মিয়ানমার ছাড়ছে শেভরন, টোটাল
মিয়ানমারে কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বৈশ্বিক তেল-গ্যাস উত্তোলন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান টোটালএনারজিস ও শেভরন করপোরেশন। মিয়ানমারে অবনতিশীল পরিস্থিতির কারণ দেখিয়ে প্রতিষ্ঠান দুটি গতকাল শুক্রবার এ ঘোষণা দেয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রোহিঙ্গাদের ২১টি সংগঠন এক যৌথ চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁকে মিয়ানমারে তেল-গ্যাস উত্তোলন থেকে অর্জিত অর্থের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছিল।
ওই ২১ সংগঠনের অন্যতম বার্মিজ রোহিঙ্গা অর্গানাইজেশন, ইউকের (ব্রুক) সভাপতি তুন খিন কালের কণ্ঠকে বলেন, তাঁরা গত বৃহস্পতিবারের চিঠিতে মিয়ানমারে যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন ও ফ্রান্সের টোটালের তৎপরতার কথা তুলে ধরেছিলেন।
বিজ্ঞাপন
ওই দুই প্রতিষ্ঠান মিয়ানমারে গ্যাস উত্তোলন করছে।
আর এর মাধ্যমে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী প্রতিবছর কোটি কোটি ডলার আয় করছে। সেই অর্থ এখন মিয়ানমারে গ্রামগুলোর ওপর নির্বিচারে বোমা বর্ষণ, শিশুদের হত্যাসহ সামরিক বাহিনীর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যয় হচ্ছে।
এদিকে ব্রিটিশ বহুজাতিক তেল-গ্যাস কম্পানি শেল গতকাল প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছে, মিয়ানমারে তারা কোনো খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান করছে না।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টোটালএনার্জিস, শেভরনসহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে মিয়ানমারের দক্ষিণপশ্চিম উপকূলে ইয়াদানা গ্যাস প্রকল্পে কাজ করছে। ‘মোয়াত্তামা গ্যাস ট্রান্সপোর্টেশন কম্পানি (এমজিটিসি)’ ওই গ্যাস মিয়ানমার-থাইল্যান্ড সীমান্তে পৌঁছে দেয়।
টোটালএনার্জিস এক বিবৃতিতে বলেছে, মিয়ানমারে মানবাধিকার ও আইনের শাসন পরিস্থিতি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে টোটালএনার্জিস মনে করছে, মিয়ানমারে যথেষ্ট ইতিবাচক ভূমিকা রাখার মতো সুযোগ তাদের নেই। এ কারণে কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ ছাড়াই ইয়াদানা গ্যাসক্ষেত্র ও এমজিটিসি থেকে ‘অপারেটর’ ও ‘শেয়ার’—দুটিই প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে টোটালএনার্জিস।
শেভরনের একজন মুখপাত্র বলেছেন, মিয়ানমারে বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে আমরা ইয়াদানা প্রাকৃতিক গ্যাস প্রকল্পে আমাদের স্বার্থ পর্যালোচনা করেছি এবং এ দেশ থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের পরিকল্পনা নিয়েছি। ’
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইয়াদানা প্রাকৃতিক গ্যাস প্রকল্পের ৩১.২৪ শতাংশ মালিকানা টোটালের এবং ২৮ শতাংশ শেভরনের। বাকি মালিকানা থাই কম্পানি পিটিটি ও মিয়ানমারের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস এন্টারপ্রাইজের।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংবাদমাধ্যম চ্যানেল নিউজ এশিয়ায় গতকাল প্রচারিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, থাই কম্পানি পিটিটি এখন মিয়ানমারের প্রকল্পে তার সম্পৃক্ততার ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশ্লেষণ করছে।
শেলের মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন, গত বছরই তাঁরা ‘অফ শোর’ ব্লকের অনুসন্ধানের লাইসেন্স ছেড়ে দিয়েছেন। তাই এখন মিয়ানমারে তাঁদের গ্যাস, অনুসন্ধান, রাজস্ব ও সরকারকে অর্থ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
রোহিঙ্গা অধিকারকর্মীরা মিয়ানমার থেকে পশ্চিমা তেল-গ্যাস কম্পানিগুলোর প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁরা এখন মিয়ানমারের তেল-গ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে জোর দাবি জানিয়েছেন।