গত সাত বছর ছিল বিশ্বের উষ্ণতম সময়
জাতিসংঘ বুধবার নিশ্চিত করেছে যে, বিশ্বের তাপমাত্রা গত সাত বছর রেকর্ড মাত্রায় উষ্ণ ছিল। লা নিনার শীতল প্রভাব থাকা সত্ত্বেও ২০২১ সাল এই উষ্ণতম বছরগুলোর মধ্যে রয়েছে।
প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্য ও পূর্ব দিকে পেরু উপকূলে সমুদ্রপৃষ্ঠের পানি স্বাভাবিক উষ্ণতার চেয়ে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে গেলে যে শীতল সমুদ্র-স্রোত প্রবাহিত হয় তাকে ‘লা নিনা’ বলে। সারা বিশ্বের আবহাওয়ার ওপর এটি প্রভাব ফেলে। এর ঠিক বিপরীত অবস্থাকে বলে ‘এল নিনো’। প্রতি তিন থেকে সাত বছর পরপর মহাসাগর-বায়ুমণ্ডলীয় এ চক্রের পুনরাবৃত্তি ঘটে। লা নিনা ২০২০ সাল থেকে দুবার আঘাত করেছে।
জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা এক বিবৃতিতে বলেছে, ২০১৫ সাল থেকে ২০২১ এই সাত বছর ছিল বিশ্বের উষ্ণতম বছর। ২০২১ সালে পরপর দুটি লা নিনার ঘটনা বিশ্বব্যাপী মনোযোগ আকর্ষণ করে। কারণ লা নিনার শীতল প্রভাব থাকা সত্ত্বেও ২০২১ সাল ছিল অন্যতম উষ্ণ বছর।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার প্রধান পেটেরি তালাস বিবৃতিতে বলেন, ২০২১ সালে পর পর দুটি লা নিনার ঘটনার মানে দাঁড়ায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোর তূলনায় ২০২১ সাল তূলনামূলক কম উষ্ণ হবে। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। এমনকি আগে যে বছরগুলোতে লা নিনার প্রভাব ছিল তার চেয়েও ২০২১ সাল বেশি উষ্ণ ছিল। তিনি বলেন, এটি এটাই প্রমাণ করে যে, গ্রিনহাউস গ্যাস বাড়ার ফলে সামগ্রিক দীর্ঘমেয়াদি উষ্ণতা এতটাই বেড়েছে যে, লা নিনার প্রভাবও গড় উষ্ণতায় কোনো প্রভাব ফেলেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপারনিকাস ক্লাইমেট মনিটরসহ ছয়টি শীর্ষস্থানীয় আবহাওয়া সংস্থার তথ্য একত্রিত করে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে জাতিসংঘের বিশ্ব জলবায়ু সংস্থা। এনওএএ গত সপ্তাহে একই ধরনের ফল ঘোষণা করে।
আবহাওয়ার তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২১ সালের গড় বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১৮৫০ থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে পরিমাপ করা প্রাক-শিল্প স্তরের গড় তাপমাত্রার চেয়ে প্রায় ১ দশমিক ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। সংস্থাটি সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ২০২১ সালের বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা এর মধ্যেই প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী বেঁধে দেওয়া তাপমাত্রা-বৃদ্ধির সর্বনিম্ন সীমার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। স্পষ্টতই বৈশ্বিক তাপমাত্রা যে হারে বাড়ছে তাতে প্যারিস চুক্তির লঙ্ঘন ঘটবে। ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে বিশ্বের দেশগুলো বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিকে প্রাক-শিল্প স্তরের চেয়ে দুই ডিগ্রির কম এবং সম্ভব হলে দেড় ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে সম্মত হয়।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ১৯৮০ এর দশক থেকে পরবর্তী প্রতিটি দশকের গড় তাপমাত্রা তার আগের দশকের তূলনায় বেশি। এটি অব্যাহত থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।