তালেবান কী বলছে আর কী করছে
তালেবান বলছে, যেসব কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষ আলাদা করে কাজ করার সুযোগ আছে, শুধু সেসব জায়গাতেই নারীরা কাজের সুযোগ পাবেন। এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানে কার্যত নারীরা চাকরিতে নিষিদ্ধ। বিশেষ করে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও শিক্ষার মতো খাতগুলো বাদ দিলে তাঁদের সরকারি চাকরির সুযোগ নেই বললেই চলে। এমনকি বেসরকারি খাতে কর্মরত নারীরাও অফিসে যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন। তালেবানের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা প্রায়ই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন করেন। এসব প্রতিষ্ঠানে নারী-পুরুষ আলাদাভাবে কাজ করার কঠোর রীতি মানা হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করেন তাঁরা।
কিছু কিছু জায়গায় পুরোপুরি নারী পরিচালিত কিছু ক্ষুদ্র সমবায় প্রতিষ্ঠান কাজ চালিয়ে যেতে পারছে। যেমন পশ্চিমাঞ্চলের প্রাচীন শহর হেরাতে জুঁই প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রটি চালু রয়েছে।
আফগানিস্তানে গত দুই দশকে পুলিশ থেকে আদালত পর্যন্ত সব ধরনের কর্মক্ষেত্রে নারীর উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছিল। তবে গত আগস্টে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর লাখো আফগান নারী কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
তালেবান বলেছে, সব নারীরই শিক্ষা অর্জনের অধিকার রয়েছে। অথচ গত বছরের আগস্ট থেকে আফগানিস্তানের বেশির ভাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয় নারীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়নি।
তালেবান কর্মকর্তারা এখন বলছেন, মার্চের শেষ নাগাদ নারী-পুরুষ সবার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। তবে অনেক শিক্ষক দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ায় এবং পুরুষ শিক্ষকের জন্য নারী শিক্ষার্থীদের পাঠদান নিষিদ্ধ থাকায় শেষ পর্যন্ত তালেবান সে প্রতিশ্রুতি রাখতে পারবে কি না, তা অনিশ্চিত।
আফগানিস্তানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশির ভাগই আবার খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে সেখানেও রয়েছে শিক্ষক সংকট। এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও নারী-পুরুষ শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে পাঠদান নিষিদ্ধ।
একই রকমের সীমাবদ্ধতা নিয়েই গত সপ্তাহে কিছু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নারী উপস্থিতি কম দেখা গেছে।
তালেবানের প্রথমবারের শাসনমেয়াদে নারীদের জন্য বোরকা পরা বাধ্যতামূলক ছিল। এবার ক্ষমতা দখলের পর তালেবান বলেছে নারীরা মাথায় হিজাব কিংবা স্কার্ফ পরলে চলবে।
গত মাসে তালেবানের নীতিনৈতিকতা-বিষয়ক মন্ত্রণালয় কাবুলের বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার লাগিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, নারীদের অন্তত হিজাব বা স্কার্ফ পরতে হবে। তবে এর সঙ্গে যে ছবি জুড়ে দেওয়া হয়েছে, তা বোরকার ছবি।
পুরুষ স্বজন ছাড়া নারীদের এক শহর থেকে অন্য শহরে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করেছে তালেবান। নারীদের মাথায় স্কার্ফ না দেখলে তাদের ট্যাক্সিতে না তোলার জন্য চালকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তালেবান আগস্টে ক্ষমতা দখল করার আগে বিউটি পারলার ও বুটিক শপ দেখা যেত। সেগুলোর বেশির ভাগই এখন আর নেই। হেরাতে বিভিন্ন দোকানের ম্যানিকুয়িনের (দোকানে পোশাক সাজিয়ে রাখার পুতুল) মাথা ফেলে দেওয়া হয়েছে। যেসব বিলবোর্ডে মানুষের ছবি আছে, তা নামিয়ে ফেলা হয়েছে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে নারী শিল্পী অভিনীত নাটক দেখানো বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নারী সাংবাদিকদেরও ক্যামেরার সামনে হিজাব পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
তালেবানের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেন, নারীদের খেলাধুলার প্রয়োজন নেই। কিন্তু নিজেদের সে ধারণাকে আনুষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে খুব সতর্ক আছেন তাঁরা। কারণ ফুটবল, ক্রিকেটসহ বিশ্বের ক্রীড়াঙ্গনের তত্ত্বাবধানকারী সংস্থাগুলোর কাছ থেকে তহবিল পাওয়ার ক্ষেত্রে সব লিঙ্গের মানুষকে খেলার অনুমতি দেওয়া জরুরি।
তালেবান ক্ষমতা দখল করার পর আফগানিস্তানের শীর্ষ সংগীতশিল্পী, চিত্রশিল্পী ও আলোকচিত্রীদের অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। যাঁরা দেশ ছাড়তে পারেননি, তাঁরাও আত্মগোপনে রয়েছেন।