কোনোভাবেই বিদ্রোহী ঠেকাতে পারছে না আওয়ামী লীগ
ডেস্ক রিপোর্ট : উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে অনেকটা অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। ইতিমধ্যে দুই দফার নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে দলটি। বিদ্রোহী প্রার্থীদের ঠেকাতে না পারায় উপজেলায় ভালো করতে পারেনি বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে ২৫ থেকে ৩০টি উপজেলায় জয় থেকে বঞ্চিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা। পরবর্তী ধাপের নির্বাচনগুলোতেও বিদ্রোহী বেশির ভাগ স্থানে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় ভরাডুবির আশঙ্কা করছে সরকারি দল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খোদ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নির্বাচনী এলাকা কিশোরগঞ্জে সদরে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের হয়ে লড়ছেন তিনজন। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় এবার আওয়ামী লীগ সমর্থন জানিয়েছে সৈয়দ আশরাফের চাচাতো ভাই সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটুকে। কিন্তু এখানে ভোটে আছেন দলের আরো দুই নেতা আনোয়ার কামাল ও মফিজ উদ্দিন। তাদেরকে ভোটের ময়দান থেকে সরাতে না পেরে বহিষ্কার করেছে আওয়ামী লীগ। তবে শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে থাকলে আওয়ামী লীগের জন্য নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া কঠিন হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
সৈয়দ আশরাফের নির্বাচনী এলাকার আরেক উপজেলা হোসেনপুরে বিদ্রোহী প্রার্থীকে বাগে আনতে পেরেছে আওয়ামী লীগ। এখানে ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত আয়ুব আলীর পক্ষেই নেমেছেন বিদ্রোহী প্রার্থী শাহ মাহবুবুল হক। তবে তার কর্মী সমর্থকদের একটি অংশ রয়ে গেছে নিষ্ক্রিয়। এই উপজেলায় বিএনপি কখনো ভালো না করলেও এবার আওয়ামী লীগের কোন্দল স্বপ্ন দেখাচ্ছে তাদের। শুধু সৈয়দ আশরাফই নয়, বেশির ভাগ মন্ত্রী-এমপির এলাকার চিত্রই একই রকম।
চতুর্থ উপজেলা পরিষদের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের নির্বাচনে আশানুরূপ ফলাফল না হওয়ায় অসন্তুষ্ট আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড। এ জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদের দায়ী করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বিদ্রোহীদের নিষ্ক্রিয় করতে ব্যর্থ হওয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা, এলাকার মন্ত্রী, এমপি ও জেলা নেতাদেরও দুষছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তী চার পর্বের নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোকে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, সংগঠনের সিদ্ধান্তের বাইরে যিনি যাবেন তিনি এলাকার যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করবেন ভবিষ্যতে দলের পদ-পদবি প্রদানের ক্ষেত্রেও তাদের সেসব কর্মকাণ্ড বিবেচনায় আনা হবে।
জানা গেছে, বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে হার্ডলাইনের পাশাপাশি দলীয় সমর্থনের নামে যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত করে প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রী-এমপিরা যাতে পকেট প্রার্থী না দেন সে বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে।
আগামী ১৫ মার্চ তৃতীয় পর্বে ৮৩ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জানা গেছে, এ নির্বাচনে অন্তত ৫০টি উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। এ সংখ্যা ঢাকা বিভাগে সর্বাধিক। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন বিদ্রোহী প্রার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই বাকিদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম আশা প্রকাশ করে বলেন, ১ম ও ২য় পর্বের চেয়ে পরবর্তী পর্বগুলোতে আওয়ামী লীগ আরো ভালো করবে। কারণ দলের সমর্থন না পাওয়া বিদ্রোহী প্রার্থীরা ইতিমধ্যেই বুঝে গেছে, দলের সমর্থন না থাকলে নির্বাচনে জয়ী হওয়া সহজ নয়। তাছাড়া দল থেকে বিদ্রোহী দমনে আবার নতুন দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে।