে খ্রিষ্টান বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করত কিন্তু ওই বছর Afonso Henriques-এর নেতৃত্বে এই প্রাসাদ দখল হয়ে যায়। এর মধ্যে অবস্থিত জাদুঘর এবং প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন, সুউচ্চ দেয়াল ও পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নিমেষেই যে কারও মন ভালো করে দিতে পারে। Torre de Belem-A Historic Tower বেলেম টাওয়ার নামে পরিচিত। এই দালানটি লিসবনের অন্যতম সেরা প্রতীক ১৫১৫ থেকে ১৫২১ সালের মধ্যে নির্মিত। এ টাওয়ারটি টাগুস নদীর মাঝে গড়ে তুলেছিল সমুদ্রগামী নৌযান পর্যবেক্ষণ করার জন্য। আবিষ্কারের যুগের অন্যতম সেরা একটি নিদর্শন হিসেবে এটি বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ১৯৮৩ সালে।
Oceanario de Lisboa-A Modern Aquarium লিসবন ওশেনারিয়াম হলো ইউরোপের সেরা ও বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অ্যাকুয়ারিয়াম। ১৯৯৮ সালের লিসবন এক্সপোতে এটির উদ্বোধন হয়েছিল। সামুদ্রিক প্রাণীর এক অভয়ারণ্য, বিশেষ করে আটলান্টিক, ভারত, প্রশান্ত ও আর্কটিক মহাসাগরের জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ একটি অ্যাকুয়ারিয়াম। পাশে রয়েছে ইউরোপের সর্ববৃহৎ সেতু ভাস্কো দ্য গামা ব্রিজ, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৭ কিলোমিটার এবং কেবলকার। তাছাড়া ‘ট্রাম ২৮’ রাউন্ড ভ্রমণের মাধ্যমে লিসবনে পুরোনো শহর আলফামাসহ বৃহৎ পাঁচটি পাহাড় ভ্রমণ করা যায়।
সিটি সেন্টারে রয়েছে Elevador de Santa Justa : An Antique Elevator, এটি একটি একক লিফট; যার নকশা করেছেন আইফেল টাওয়ারের নকশাবিদ। এই লিফট থেকে লিসবন পুরো ৩৬০ ডিগ্রি ভিউতে দেখা যায়। জনসংখ্যার দিক দিয়ে ইউরোপে ১০ম স্থানে অবস্থান করছে শহরটি। পশ্চিমে আইবেরিয়ান উপদ্বীপ এবং রিভোরীয় কন্টিনেন্টাল থেকে শুরু করে, কাবো দ্যারোকায় শহরটির সমাপ্তি ঘটে। সরকারের রাজনৈতিক আসন এবং রাষ্ট্রপ্রধানের বাসভবন হিসেবে এটি দেশের রাজনৈতিক কেন্দ্রও বটে।