মানবাধিকার লঙ্ঘনে চীন ও যেসব দেশের ব্যক্তিদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে চীনসহ চার দেশের কয়েক ডজন ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে চীনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংস্থা সেন্সটাইম গ্রুপকে বিনিয়োগে কালো তালিকাভূক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
রয়টার্সের খবরে জানা যায়, মায়ানমারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরো আছে কানাডা ও যুক্তরাজ্য। এদিকে মানবাধিকার দিবসে এবারই প্রথম প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এ তালিকায় আছেন শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশেরও কয়েকজন।
এক বিবৃতিতে ডেপুটি ট্রেজারি সেক্রেটারি ওয়ালি আদেয়েমো বলেন, ‘যুক্তরাজ্য ও কানাডার অংশীদারিত্বে আজকের দিনে আমাদের কার্যক্রম এ বার্তা দেয় যে সারা বিশ্বের গণতন্ত্র তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে যারা রাষ্ট্রের ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্ভোগ ও নিপীড়ন চালায়।’
সারাবিশ্বের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার উদ্যোগে বাইডেন প্রশাসন দুই দিন ব্যাপী ভার্চুয়াল সামিট ফর ডেমোক্রেসি-এর অনুষ্ঠিত হয়। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রপন্থী আইনের সমর্থনে ঘোষণা দেন বাইডেন। এ শীর্ষ সম্মেলনের সঙ্গে সামাঞ্জস্য রেখে সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
শীর্ষ সম্মেলনে এক শয়ের বেশি রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয়, যা সারাবিশ্বের ক্রমবর্ধমান স্বৈরাচারদের পিছিয়ে দেবে, দুর্নীতি প্রতিরোধ করবে এবং মানবাধিকার প্রচার করবে। এর সমাপনী ভাষণে বাইডেন বলেছেন, ‘এ বীজ সারাবিশ্বে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় উর্বর ভূমি তৈরিতে সহায়তা করবে’
চীনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংস্থা সেন্সটাইমকে ‘চীনা সামরিক-শিল্প জটিল কোম্পানি’-এর তালিকায় যুক্ত করা হয়। এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় যে তারা উইঘুরদের সনাক্তকরে নিজেদের লক্ষ্য বাস্তবায়নে ‘ফেসিয়াল রিকগনাইজেশন প্রোগ্রাম’ বা ‘মুখের স্বীকৃতি প্রোগ্রাম’ তৈরি করেছে।
অবশ্য ওয়াশিংটনে চীনের দূতাবাসের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেংইউ বলেছেন, ‘তা চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে গুরুতর হস্তক্ষেপের শামিল এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণকারী মৌলিক নিয়মের গুরুতর লঙ্ঘন, যা চীন-মার্কিন সম্পর্কের মারাত্মক ক্ষতি করবে। এছাড়াও এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বানা জানানো হয়।
মায়ানমারের দুটি সামরিক বিভাগ ও সেনাবাহিনীর রিজার্ভ সরবরাহ করা একটি সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এর মধ্যে ডিরেক্টরেট অফ ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিজ বিভাগ অন্যতম। গত ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক ও পুলিশকে সরবরাহ করা অস্ত্র অভ্যুথান বিরোধীদের ওপর নৃশংস হত্যাযজ্ঞে চালানো হয়।
এছাড়াও মায়ানমারের আঞ্চলিক মুখ্যমন্ত্রী মায়ো সুই উইনকে এ তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়। এর আগে তিনি বাগো অঞ্চলের জান্তা প্রশাসনের প্রধান ছিলেন। গত এপ্রিলে সেখানে কমপক্ষে ৮২জন নিহত হয়েছিলেন।
উত্তর কোরিয়ার কেন্দ্রীয় পাবলিক প্রসিকিউটর অফিসকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সাবেক সামাজিক নিরাপত্তা মন্ত্রী ও বর্তমানে সশস্ত্র বাহিনীর মন্ত্রী রি ইয়ং গিলকেও এ তালিকাভূক্ত করা হয়। উত্তর কোরিয়া থেকে শ্রমিক রপ্তানির সুবিধার জন্য একটি রাশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়কেও তালিকাভূক্ত করা হয়।
উত্তর কোরিয়া দীর্ঘদিন ধরে তার অস্ত্র কর্মসূচির ওপর আরোপিত যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার প্রত্যাহার চেয়ে আসছে। এছাড়াও মানবাধিকার লঙ্ঘনে মার্কিন সমালোচনাকে নিন্দা জানায়। অবশ্য উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছে বাইডেন প্রশাসন
এছাড়াও চীন, বেলারুশ ও শ্রীলঙ্কার ১২ ব্যক্তির ওপর যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।