ল্যাঙ্গার চলে যাওয়ায় খেপেছে অস্ট্রেলিয়ার ‘সোনালি প্রজন্ম’
স্টিভ ওয়াহর গড়ে দেওয়া দলের অধিনায়কের দায়িত্ব নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের সোনালি সময় দেখেছেন পন্টিং। জাস্টিন ল্যাঙ্গার, ম্যাথু হেইডেন, ডেমিয়েন মার্টিন, গ্লেন ম্যাকগ্রা, শেন ওয়ার্নদের নিয়ে গড়া পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়া ২০০২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত প্রায় সব সংস্করণে রাজত্ব করেছে। সাবেক সতীর্থের এমন বিদায় মেনে নিতে পারছেন না পন্টিংসহ সেই দলের কয়েক ক্রিকেটার।
ল্যাঙ্গার শুধু অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলে হেইডেনের সতীর্থই ছিলেন না, দুজনে অন্তরঙ্গ বন্ধুও। ল্যাঙ্গার কী করেছেন অস্ট্রেলিয়ার কোচ হিসেবে, এর খুঁটিনাটিও হেইডেনের জানা থাকার কথা। ২০১৮ সালে কেপটাউন টেস্টে বলবিকৃতি–কাণ্ডে অন্ধকার সময় পার করা অস্ট্রেলিয়ার কোচের দায়িত্ব নিয়ে ল্যাঙ্গার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পাশাপাশি গত মাসে অ্যাশেজও জিতিয়েছেন ওয়ার্নার-স্মিথদের।
তাঁর এমন বিদায়ে আবেগপ্রবণ হেইডেন মনে করেন, ক্রান্তিকালে কিংবা যেকোনো বিপর্যয়-বিতর্ক মোকাবিলায় সিএর বাজে পারফরম্যান্সের নজির নতুন কিছু নয়।
টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার উদ্বোধনী জুটিতে একসময়ে ল্যাঙ্গারের সঙ্গী হেইডেন এখানেও ব্যাট ধরেছেন সাবেক সতীর্থের হয়ে। সংবাদমাধ্যম এবিসিকে বলেছেন, ‘প্রক্রিয়াটা আরও ভালো হতে পারত। ও তো অপেশাদার কেউ নয়, খেলাটার একজন কিংবদন্তি, অ্যাশেজ ও বিশ্বকাপজয়ী কোচ।’
এরপর রাগবির কিংবদন্তি অস্ট্রেলিয়ান কোচ ওয়েন বেনেটের উদাহরণ টেনে হেইডেন বললেন, ‘মনে করুন, ওয়েন বেনেট এ বছরই চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন। তাহলে তিনি কিন্তু বিজয়মঞ্চেই থাকতেন।’ অর্থাৎ হেইডেন বুঝিয়েছেন, ল্যাঙ্গার সম্প্রতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও অ্যাশেজ জেতানোর পরও তাঁকে ধরে রাখতে না পারাটা সিএর ব্যর্থতা।
জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের অসন্তোষকেও ল্যাঙ্গারের বিদায়ের কারণ হিসেবে দেখছেন হেইডেন। খেলোয়াড়দের কাছ থেকে সমর্থন না পাওয়াই ল্যাঙ্গারের কোচের পদ থেকে সরে যাওয়ার কারণ বলে মনে হচ্ছে হেইডেনের, ‘ও যে চলে যাচ্ছে, এটা বোঝা গেল কীভাবে? সেদিন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়কের (কামিন্স) কথায় তার প্রতি একচিলতে সমর্থন কিংবা প্রশংসাও ছিল না। এরপর তার বিদায়টা ভালোভাবে হতে পারে না। কারণ, ওটা ওকে ভীষণ আঘাত করেছে।’
অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা এর আগে বিভিন্ন সময় ড্রেসিংরুম সামলানোর বিষয়ে ল্যাঙ্গারের সামর্থ্য নিয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছেন।
ওদিকে কোচ হিসেবে ল্যাঙ্গারকে সমর্থন দিয়ে গেছেন তাঁর সাবেক সতীর্থ পন্টিং, হেইডেন, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, শেন ওয়ার্ন ও স্টিভ ওয়াহরা। বোর্ডের সমালোচনা করে পন্টিং এবিসিকে বলেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের কিছু ভালো মানুষের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারগুলো গত ছয় মাসে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া যেভাবে সামলেছে, সেটা খুবই বাজে হয়েছে। জাস্টিন ল্যাঙ্গার ও টিম পেইনের কথা বলছি। দুজনের বিষয়টি বোর্ড যেভাবে সামলেছে, তা আমার চোখে বিব্রতকর।’
জাতীয় দলে ‘খেলোয়াড়দের ছোট একটি অংশ’ ল্যাঙ্গারের কোচিং-নীতিকে অপছন্দ করায় তাঁর বিদায় রচিত হয়েছে বলেই মনে করেন সাবেক এই অধিনায়ক, ‘যে মানুষটা অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের জন্য নিজের হৃদয় ও জীবন উৎসর্গ করেছে, তাকে জোর করে বিদায় করায় ওটুকুই (খেলোয়াড়দের অংশ) যথেষ্ট। আমি আসলেই মনে করি, অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের জন্য এটা দুঃখজনক দিন।’
অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দল ছাড়াও ঘরোয়া ক্রিকেটে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া দলে ল্যাঙ্গারের সতীর্থ ছিলেন ডেমিয়েন মার্টিন। তাঁর টুইট, ‘অবিশ্বাস্য…অন্ধকারাচ্ছন্ন দিনগুলো থেকে এখানে এনেছে।’ অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পেসার মিচেল জনসন ল্যাঙ্গার-পন্টিংদের পরবর্তী প্রজন্মের ক্রিকেটার। ইনস্টাগ্রামে সিএকে ধুয়ে দেন তিনি, ‘ক্রিকেটে মাঠ ও মাঠের বাইরে অন্যতম সেরা এক মানুষের সঙ্গে এমন আচরণ খুব হতাশার। এমন আচরণ ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে। লোকে এরপর কেন অস্ট্রেলিয়া দলের কোচ হতে চাইবে, সেটাও ভাবায়।’
পন্টিং অধিনায়ক থাকার সময় অস্ট্রেলিয়া দলের কোচের দায়িত্বে থাকা জন বুকানন সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমি মনে করি, জাস্টিন ল্যাঙ্গারকে ফেরানো কিংবা না ফেরানো হলেও ওকে খুব বাজে পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।’