অবৈধ পথে ইউরোপ প্রবেশের শীর্ষে বাংলাদেশ
উন্নত জীবন-যাপনের আশায় প্রতি বছর অবৈধ পথে ইউরোপে পাড়িজমান বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ। তাদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন বাংলাদেশিরা। ব্রিটেনের জাতীয় দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ-এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস হাই কমিশনার ফর রেফিউজিসের (ইউএনএইচসিআর) বরাত দিয়ে বলা হয়, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার দরিদ্র দেশসমূহের নাগরিকদের পাশাপাশি প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশিও ইউরোপে অনুপ্রবেশ করছেন। পূর্ব ইউরোপের গভীর অরণ্য, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে উন্নত দেশগুলোতে প্রবেশের এই যাত্রায় মারাও যাচ্ছেন তাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। ইউএনএইচসিআরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে প্রতিবছর যত মানুষ ইউরোপের উন্নত দেশসমূহে অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করছে, গত প্রায় ছয় বছর ধরে তাদের মধ্যে শীর্ষে আছে বাংলাদেশিরা। ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে যদিও অন্যান্য বছরের তুলনায় ইউরোপে অবৈধভাবে প্রবেশকারীদের সংখ্যা বিগত বছরগুলোর চেয়ে কম ছিল, কিন্তু তারপরও যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান, সিরিয়া ও উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়া ও মরক্কোর তুলনায় গত বছর বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। দ্য টেলিগ্রাফ সম্প্রতি এ বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করেছে। তাদের অনুসন্ধানের মূল বিষয়- বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির মধ্যে অন্যতম।প্রতিবছরই জিডিপি বাড়ছে, এমনকি করোনা মহামারির কারণে ২০২০-২০২১ সালে প্রতিবেশী দেশ ভারতের জিডিপি যেখানে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ সংকুচিত হওয়ার শঙ্কা আছে, সেখানে বাংলাদেশের জিডিপি বাড়ার সম্ভাবনা আছে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সাল থেকে ইউরোপে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিদের সংখ্যা বাড়ছে। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ইতালিতে প্রবেশের জন্য ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়েছেন ৩ হাজার ৩০০-এরও বেশি বাংলাদেশি। তাদের মধ্যে যাত্রাপথে সাগরে ডুবে মারা গেছেন ১০০০-এরও বেশি। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে যারা অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশের জন্য রওনা হন, তাদের অধিকাংশের বয়স ৩০ থেকে ৩৫ এর মধ্যে। এদের একটি বিপুল অংশ লিবিয়া থেকে নৌপথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রবেশের চেষ্টা করেন। প্রতিবছর ইউরোপে যেসব বাংলাদেশি প্রবেশ করেন, তাদের প্রায় সবাই মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক আহমেদ মুশফিক মোবারক।টেলিগ্রাফকে তিনি বলেন, ‘ইউরোপে প্রবেশের জন্য প্রচুর টাকাপয়সা খরচ করতে হয় এবং এদের (অনুপ্রবেশকারী) পরিবার সেই টাকার যোগান দেয়। এ থেকে সহজেই ধারণা করে নেয়া যায়, এই অনুপ্রবেশকারীদের প্রায় সবাই মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা লোকজন। তারা এই বিষয়টিকে দেখছে একপ্রকার বিনিয়োগ হিসেবে।আগে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো জমি বা বাড়ি নির্মাণের জন্য অর্থলগ্নি করত, এখন তারা নতুন খাত হিসেবে ইউরোপ প্রবেশকে বেছে নিয়েছে।’বিষয়টি সমাধানে সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন উল্লেখ করে শরিফুল হাসান টেলিগ্রাফকে বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষদের সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতের সমন্বয় প্রয়োজন।খবর : দ্য টেলিগ্রাফ।