বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Monday, December 23, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » শুভ মহালয়া উদযাপনে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু

শুভ মহালয়া উদযাপনে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু 

16410745282

যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদায় সারাদেশে শুভ মহালয়া উদযাপনের মধ্য দিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। আজ বুধবার ভোরে চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে নেমে আসার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আগামী ১১ অক্টোবর থেকে দুর্গাপূজা শুরু হবে। আর ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ৫ দিনব্যাপী এই উৎসব সমাপ্ত হবে।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, এই দিনে কৈলাশ থেকে মা দুর্গা পিতৃগৃহে আগমন করেন। তাই মহালয়া থেকে দূর্গা উৎসবের আমেজ শুরু হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু করা হয়েছে। ভোর হতেই সকল পূজা মণ্ডপে পুরোহিতের ভক্তিকণ্ঠে ‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেন সংস্থিতা-নমস্তৈস্য নমস্তৈস্য নমোঃ নমোঃ’ মন্ত্র উচ্চারণ শোনা যায়। চণ্ডীপাঠ ছাড়াও মঙ্গলঘট স্থাপন এবং ঢাক-কাঁসর ও শঙ্খ বাজিয়ে দেবীকে মর্ত্যে আহ্বান জানান ভক্তরা।

মহালয়া উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের মন্দির ও পূজামণ্ডপগুলোতে ধর্মীয় নানান আচার-অনুষ্ঠানের আয়োজিন ছিলো। ভোর ৬টায় রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপে চণ্ডীপাঠ করে দেবীকে আহ্বান জানানো হয়। সকাল ৯টায় ত্রিভঙ্গচরণ ব্রহ্মচারীর চণ্ডীপাঠের সঙ্গে সমবেত কণ্ঠে ইয়াচণ্ডী অর্চনা ছিল। বেলা ১১টা পর্যন্ত বিশেষ পূজা ও ভক্তিমূলক সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। সকালে মহালয়ার মূল আচার-অনুষ্ঠান হিসেবে ঘট স্থাপন করে ফুল, তুলসী ও বেলপাতা দিয়ে পূজা করা হয়।

রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে মহালয়ার অনুষ্ঠানে যোগ দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী। তিনি মোমবাতি প্রজ্বলন অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সঙ্গে ছিলেন হাইকমিশনারের স্ত্রী সংগীতা দোরাইস্বামী। হাইকমিশনার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ ও মহালয়ার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা সর্বসাধারণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

রাজধানীর স্বামীবাগস্থ শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রক্ষচারী আশ্রম ও মন্দির প্রাঙ্গণে মহালয়ার অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি অসহায় মানুষের মাঝে বস্ত্র বিতরণ করা হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রক্ষচারী আশ্রম ও মন্দির পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিষ্ণু পদ ভৌমিক, সদস্য মৃত্যুঞ্জয় দাস ও রবিন মুখার্জী এবং প্রধান পুরোহিত অজিত চক্রবর্তী বক্তৃতা করেন।

রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ মন্দিরেও ছিল নানান আনুষ্ঠানিকতা। সেখানে মিশনের অধ্যক্ষ চণ্ডীপাঠ ও চণ্ডীপূজা ছাড়াও আবাহন সঙ্গীত পরিবেশন করেন। গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদ বনানী পূজামণ্ডপে ভোরে চণ্ডীপাঠ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এছাড়া রমনা কালীমন্দির ও মা আনন্দময়ী আশ্রম, সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী পূজামণ্ডপ এবং খামারবাড়িতে সনাতন সমাজ কল্যাণ সংঘের (সসকস) পূজামণ্ডপসহ রাজধানীর অন্য মন্দির ও মণ্ডপে মহালয়ার অনুষ্ঠান ছিলো।

সনাতন শাস্ত্র মতে, ব্রহ্মার বর অনুযায়ী কোনো মহিষাসুরকে একমাত্র নারী শক্তির দ্বারা সম্ভব ছিল বধ করা। কোনো মানুষ বা দেবতা দ্বারা তাকে বধ করা সম্ভব ছিল না। তাই ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব শক্তি দ্বারা সৃষ্ট নারীশক্তি সিংহবাহিনী মা দুর্গা মহিষাসুরকে পরাজিত করে হত্যা করেন। মহালয়ার দিনে দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধের দায়িত্ব পান। আর এভাবেই মহালয়ার দিনে দেবী দুর্গার আগমন ঘটে মর্ত্যলোকে।

সনাতন পঞ্জিকা মতে, আগামী ১১ অক্টোবর থেকে ষষ্ঠীপূজার মাধ্যমে দুর্গাপূজা শুভারম্ভ হবে। যথাক্রমে ১২ অক্টোবর সপ্তমী, ১৩ অক্টোবর অষ্টমী, ১৪ অক্টোবর নবমী ও ১৫ অক্টোবর দশমীর দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এবারের শারদীয় উৎসব সম্পন্ন হবে। এবার সারাদেশে ৩২ হাজার ১১২টি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে বলে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদেও পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone