নির্বাচন রেখে দেড় মাসের বিদেশ সফরে সিইসি!
প্রধান প্রতিবেদক : উপজেলা নির্বাচন রেখে দেড়মাসের সফরে দেশের বাইরে গেলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। সারা দেশে যখন কয়েক ধাপে উপজেলা নির্বাচন চলছে, ঠিক তখনই সিইসির দেড় মাসব্যাপী সফর নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি সিংহভাগ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন বাকি রেখে সিইসির এমন ব্যক্তিগত সফর নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। তেমনি বিস্ময়ও প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এ ছাড়া সিইসির অনুপস্থিতিতে অন্য কাউকে সিইসির দায়িত্ব দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলে।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে সিইসি গতকাল মাসব্যাপী ব্যক্তিগত সফরে যুক্তরাষ্ট্রের গেছেন। সকাল ৭টা ১০ মিনিটে টার্কিশ এয়ারলাইনসের টিকে-৭১৩ নম্বর ফ্লাইটযোগে নিউইয়র্কের উদ্দেশে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন তিনি। মাসব্যাপী সফরে সিইসি যুক্তরাষ্ট্র থাকবেন। এর পরই এপ্রিলের শুরু থেকে মধ্য এপ্রিল পর্যন্ত তিনি নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা প্রকল্পবিষয়ক কাজে আরও প্রায় ১৫ দিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করবেন। সব মিলিয়ে সিইসি ব্যক্তিগত সফরসহ প্রায় দেড় মাস দেশের বাইরে থাকবেন। তবে এপ্রিলের শুরুতে নির্বাচন কমিশনের প্রকল্পবিষয়ক কাজে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিবসহ প্রকল্প পরিচালকও যাওয়ার কথা রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব সিরাজুল ইসলাম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সিইসি সফরে রয়েছেন। তবে এপ্রিলের শুরুতে প্রকল্পবিষয়ক যে প্রোগ্রাম রয়েছে সেখনে সিইসিও যোগ দেবেন।
জানা গেছে, ২ মার্চ সফর নিয়ে সিইসির স্বাক্ষরিত একটি অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে- ‘৩ মার্চ থেকে আমি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করব। আমি না ফেরা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক প্রধান নির্বাচন কমিশনারের রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন।’ তবে ওই অফিস আদেশে সিইসি কত দিনের সফর গেছেন বা কবে দেশে ফিরবেন তা উল্লেখ করা হয়নি। নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করছেন- সারা দেশে যখন কয়েক ধাপে উপজেলা নির্বাচন চলছে, এমন সময়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিদেশ সফর জনমনে প্রশ্ন সৃষ্টি করবে। এমনকি সিইসির অনুপস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানেও ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে পারে। এ বিষয়ে নির্বাচন বিশ্লেষক, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার গতকাল বলেন, একদিকে দেশে চলছে উপজেলা নির্বাচন অন্যদিকে সংরক্ষিত আসনেরও নির্বাচন রয়েছে। এমন সময় সিইসি দেশে থেকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধান করলে উত্তম হতো। উপজেলা নির্বাচন নিয়ে যখন বিতর্ক উঠেছে, তখন নির্বাচন সুষ্ঠু করা নিয়ে কমিশনের মনোযোগী হওয়া উচিত ছিল।
সংবিধান বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন সিইসির অনুপস্থিতিতে অন্য কাউকে সিইসির দায়িত্ব এককভাবেই সিইসি দিতে পারেন না। এ জন্য কমিশনের আনুষ্ঠানিক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হতে হবে। সিইসির দেড় মাসের বিদেশ সফর নিয়ে রবিবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের আজকের সংবাদপত্র অনুষ্ঠানে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, এর আগে এ রকম হয়েছে বলে মনে তো পড়ে না। তবে প্রশ্ন আসবে উনার জায়গায় কে দায়িত্ব পালন করবেন তা নিয়ে। এর আগে একটি মামলা হয়েছিল প্রধান নির্বাচন কমিশনার একজন নির্বাচন কমিশনারকে দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন। ওটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল- উনি এভাবে দায়িত্ব দিয়ে যেতে পারেন কি না? তবে যত দূর মনে পড়ে কোর্ট বলেছিলেন- প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অনুপস্থিতিতে তিনি কাউকে এভাবে দায়িত্ব দিয়ে যেতে পারেন না। তিনি বলেন, হতে পারে সিইসির ছুটি পাওনা ছিল কিন্তু এটা তো ঠিক সময় নয়। জনমনে এটা নিয়ে প্রশ্নের উদ্রেক হচ্ছে। তবে তিনি কেন দেড় মাসের জন্য গেছেন তা নিয়ে ইসির পক্ষ থেকে একটা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আসা উচিত ছিল। তিনি বলেন, সিইসির দায়িত্ব কাউকে দেওয়ার ক্ষেত্রে সিইসি এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে কমিশনার সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি মনে করেন, সিইসির লম্বা অনুপস্থিতিতে কে সিইসির দায়িত্ব পালন করবেন সরকারের পক্ষ থেকে একটি গেজেট করে তার সিদ্ধান্ত জানানো দরকার। এদিকে, প্রথম দফা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ব্যালট ছিনতাই ও জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ উঠলেও নির্বাচন কিছুটা শান্তিপূর্ণ হয়েছে। তবে দ্বিতীয় দফা নির্ব?াচনে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। তবে ১৫ মার্চের তৃতীয় দফা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়া নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা রয়েছে। এমন সময় সিইসি গেলেন যুক্তরাষ্ট্রে। সিংহভাগ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন বাকি রেখে সিইসির এমন ব্যক্তিগত সফর নিয়ে জল্পনা-কল্পনা যেমন চলছে, তেমনি বিস্ময়ও প্রকাশ করেছেন অনেকে।