বিদ্যমান সীমানায় নির্বাচনের সুযোগ রেখে সংসদে বিল উত্থাপন
দৈব-দুর্বিপাকে কোনো এলাকার সংসদ নির্বাচনের সীমানা নির্ধারণ সম্ভব না হলে বিদ্যমান সীমানায় নির্বাচন হওয়ার বিধান রেখে ‘জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ বিল-২০২১’ সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বিলটি উত্থাপনের পর তা অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।
শনিবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে উত্থাপিত এই বিলটি পাস হলে ১৯৭৬ সালের দ্য ডিলিমিটেশন অব কন্সটিটিউয়েন্সিস অর্ডিন্যান্স রহিত হবে। প্রস্তাবিত আইনে নির্বাচন কমিশনকে বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যা বিদ্যমান আইনে নেই। সংসদের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ও বাংলায় আইন করতে বিলটি আনা হয়েছে।
বিলে, বিদ্যমান আইনের ৮ নম্বর ধারায় একটি উপধারা যুক্ত করা হয়েছে। সেখানে বলা আছে, দৈব-দুর্বিপাকে বা অন্য কোনও কারণে আঞ্চলিক সীমানা নির্ধারণ করা না গেলে বিদ্যমান সীমানার আলোকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিলের ৭ ধারায় বলা হয়েছে, ইসির সীমানা নির্ধারণটির বিষয় নিয়ে দেশের কোন আদালত বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন তোলা যাবে না।
বিদ্যমান আইনের ৮টি ধারার স্থলে প্রস্তাবিত আইনে ৯টি ধারা রাখা হয়েছে। নতুন ধারাটিতে আইনের অধীনে বিধি প্রণয়নের সুযোগ রাখা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে বিধি প্রণয়নের সুযোগ নেই। বিদ্যমান আইনের ধারা-১ একটি নতুন উপধারার প্রস্তাব করা হয়েছে, যেখানে আইনটি অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিলে আঞ্চলিক নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে সংবিধানের ৬৫ (২) অনুচ্ছেদে উল্লিখিত সংখ্যক সংসদ সদস্য নির্বাচিত করতে পুরো দেশকে উক্ত সংখ্যক একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকায় বিভক্ত করার কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে ভৌগলিক অখণ্ডতা বজায় রাখা এবং আদমশুমারির ভিত্তিতে যতদূর সম্ভব বাস্তবভিত্তিক বণ্টনের কথা বলা হয়েছে।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন-২০১১ এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে সামরিক ফরমান দ্বারা জারীকৃত দ্য ডিলিমিটেশন অব কন্সটিটিউয়েন্সিস অর্ডিন্যান্স-১৯৭৬ এর কার্যকারিতা লোপ পায়। যার প্রেক্ষিতে জনস্বার্থে আবশ্যক বিবেচনায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হইতে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে জারিকৃত কতিপয় অধ্যাদেশ কার্যকরকরণ (বিশেষ বিধান) আইন-২০১৩ দ্বারা অন্যান্য কতিপয় অধ্যাদেশের সাথে এই অর্ডিন্যান্সকেও কার্যকর রাখা হয়। পরে সরকার সামরিক শাসনামলে জারীকৃত অধ্যাদেশগুলো সকল স্টেকহোল্ডার এবং সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতামত গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জন করে বাংলায় নতুন আইন প্রণয়ন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ওই সিদ্ধান্তের আলোকে অর্ডিন্যান্সটির প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে তা রহিত করে সংশোধনসহ পুনঃপ্রণয়নের উদ্দেশ্যে প্রস্তাবিত বিলটি প্রস্তুত করা হয়েছে।’
সেখানে আরো বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত বিলে সংবিধানের ৬৫ (২) অনুচ্ছেদে উল্লিখিত সংখ্যক একক আঞ্চলিক নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ, নির্বাচন কমিশনের কার্যপদ্ধতি, ক্ষমতা অর্পণ ও কমিশনকে সহায়তা প্রদান এবং কমিশন কর্তৃক বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা প্রদান সংক্রান্ত বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি আইনে পরিণত হলে জাতীয় সংসদের একক আঞ্চলিক নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ কাজ সুচারুরূপে সম্পাদন করা সম্ভব হবে।