ফিলিপাইনে বাণিজ্যিকভাবে চাষ ও ব্যবহারের অনুমোদন পেল গোল্ডেন রাইস
ভিটামিন এ’র উৎস বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ নতুন জাতের ধান গোল্ডেন রাইস বাণিজ্যিকভাবে চাষবাদ ও ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে ফিলিপাইন সরকারের কৃষি বিভাগ। এর মাধ্যমে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটিতে কৃষক পর্যায়ে গোল্ডেন রাইস চাষাবাদ ও ব্যবহারে আর কোনও বাঁধা থাকলো না।
এর আগে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে মানুষ এবং প্রাণির খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের জন্য নিরাপদ হিসেবে গোল্ডেন রাইসকে অনুমোদন দিয়েছিলো দেশটির কৃষি বিভাগ। সেই অনুমোদন পাওয়ার পর, ফিলিপাইনের জাতীয় ধান গবেষণা সংস্থা ফিলরাইস গোল্ডেন রাইসের সেনসরি ইভ্যালুয়েশন বিষয়ক গবেষণা শুরু করে। সেই গবেষণা সম্পন্ন করে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের অনুমোদন চেয়ে আবেদন করা হয়। বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই ২০২১) অবশেষে সেই অনুমোদন পায় ফিলরাইস।
সেনসরি ইভ্যালুয়েশনের আগে দীর্ঘদিন গবেষণাগারে এবং মাঠ পর্যায়ে গোল্ডেন রাইসের পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিয়ে গবেষণা করেছেন ফিলরাইসের বিজ্ঞানীরা। গোল্ডেন রাইস একটি জেনেটিকালি মডিফাইড ক্রপ। তাই ফিলিপাইনের আইন অনুযায়ী, বাণিজ্যিক ব্যবহারের অনুমোদন পাওয়ার আগে গোল্ডেন রাইসকে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ছাড়পত্র পেতে হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশেও গোল্ডেন রাইসের পরিবেশগত ছাড়পত্রের আবেদনটি দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বিবেচনাধীন রয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ২০১৭ সালের শেষ দিকে এই আবেদনটি করেছিল বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)। কয়েক বছর আগেই, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক ছাড়পত্র পেয়েছিলো গোল্ডেন রাইস। তবে, গোল্ডেন রাইসকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া প্রথম দেশ এখন ফিলিপাইন।
ফিলরাইস কে অভিনন্দন জানিয়ে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)-এর মহাপরিচালক ড. মোঃ শাহজাহান কবীর বলেন, “ভিটামিন এ ঘাটতির বিরুদ্ধে আমাদের যে লড়াই, তাতে এই অনুমোদনটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। শুধু ফিলিপাইন নয়, বাংলাদেশের জন্যও। বাংলাদেশে গোল্ডেন রাইসের পরিবেশগত ছাড়পত্রের (বায়োসেফটি অনুমোদন) জন্য ২০১৭ সালে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে ব্রি, যেটি এখনো পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল কমিটি অন বায়োসেফটির (এনসিবি) বিবেচনাধীন রয়েছে। যেহেতু সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে গোল্ডেন রাইস অবমুক্তির বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন, আমরা আশা করি ফিলিপাইনের ন্যায় বাংলাদেশ সরকারও গোল্ডেন রাইসকে পরিবেশগত ছাড়পত্র দেবে।”
ব্রি মহাপরিচালক আরো বলেন, বাংলাদেশে অনুমোদন পেলে, ভিটামিন এ’র ঘাটতি পূরণে অন্যান্য সহায়ক কার্যক্রমের পাশাপাশি গোল্ডেন রাইস হতে পারে একটি টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদী সমাধান।
ফিলিপাইনে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন শিশু ভিটামিন এ ঘাটতির শিকার, বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারগুলোতে এটি সবচেয়ে বেশি। এছাড়াও, সারাবিশ্বে অন্তত ১৯ কোটি শিশু ভিটামিন এ’র ঘাটতিজনিত বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে যার মধ্যে রয়েছে অন্ধত্ব ও দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা। গোল্ডেন রাইস পৃথিবীর প্রথম ভিটামিন এ সমৃদ্ধ চাল। এতে জেনেটিক মডিফিকেশন প্রযুক্তির সাহায্যে বিটা ক্যারোটিন যোগ করা হয়েছে যা থেকে একজন শিশুর দৈনিক ভিটামিন এ’র চাহিদার ৫০% পর্যন্ত পূরণ হতে পারে।