সৌদি গেমের প্রচারণায় মক্কার সাবেক ইমাম, সোস্যাল মিডিয়ায় সমালোচনা
অনলাইন গেমের প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদের সাবেক ইমাম আদেল আল কালবানি। রিয়াদ সিজন ২০২১-এর উৎসবের ‘কম্বাট ফিল্ড’ নামের ভার্চুয়াল গেমের প্রচার ভিডিও ক্লিপে তাঁকে অন্য তারকাদের সঙ্গে দেখা যায়। তাঁর এ কার্যক্রম ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তৈরি হয়েছে নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা।
গালফ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভার্চুয়াল গেমের প্রচারণা ভিডিও ক্লিপে ৬২ বছর বয়সী আল কালবানিকে সামরিক পোশাকে একটি যুদ্ধের নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে। এ সময় তার পেছনে অনেক শিষ্যকেও দেখা যায়।
বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) সৌদির জেনারেল এন্টারটেইনমেন্ট অথরিটি (জিইএ)-এর চেয়ারম্যান তুর্কি আল শেখ টুইটারে ভিডিও ক্লিপ শেয়ার দেন। টুইটারে প্রকাশের পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রচারণামূলক ভিডিওটি পাঁচ মিলিয়নের বেশি লোক দেখেছে।
রিয়াদের বার্ষিক বিনোদন উৎসবে ‘কমব্যাট ফিল্ড’ ভার্চুয়াল গেমটি প্রধান আকর্ষণ হিসেবে থাকছে। ইভেন্টটি গত ২৩ অক্টোবর থেকে শুরু হয়, আগামী বছরের ১৬ মার্চ পর্যন্ত চলবে। এতে যুগ যুগ ধরে নানা উপায়ে চলে আসা লড়াই, যুদ্ধ, তরবারি, তীর, ধনুক ও ড্রোনের ব্যবহার দর্শকরা দেখার সুযোগ পাবে।
আল কালবানিও তা শেয়ার দিয়ে ক্যাপশনে লিখেন, ‘আপনি কি মনে করেন, আমি হলিউডে যেতে পারব?’ এর কমেন্টে তুর্কি আলে শেখ লিখেন, ‘হে প্রিয়, আমি মনে করি আপনি যেকোনো কিছুতেই এগিয়ে যাবেন।’
ভিডিওতে শিল্পী, ফুটবল তারকাসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরও দেখা যায়। শিল্পী খালেদ আব্দুল রহমান, সৌদির প্রসিদ্ধ গোলরক্ষক মুহাম্মদ আল দেয়া, সাবেক খেলোয়াড় সাইদ আল ওয়াইরানসহ অনেককে জাপানি গেমের যুদ্ধের দৃশ্যে দেখা যায়। এতে প্রধান নেতা হিসেবে অনেক শিষ্যসহ আদিল আল-কালবানি ভিডিওতে আত্মপ্রকাশ করেন।
সোস্যাল মিডিয়ায় আল কালবানিকে নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে তাকে ‘মূর্খ’ অবিহিত করে বলছেন, আল কালবানি যা করেছেন তা ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশনার পরিপন্থী।’ এমনকি অনেকে তাকে ‘দুর্নীতির সহযোগ’ হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন।
কেউ কেউ জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদের সাবেক ইমাম হিসেবে আল কালবানিকে আদর্শ বলে মনে করা হলে তার পক্ষে এমন দৃষ্টিভঙ্গিতে উপস্থিত হওয়া কি উপযুক্ত?’
আরেক টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘আমি বিনোদনের বিরুদ্ধে নই… তবে আমি এলোমেলো ভাব, মূর্খতা এবং ধর্ম ও জনজীবনের মধ্যে বিচ্ছিন্নতার বিরোধী।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘তার মধ্যে কোনো কল্যাণ থাকলে তিনি এখন পর্যন্ত ইমাম হিসেবে বহাল থাকতেন।’
কেউ কেউ ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে বলেছেন যে সাবেক ইমাম সরকারের একজন মক্কেল, ‘মানুষকে বিভ্রান্ত করা’ যার প্রধান কাজ। অবশ্য অনেকে মনে করছেন যে ‘নীতিবান’ ব্যক্তিরা ‘মিথ্যা ও দুর্নীতির লোকদের সমর্থনে এই ধরনের কর্মকাণ্ড গ্রহণ করবে না’।
সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট ওয়াহেদ আল গামদি এক টুইট বার্তায় লিখেছেন: ‘আমি এটিকে অত্যন্ত বিস্ময়কর ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করি। কারণ সমাজে মানুষের জীবন ও আনন্দের মধ্যে অতীতে যে বিশাল দূরত্ব তৈরি হয়েছিল তা দূর করতে এ পদক্ষেপ জরুরি ছিল। পুরো দেশজুড়ে চলমান সংস্কার পদক্ষেপের অংশ হিসেবে এমনটি ঘটছে। তা বর্তমানে চিন্তা-চেতনায় ব্যাপক পরিবর্তনা তৈরি করবে।’
শিল্পী হামুদ আল আউনি বলেছেন, ‘যদিও আমি শিল্পের একজন অনুরাগী। এমনকি তা আপনার একটি ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। কিন্তু আমি আপনাকে এ ধরনের কাজে দেখব বলে আশা করিনি।’
সৌদ আল ফারহান লিখেছেন, ‘আদেল আল-কালবানি একজন চমৎকার তরুণ শেখ। তার কণ্ঠ আমার বেশ পছন্দের। আমি তার ব্যক্তিত্ব পছন্দ করি। কারণ তিনি এমন ব্যক্তি যিনি ভণ্ডামি ও নান রূপ ধারণ পছন্দ করেন না। যারা তাকে হিংসা করেন ও যারা তার সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে তারা তার জ্ঞান ও মধ্যপন্থাবোধ পর্যন্ত পৌঁছেনি। আমি তার সৃজনশীল প্রচারণার জন্য অভিনন্দন জানাই।