অভিযান-১০ লঞ্চ ট্রাজেডিতে শিপ সার্ভেয়ারসহ ১২ জন দায়ী
এমভি অভিযান-১০’ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড ও হতাহতের ঘটনায় লঞ্চটির ফিটনেস পরীক্ষাকারী শিপ সার্ভেয়ারসহ নৌ পরিবহন অধিদপ্তর ও বিআইডব্লিউটি-এর চার কর্মকর্তা এবং চার মালিকসহ মোট ১২জনকে দায়ী করেছে নাগরিক তদন্ত কমিটি।
আজ শনিবার (২২ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে নৌ দুর্ঘটনারোধে ২৫ দফা সুপারিশসহ এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), নিরাপদ নৌপথ বাস্তবায়ন আন্দোলন, নৌ-সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি এবং সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনসহ ১৬টি সামাজিক সংগঠন গত ৪ জানুয়ারি সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিদের নিয়ে ১৯ সদস্যের এই নাগরিক তদন্ত কমিটি গঠন করে; যা দেশে কোনো নৌ দুর্ঘটনার পর এবারই প্রথম।
প্রতিবেদনে দায়ীরা হলেন- নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের ঢাকা (সদরঘাট) কার্যালয়ের প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক মো. মাহবুবুর রশীদ ও পরিদর্শক মো. হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন ও পরিদর্শক দীনেশ দাস, লঞ্চটির চার মালিক মো. হামজালাল শেখ, মো. শামীম আহম্মেদ, মো. রাসেল আহাম্মেদ ও ফেরদৌস হাসান রাব্বি।
বিজ্ঞাপন
এছাড়া প্রথম শ্রেণির মাস্টার মো. রিয়াজ সিকদার ও দ্বিতীয় শ্রেণির মাস্টার মো. খলিলুর রহমান এবং প্রথম শ্রেণির ড্রাইভার মো. মাসুম বিল্লাহ ও দ্বিতীয় শ্রেণির ড্রাইভার আবুল কালাম।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অবকাঠামো ও কারিগরি বিষয়ে সার্বিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই চলাচলের যোগ্য মর্মে মতামত দেওয়ায় ও দীর্ঘদিন বন্ধের পর পুনরায় চলাচলের সময় লঞ্চটি পরীক্ষা না করায় নৌ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট জরিপকারক এবং যাত্রার প্রাক্কালে লঞ্চটি পরিদর্শন না করে ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ইঞ্জিন পরিবর্তনের বিষয়টি না জানিয়ে একই সংস্থার পরিদর্শক দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন।
তাতে বলা হয়, দীর্ঘদিন বন্ধের পর পুনরায় চালু হওয়া লঞ্চটিতে ইঞ্জিন পরিবর্তনের বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে এবং ২৩ ডিসেম্বর নৌযানটিকে সদরঘাট টার্মিনাল ছেড়ে যাওয়ার সুযোগ দিয়ে বিআইডব্লিউটি-এর নৌ নিরাপত্তা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম পরিচালক কর্তব্যে অবহেলা করেছেন। এছাড়া ৪২০ জন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন লঞ্চে আনুমানিক ২৮ শতাধিক যাত্রী বহন করা সত্ত্বেও মাত্র ৩১০ জন উল্লেখ করা ভয়েজ ডিক্লারেশন গ্রহণ করে সদরঘাটে দায়িত্বরত বিআইডব্লিউটি-এর পরিবহন পরিদর্শক দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া নৌযানটিতে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন দুটি ইঞ্জিন প্রতিস্থাপন এবং কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে নতুন মাস্টার ও ড্রাইভার নিয়োগ করে প্রচলিত আইন ও বিধি ল্ঘংন করেছেন। ২৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকা ছেড়ে রাতে চাঁদপুর পৌঁছানোর পর ইঞ্জিনে কয়েকবার সমস্যা দেখা দিলেও মাস্টাররা তা আমলে না নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে চালিয়ে নিয়ে দুই মাস্টার গুরুতর অপরাধ করেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
তাতে আরো বলা হয়, এছাড়া বরিশাল থেকে ঝালকাঠি যাওয়ার পথে সুগন্ধা নদীতে লঞ্চটিতে অগ্নিকাণ্ডের মাত্রা বাড়তে থাকলে প্রথমবার এটি যেখানে থামানো হয়, আগুন নেভানোর চেষ্টা না করে ড্রাইভাররা কাউকে কিছু না বলে সেখানেই নেমে যান। এ দুই ড্রাইভার চরম দায়িত্বহীন কাজ করেছেন।
নাগরিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কমিটির আহ্বায়ক ও পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান। কমিটির সদস্য সচিব ও নিরাপদ নৌপথ বাস্তবায়ন আন্দোলনের সদস্য সচিব আমিনুর রসুল বাবুলের সঞ্চালনায় তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক এবং নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন নাগরিক কমিটির বিশেষজ্ঞ সদস্য নৌ প্রকৌশলী মো. আব্দুল হামিদ ও সদস্য জাকির হোসেন।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক তদন্ত কমিটির সদস্য ও মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রর মহাসচিব মাহবুল হক, নৌ-সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সভাপতি হাজী মোহাম্মদ শহীদ মিয়া, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল ভদ্র, ব্যারিস্টার নিশাত মাহমুদ, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের (নাসাফ) মহাসচিব তৈয়ব আলী, পুরনো ঢাকা নাগরিক উদ্যোগের আহ্বায়ক নাজিম উদ্দিন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নাগরিক ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক মোস্তফা কামাল আকন্দ, পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান প্রমুখ।
তদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে নৌ দুর্ঘটনা রোধে ২৫টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়