বিভিন্ন সংস্থার ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য বিবৃতি কাম্য নয় : হাইকোর্ট
মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার ভিন্ন ভিন্ন বিবৃতি বা বক্তব্য ‘কাম্য নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। কক্সবাজারে পর্যটককে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় বিচারিক অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানিকালে গতকাল মঙ্গলবার এ মন্তব্য করেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
রিটকারী আইনজীবী আবদুল্লাহ আল হারুন ভূইয়া রাসেল শুনানিতে বলেন, ‘কক্সবাজারের ঘটয়ায় ট্যুরিস্ট পুলিশ ও র্যাবের বক্তব্য অসামঞ্জস্যপূর্ণ। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তাদের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য এসেছে। এ নিয়ে এক ধরনের অসংগতি তৈরি হয়েছে। এ ধরনের স্ববিরোধী বিবৃতি-বক্তব্যের কারণে তদন্তের গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। সাধারণ মানুষ তাদের ওপর আস্থা রাখতে পারবে না। তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই তারা যে বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে—তারা পণ করে নেমেছে, ভুক্তভোগী নারীর চরিত্র তাদের মতো করে প্রতিষ্ঠিত করবে। ফলে তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে। এ জন্য গত ২২ ডিসেম্বরের ঘটনার বিচারিক অনুসন্ধানের নির্দেশনা চাচ্ছি।’
এ সময় বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, ‘একটা অনুসন্ধান চলছে। এর মধ্যে কি আমরা আরেকটা অনুসন্ধানের আদেশ দেব?’ আদালত বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার ভিন্ন ভিন্ন বিবৃতি বা বক্তব্য কাম্য নয়, এটি দুঃখজনক। ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য এলে পরে সত্য ঘটনা উদঘাটিত হলেও সাধারণ মানুষের মনে নানা ধারণা তৈরি হবে।
দুই বিচারপতির বেঞ্চ বলেন, গ্রেপ্তার-মামলা কিংবা তদন্তের স্বার্থে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর একটি এজেন্সি আরেকটি এজেন্সিকে সহযোগিতা করতে পারে। তদন্ত চলাকালে তদন্ত কর্মকর্তাদের কথা কম বলাই ভালো।
এরপর আদালত রিটের শুনানি মুলতবি (স্ট্যান্ডওভার) রেখে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমারাকে নির্দেশ দেন, কোনো একটি ঘটনা বা মামলার তদন্ত চলাকালে কে কতটুকু কথা বলবে বা বলতে পারবে, তা নিয়ে কথা বলতে।
একই সঙ্গে আদালত রিটকারী আইনজীবীকে বলেন, কোনো একটি ঘটনার ‘বিচারিক অনুসন্ধান’ চাওয়ার বিধান কোন আইনে আছে, পরবর্তী শুনানির দিন সে বিষয়ে জেনে আসতে।
কক্সবাজারে পর্যটক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার বিচারিক অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে গত সোমবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম আবদুল্লাহ আল হারুন ভূইয়া।
রিটে স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশপ্রধান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, র্যাবের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসকসহ সাতজনকে বিবাদী করা হয়।
গত ২২ ডিসেম্বর কক্সবাজারে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন এক নারী পর্যটক। এ ঘটনায় ঢাকার এই গৃহবধূর স্বামী কক্সবাজার থানায় মামলা করেন। এতে চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় তিনজনকে আসামি করা হয়। এরই মধ্যে এ মামলার প্রধান আসামি আশিকুল ইসলাম আশিকসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।