বিড়ালকে লাথি মেরে জরিমানা প্রায় ৩ কোটি, হারালেন পৃষ্ঠপোষকও
ভিডিওটি ভাইরাল হতে সময় লাগেনি। ফুটবল–সমর্থক থেকে ইংল্যান্ডের প্রাণী অধিকার রক্ষা সংগঠন (আরএসপিসিএ) নড়েচড়ে বসে। তুমুল সমালোচনা হওয়ায় জুমার বিচারের দাবিতে এরই মধ্যে প্রায় দেড় লাখ মানুষ পিটিশনে সই করেছেন।
শুধু কি তা–ই, এসেক্স পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করছে। জুমার বাসা থেকে দুটি পোষা বিড়াল নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে আরএসপিসিএ। জুমার স্পনসর প্রতিষ্ঠান অ্যাডিডাস এরই মধ্যে তাঁর পাশ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে।
ক্রীড়া সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, এ ঘটনার পর তারা আর ফরাসি ডিফেন্ডারের সঙ্গে থাকতে পারছে না, ‘আমরা তদন্ত শেষে নিশ্চিত করছি, কুর্ত জুমা আর অ্যাডিডাসের চুক্তিবদ্ধ অ্যাথলেট নন।’
ব্যবস্থা নিয়েছে জুমার ক্লাবও। ঘটনার পর ওয়াটফোর্ডের বিপক্ষে তাঁকে খেলানো হলেও জরিমানা করেছে ওয়েস্ট হাম। কাল এক বিবৃতিতে ক্লাবটি জানায়, জুমাকে ‘সর্বোচ্চ অঙ্কের’ জরিমানা করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, জুমাকে তাঁর দুই সপ্তাহের পারিশ্রমিক আড়াই লাখ পাউন্ড জরিমানা করা হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় অঙ্কটা প্রায় ২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এই টাকা প্রাণীদের অধিকার রক্ষায় দান করা হবে।
ওয়েস্ট হামের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অনলাইনে কুর্ত জুমার ছড়িয়ে পড়া ভিডিও নিয়ে আরএসপিসিএর তদন্তে পূর্ণ সমর্থন আছে ওয়েস্ট হাম ইউনাইটেডের। কুর্ত এবং ক্লাব এ তদন্তে সহায়তা করছে। যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, কুর্ত জুমা স্বেচ্ছায় সহায়তা করছেন তাতে, যেমন আরএসপিসিএর কাছে এরই মধ্যে তার পোষা দুটি বিড়াল হস্তান্তর করা হয়েছে। কুর্ত অনুশোচনায় দগ্ধ, ক্লাবে বাকি সবার মতো সে-ও ঘটনাটির গভীরতা বুঝতে পেরেছে।’
আরএসপিসিএর এক মুখপাত্র ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘দুটি বিড়ালকে আরএসপিসিএর হেফাজতে রাখা হয়েছে। আমাদের অগ্রাধিকার হলো বিড়ালগুলোকে ভালো রাখা। পশু চিকিৎসকেরা তাদের চিকিৎসা করছে এবং তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিড়ালগুলো এখানেই থাকবে।’
জুমা তাঁর পোষা বিড়াল মেরে শুধু নিজেকেই বিপদে ফেলেননি, তাঁর ক্লাবও ঝামেলায় পড়েছে। ওয়েস্ট হামের অফিশিয়াল পার্টনার ভিটালিটি ক্লাবটির সঙ্গে তাদের চুক্তি স্থগিত করেছে।
জুমার বিড়াল মারার ভিডিওটি প্রকাশের পরই সিদ্ধান্তটি নেয় ইংল্যান্ডের এই মেডিকেল ইনস্যুরেন্স প্রতিষ্ঠান, ‘কুর্ত জুমার ভিডিও দেখে আমরা যারপরনাই পীড়িত হয়েছি। যেকোনো প্রাণীর প্রতিই বাজে আচরণ সমর্থন করে না ভিটালিটি। এ ঘটনার পর তার ক্লাবের আচরণেও আমরা হতাশ। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে আমরা ওয়েস্ট হামের সঙ্গে স্পনসর চুক্তি স্থগিত করছি।’
ওয়াটফোর্ডের বিপক্ষে ওয়েস্ট হামের ১-০ গোলে জয়ের ম্যাচ শেষে জুমাকে নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন কোচ ডেভিড ময়েস।
তাঁকে একাদশে খেলানোর মাধ্যমে ক্লাব সঠিক বার্তা দেয় কি না—এ প্রশ্নের উত্তরে ওয়েস্ট হাম কোচ ময়েস বলেন, ‘আমি সত্যিই ভীষণ হতাশ। ক্লাব এই মুহূর্তে যা যা করার, সবই করছে। তবে আমার কাজ হলো ওয়েস্ট হামের জন্য সেরা দলটা বেছে নেওয়া এবং কুর্ত এই দলেরই খেলোয়াড়।’
চারদিক থেকে সমালোচনা ধেয়ে আসার পর কৃতকর্মের জন্য এর আগে ক্ষমাও চেয়েছেন জুমা, ‘ভিডিওটি দেখে যাঁরা কষ্ট পেয়েছেন, তাঁদের বলতে চাই, কতটা দুঃখ লাগছে, তা বোঝাতে পারব না। দুটি বিড়াল নিরাপদে এবং ভালো আছে বলে নিশ্চিত করছি সবাইকে। ওই আচরণ বিচ্ছিন্ন ঘটনা, আর কখনোই এমন হবে না।’