বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Monday, December 23, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » বুয়েট উদ্ভাবিত ‘অক্সিজেট’ প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনার পরামর্শ হাইকোর্টের

বুয়েট উদ্ভাবিত ‘অক্সিজেট’ প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনার পরামর্শ হাইকোর্টের 

173353highcourt-corona

করোনা আক্রান্তদের কম খরচে অক্সিজেনের চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উদ্ভাবিত ‘অক্সিজেট’ সি-প্যাপ ভেন্টিলেটর ডিভাইসের অনুমোদন ও উৎপাদনে পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা করতে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনার পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিবের কাছে একটি লিখিত আবেদন দিতে বলা হয়েছে।

বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ পরামর্শ দেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীকে। আদালত বলেন, এমন একটা ভালো জিনিস আবিস্কার হলো। এটা নিয়ে পাবলিক ক্যাম্পেইন দরকার। প্রধানমন্ত্রী ইনোভেটিভ মাইন্ডের। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনার জন্য তার মূখ্য সচিবকে লিখিতভাবে জানান। স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও অ্যাটর্নি জেনারেলকেও লিখিতভাবে জানাবেন। আদালত বলেন, আদালতের আদেশ ছাড়াই সমাধান করা ভালো।

সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ‘অক্সিজেট’ সি-প্যাপ (ঈ-চঅচ) ভেন্টিলেটর ডিভাইসের অনুমোদন না দেওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার অনিক আর হক বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন। এসময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও বিপুল বাগমার আদালতে যুক্ত ছিলেন।

কোভিড-১৯ আক্রান্তদের কম খরচে অক্সিজেনের চাহিদা পূরণে ‘অক্সিজেট’ সি-প্যাপ ভেন্টিলেটর যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের(বুয়েট) একদল ছাত্র-শিক্ষক। সহজেই ব্যবহার ও বহনযোগ্য এই যন্ত্রটি তৈরিতে খরচ মাত্র ২০/২৫ হাজার টাকা। এরইমধ্যে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (বিএমআরসি) অনুমোদনক্রমে এর প্রথম ও দ্বিতীয়দফা ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে তৃতীয় ট্রায়াল পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কয়েকজন করোনা রোগীকে এই যন্ত্র দিয়ে হাই ফ্লো অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে।

ব্যারিস্টার অনীক আর হক এই বিষয়টি উল্লেখ করে আদালতে বলেন, দ্বিতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে অক্সিজেটের। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কয়েকজন করোনা রোগীকে এই যন্ত্র দিয়ে হাই ফ্লো অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে। ইংল্যান্ড এই যন্ত্র নেবে বলে জানা গেছে। কিন্তু সরকারের সংশ্লিস্ট দপ্তর এটা ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছে না। কম্পানির উৎপাদিত পণ্য না হলে নাকি এর অনুমতি দেওয়া সম্ভব না।

এ পর্যায়ে আদালত বলেন, সরকারের ক্রয়নীতি আছে। নানান পদ্ধতি আছে। আর আমরাতো বিদেশ থেকে কেনাকাটায় আগ্রহী বেশি। আদালত বলেন, একটি হাই ফ্লো নোজাল ক্যানুলার দাম নাকি ১০/১৫ লাখ টাকা। কিন্তু এর দাম কত ধরা হচ্ছে তা খোঁজ নিয়ে দেখুন।

এসময় আইনজীবী বলেন, হাই ফ্লো নোজাল ক্যানুলার সংকটে প্রাণহানি বাড়ছে। সেক্ষেত্রে অক্সিজেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

এ পর্যায়ে আদালত প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের কাছে লিখিত আবেদন দেওয়ার পরামর্শ দেন।

উল্লেখ্য, কোভিড-১৯ আক্রান্তদের কম খরচে অক্সিজেনের চাহিদা পূরণে ‘অক্সিজেট’ সি-প্যাপ (ঈ-চঅচ) ভেন্টিলেটর যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একদল ছাত্র-শিক্ষক। এই প্রকল্পটিতে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি বিভাগের উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ (আইডিয়া) শীর্ষক প্রকল্প, অঙ্কুর ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন এবং মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োজিত আছেন বুয়েট বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মীমনুর রশিদ, কাওসার আহমেদ, ফারহান মুহিব, কায়সার আহমেদ, সাঈদুর রহমান এবং সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে রয়েছেন বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. তওফিক হাসান।

এবিষয়ে গত ১১ মে বুয়েটের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এই যন্ত্র কোনো প্রকার বিদ্যুৎ শক্তি ছাড়াই শুধুমাত্র অক্সিজেন সিলিন্ডার বা মেডিক্যাল অক্সিজেন লাইনের সঙ্গে সংযুক্ত করে ব্যবহার করা যাবে। বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় দেখা যায়, চিকিৎসা দেওয়ার ১ ঘণ্টার মধ্যে অক্সিজেট সি-প্যাপ রোগীদের রক্তের অক্সিজেনের মাত্রা (অক্সিজেন স্যাচুরেশন) গড়ে ১১.২% বৃদ্ধি করে। প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে অক্সিজেট সি-প্যাপের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণের জন্য মোট ৪০ জন রোগীর অর্ধেক অংশকে অক্সিজেট সি-প্যাপ এবং বাকি অর্ধেক অংশকে হাই-ফ্লো ন্যাসাল ক্যানুলার মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হবে। তৃতীয় ধাপে সাফল্য লাভ করলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে ও চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী এই যন্ত্রটি হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার স্বল্প মূল্যের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

বুয়েটের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, করোনা আক্রান্ত রোগীর শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিলে প্রথমে স্বল্প মাত্রায় অক্সিজেন দেওয়া হয়। কিন্তু এই স্বল্প মাত্রায় রোগীর অবস্থার উন্নতি না হলে উচ্চগতির অক্সিজেন প্রবাহ প্রয়োজন পড়ে যা রোগীকে অবস্থার অবনতি রোধ করতে পারে। করোনা প্রকোপ শীর্ষে থাকা অবস্থায় আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোতে অনেক সময় পর্যাপ্ত পরিমানে হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা যন্ত্র পাওয়া যায় না। এছাড়াও এ যন্ত্র ব্যয়বহুল ও ব্যবহার কৌশল জটিল হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন হয়। সহজে ব্যবহারযোগ্য অক্সিজেট সি-প্যাপ এই ঘাটতি পূরণে সাহায্য করবে। অক্সিজেট সি-প্যাপ ভেন্টিলেটর স্বল্প মূল্যে সাধারণ ওয়ার্ডেই উচ্চগতির অক্সিজেন দিতে পারে এবং এতে রোগীদের আইসিইউতে ভর্তি কমাতে সাহায্য করবে। অক্সিজেট একটি সুক্ষ্ম ভেঞ্চুরি ভাল্ভের মাধ্যমে বাতাস ও অক্সিজেনের সংমিশ্রণ তৈরি করে অন্তত ৬০ লিটার/মিনিট গতিতে সরবরাহ করে। মেডিক্যাল অক্সিজেন সাপ্লাই ও দ্বৈত ফ্লো-মিটারের সাহায্যে এটি প্রয়োজনে ১০০% পর্যন্ত অক্সিজেন কনসেন্ট্রেশন দিতে পারে।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone