সাফে কাকে হারাবে বাংলাদেশ
ফুটবলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স কোনোভাবে স্বপ্ন দেখায় না সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে। বরং এই টুর্নামেন্টে কাকে হারাতে পারবে তারা, তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।
তাদের কিরগিজস্তান সফরটা ছিল সাফ প্রস্তুতির অংশ। তিন হারে শেষ হওয়া এই সফর থেকে খুব ইতিবাচক কিছু পায়নি বাংলাদেশ দল। যদিও পাঁচ দিনে তিন ম্যাচ খেলায় অনাগ্রহ ছিল কোচের। শক্তির বিচারে ফিলিস্তিন ও কিরগিজস্তানের চেয়ে অনেক পিছিয়ে এ দেশের ফুটবল। স্বল্প বিরতিতে শক্তিশালী দলের বিপক্ষে প্রতি ম্যাচে সর্বোচ্চটা দেওয়া কঠিন। এটা জেমি ডে’র ঢাল হলেও শেষ ম্যাচে কিরগিজস্তান যুব দলের কাছে ৩-২ গোলের হারটা খুব শঙ্কায় ফেলে দেয়। বাংলাদেশের ব্রিটিশ কোচ মনে করেন, ‘এই ম্যাচে ছেলেরা ভালো খেলেছে, কিন্তু বাজে গোল খাওয়ায় ম্যাচটি হেরেছি। আমাদের ভুলেই গোল খেয়েছি। তবে সুমন রেজা দুটি চমৎকার গোল করেছে।’ এই সফরে প্রাপ্তি বললে উত্তর বারিধারার এই তরুণ ফরোয়ার্ডের পায়ে দুই গোল। অথচ শেষ মুহূর্তে তিনি দলে ঢুকেছিলেন ইনজ্যুরড মাশুক মিয়া জনির জায়গায়।
সুবাদে সুমন রেজা টিকে যাচ্ছেন সাফের দলে। সেটা তাঁর কণ্ঠেও পরিষ্কার, ‘শেষ ম্যাচে আমরা জেতার জন্যই নেমেছিলাম। আমাদের কিছু ভুলভ্রান্তি হয়েছে ওখানে, সেগুলো নিয়ে এখন কোচ কাজ করবেন। আমরা সাফের জন্য প্রস্তুতি নেব।’ যত কাজই হোক, জেমি ডে’র হাতে তো আর জাদুর কাঠি নেই যে সাফের আগে ২০ দিনে দলের সব কিছুই বদলে ফেলবেন! কিংবা টুর্নামেন্ট ফেভারিট হয়ে মালদ্বীপে যাবে এই দল! পাঁচ দলের রাউন্ড রবিন লিগের এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা। চার প্রতিপক্ষকে বিশ্লেষণ করে লাল-সবুজের ডিফেন্ডার তপু বর্মন সবচেয়ে শক্তিশালী মানছেন ভারতকে, ‘বিশ্বকাপ বাছাই ও এএফসি খেলার পর মনে হচ্ছে ভারতের খেলোয়াড়দের সঙ্গে লড়াই করা কঠিন। খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতা ও সামর্থ্যে ভারতীয়রা এগিয়ে থাকবে।’
তাহলে মালদ্বীপ ও নেপালের সঙ্গে কি জেতার মতো অবস্থায় আছে বাংলাদেশ? একটু হেসে এই ডিফেন্ডার বলেন, ‘এটা বলি কী করে? মালদ্বীপ নিজেদের মাঠে খেলবে এবং তারাও শক্তিশালী দল। নেপালকেও হেলাফেলা করা যাবে না।’ নিজেদের মাঠে বলে নয়, যেকোনো ভেন্যুতে মালদ্বীপ চমৎকার ফুটবল খেলে এই অঞ্চলের যেকোনো প্রতিপক্ষকে হারানোর ক্ষমতা রাখে। আর নেপালের ঘরোয়া ফুটবল কাঠামো কমজোরি হলেও দলে প্রতিভাবান খেলোয়াড় আছে অনেক। দল হয়ে তারা আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে। সদ্যঃসমাপ্ত ফিফা উইন্ডোতে নেপাল নিজেদের মাঠে ভারতের সঙ্গে খেলেছে দুটি প্রীতি ম্যাচ, প্রথমটি ১-১ গোলে ড্র করার পর দ্বিতীয়টি হেরেছে ২-১ গোলে। সুতরাং নেপালের বিপক্ষেও জেতার গ্যারান্টি দিতে পারবেন না জামাল ভুঁইয়ারা।
বাকি থাকে শ্রীলঙ্কা, যাদের ফুটবল সাম্প্রতিক সময়ে অনেকখানি এগিয়েছে। তাদেরও হারানোর গ্যারান্টি দেওয়ার ক্ষমতা নেই এই বাংলাদেশ দলের। কারণ উপমহাদেশে বাংলাদেশের ফুটবলই স্থাণু হয়ে আছে। অনেকের দৃষ্টিতে খানিকটা পিছিয়েছেও। মামুনুল-এমিলি-জাহিদদের বিদায়ে নতুনের পদচারণ হয়েছে দলে, তবে কোনো চরিত্রগত বদল হয়নি। অনেক নতুনের সম্মিলনেও আত্মবিশ্বাসী চেহারা পায়নি দলটি। গত কয়েক বছরে তারা তৈরি করেছে একটি ‘ডিফেন্সিভ ব্র্যান্ড’ ফুটবল। গোল করায় এই দলের সমস্যা লেগেই আছে। গোল করতে না পারলেও গোল খাব না—এই প্রস্তুতি ও প্রতিজ্ঞায় ফুটবল খেলে গেছেন জামাল ভুঁইয়ারা। এভাবে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিত শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে। কিরগিজস্তানে গিয়ে যেন সেটাও হারিয়ে বসেছে, তিন ম্যাচে হজম করেছে ৯ গোল! সাফের আগে আগে রক্ষণ সংগঠনে এমন ভুল নিশ্চয়ই ভালো কিছুর ইঙ্গিত দেয় না। কিন্তু ফুটবলাররা এটা মানতে নারাজ, তাঁদের কণ্ঠে অবিশ্বাস্য আশাবাদ, ‘কিরগিজস্তানে তিন ম্যাচ নিয়ে সবাই হতাশ হলেও সাফে আমরা ভালো করব।’ আগে-পিছে ভালো করার ভিত্তি না থাকলেও প্রচণ্ড আশাবাদে রাঙিয়ে উঠছে আসন্ন সাফ ফুটবল।