বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নাটক জনকের অনন্তযাত্রা, মঞ্চে আজিজুল হাকিম
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নাটক জনকের অনন্তযাত্রা
বাঙালি যুগপৎ আবেগপ্রবণ এবং সাহসী জাতি। বাঙালি জাতির রয়েছে হাজার বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন ‘স্বাধীনতা’। এ জাতিকে স্বাধীনতা লাভের সুযোগ করে দিয়ে জাতির হাজার বছরের সংগ্রামী জীবনধারায় মহাকাব্যিক দ্যোতনা এবং নায়োকোচিত শৌর্য-বীর্য আর দীপ্যমান ঔজ্জ্বল্য নিয়ে যে বাঙালি মহানায়ক ভাস্বর হয়ে আছেন, তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অত্যন্ত বেদনার যে, স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে যখন জাতির পিতা তার সুচিন্তিত পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন, তখনই দেশি-বিদেশি অপশক্তির ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে জাতির পিতাকে সেই বাঙালির হাতেই সপরিবারে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। জাতির পিতাকে হারানোর দুঃসহ ক্ষত বাঙালি জাতিকে আজও ব্যথাদীর্ণ করছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘাতকরা ভাবতে পারেনি, বীরের কখনো মৃত্যু হয় না। বাঙালি জাতির চিরন্তন বীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মৃত্যুর পরও স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। আর তাই হাজার বছরের শিল্প-সাহিত্য-শিক্ষা-ক্রীড়া-সংস্কৃৃতি সবখানেই তিনি আছেন সগৌরবে। সংশয়হীনভাবে বলা যায়, বঙ্গবন্ধুর যাপিত জীবন, বেড়ে ওঠা, বিকশিত হওয়া, বাঙালির জন্য তার আপসহীন সংগ্রাম এবং তার প্রয়াণ- সব কিছুর মধ্যেই রয়েছে মহাকাব্যিক ব্যঞ্জনা। বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্বের মহাকাব্যিক দ্যুতিতে কেউ চাইলে নিজেকে আলোকিত করে নিতে পারে এবং তার ভেতরের সব অন্ধকার অনায়াসেই দূর হতে পারে। বহুমাত্রিক গুণাবলি বিবেচনায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতিকে সংবাদমাধ্যম ‘নিউজ উইকস’ রাজনীতির কবি হিসেবে আখ্যায়িত করে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন জাতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সে জাতির ক্রান্তিকালে জাতিকে সংকট থেকে মুক্তির দিশা দেখিয়ে উত্তরণের পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঈশ্বরের আশীর্বাদের মতো দেবদূতসদৃশ মহাপুরুষের আবির্ভাব ঘটেছে। মহানায়কের মাহাত্ম্য বর্ণনা বা প্রশস্তিবন্দনা সংশ্লিষ্ট ভাষার শিল্প-সাহিত্যের অন্যতম অনুষঙ্গ। বাংলা ভাষার শিল্প-সাহিত্য-নাটক-সংগীত এর ব্যতিক্রম নয়। যুগে যুগে বিখ্যাত, স্মরণীয় এবং যুগোত্তর প্রতিনিধিদের নিয়ে শিল্প-সাহিত্য রচনার ঐতিহ্য বা ধারাবাহিকতা সমকালেও বহমান। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্বাধীনতার আগে এবং পরে, এমনকি তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত লেখা হয়েছে অজস্র কবিতা, গান, নাটক। পৃথিবীর অন্য কোনো রাজনৈতিক নেতাকে নিয়ে এত বিপুলসংখ্যক শিল্প সৃজনের ইতিহাস নেই।
বাঙালি কবি-লেখকরা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তাদের রচনায় নিজস্ব উপলব্ধি তুলে ধরেছেন, যেখানে জাতির পিতার প্রতি তাঁদের ভালোবাসা ও হৃদয়ানুভূতির চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটেছে। এ কথা ঠিক যে বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শ, সংগ্রাম, মমত্ববোধসহ যাপিত জীবনের ব্যাপ্তি এতটাই ব্যাপক যে তাঁর জীবন ও কর্মকে সম্পূর্ণরূপে শিল্পরূপ দেওয়া সহজসাধ্য নয়। সংগত কারণে শত শত বছর ধরে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সৃজিত হতে থাকবে নানামুখী শিল্প। বছরব্যাপী বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে এ বছর দেশে এবং বিদেশে উদযাপিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী।
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির কৃষ্টি ও সংস্কৃতির বিকাশে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালনের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি বহুমুখী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করে চলেছে। এর মধ্যে ‘৬৪ জেলায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নাটক নির্মাণ কর্মসূচি’ অন্যতম। জন্মশতবর্ষে জাতির পিতার প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা এবং তাঁর কর্ম ও কীর্তিকে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে শিল্পকলা একাডেমি দেশব্যাপী নাট্যপ্রযোজনা নির্মাণের এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে চলেছে।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কেন্দ্রীয় প্রযোজনা বিশিষ্ট নাট্যজন মাসুম রেজার রচনা ও নির্দেশনায় ৪ ও ৫ ডিসেম্বর ২০২১ জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হচ্ছে নাটক ‘জনকের অনন্তযাত্রা’। এতে অভিনয় করেছেন আজিজুল হাকিম, মেমীসহ বিভিন্ন থিয়েটারের একাধিক শিল্পী।
মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, ‘এই নাটকের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ানুভূতি দিয়ে উপলব্ধি করবে বলে আমার বিশ্বাস। নাটক মঞ্চায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত নাট্যকার, নির্দেশক, সমন্বয়কারী, অভিনেতা, অভিনেত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। জয় হোক শিল্পের, জয় হোক নাটকের, জয় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ।’