‘লং ড্রাইভে’ এখনো মুশফিককে দেখেননি সিডন্স
বাংলাদেশের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ান এই কোচের সম্পর্ক ২০০৭ সাল থেকে। তখন তিনি এসেছিলেন জাতীয় দলের প্রধান কোচ হয়ে। ২০১১ বিশ্বকাপের পর বিসিবি তাঁকে ‘ধন্যবাদ’ জানিয়ে বিদায় করে দিলেও বাংলাদেশের সঙ্গে সিডন্সের সম্পর্কটা একেবারে চুকেবুকে যায়নি। কোনো না কোনো সুতায় সেটি বাঁধাই ছিল।
আগেরবার বাংলাদেশের প্রেমেই পড়ে গিয়েছিলেন সিডন্স। সঙ্গিনী কিমকে নিয়ে ঢাকার রাস্তায় রিকশায় চড়াটা ছিল সে সময় তাঁর অন্যতম শখ। রাতে বেরিয়ে পড়তেন লং ড্রাইভে।
পুরান ঢাকার ধুপখোলা মাঠ থেকে পদ্মা রিসোর্ট—কিছুই অচেনা ছিল না। ঢাকার রাস্তার যানজট থেকেও খুঁজে নিতেন জীবনের ছবি। রাস্তায় হাঁটতে বের হলে পিছু নেওয়া পথশিশুদের কিনে দিতেন আপেল–কলা। সিডন্সের সেই একদিন ছিল বটে!
এবার এসে সিডন্স এখনো মাঠের কাজে না নামলেও সময়টা ব্যস্তই কাটছে। ঢাকা–সিলেট–ঢাকা করে বিপিএলের ম্যাচ দেখছেন। সিলেটে গিয়ে নিজের ফেসবুকে পোস্ট করা এক ভিডিওতেও বাংলাদেশের প্রতি ভালো লাগার কথাটা জানিয়েছেন আরেকবার।
ভিডিওর সঙ্গে সিডন্স লিখেছেন, ‘অনেক পরিচিত মুখ। দুর্দান্ত জায়গা! বাংলাদেশে প্রতিটা দিনই আনন্দে কাটছে। অবশ্য যানজটটাই আমার বড় চিন্তা।’
চিন্তা হতে পারে, তবে দুশ্চিন্তা অবশ্যই নয়। নইলে ঢাকার রাস্তায় গাড়ি চালাতে কেন এত উদগ্রীব হয়ে থাকবেন অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা এই কোচ?
‘বাংলাদেশে আবার এসে কেমন লাগছে’—শুরুর সেই প্রশ্নের জবাবে সিডন্স পরে যোগ করেছেন, ‘এখানে অনেকেই আমার পরিচিত। আরও অনেকের সঙ্গেই দেখা হওয়া বাকি। আর এই শহরটাও (ঢাকা) দেখছি আগের মতোই ব্যস্ত। তবে আমি ড্রাইভিং ভালোবাসি। পারলে প্রতিদিনই ঢাকার রাস্তায় গাড়ি চালাতে চাইব।’
লং ড্রাইভের পুরোনো শখটা কি তাহলে আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে নাকি! সেটি হলেও অবশ্য এবার কিমকে সঙ্গে পাবেন না সিডন্স। পেশায় ফিজিওথেরাপিস্ট কিম সঙ্গিনী থেকে পরে তাঁর স্ত্রী হয়ে নিজের নামের সঙ্গে যোগ করে নিয়েছেন স্বামীর নামও—কিম সিডন্স। অ্যাডিলেডে তিনি ব্যস্ত সংসার আর সন্তানদের সামলাতে।
সিডন্স যখন বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ ছিলেন, বড় দুই সন্তান স্টেলা আর টবি তখন ছোট। ৯ বছর বয়সী ছোট সন্তান জোনাহর জন্ম হয়েছে পরে।
জেমি সিডন্সকে একটু বেশিই পরিবারকেন্দ্রিক মানুষ বললে খুব একটা ভুল বলা হবে না বোধ হয়। আগেরবার চেয়েছিলেন কিমকে নিয়ে ঢাকাতেই সংসার পাতবেন। পরে তো আর সেটা হলো না।
তবে ঢাকা শহরের প্রতি মায়ার টান যেন তাঁর আবেগের তানপুরায় নতুন করে টোকা দিয়ে যাচ্ছে, ‘শহরটা দারুণ জীবন্ত। সব সময়ই কিছু না কিছু ঘটতে থাকে। এবার এসে দেখলাম নতুন নতুন অনেক অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে, নতুন অনেক হোটেল হয়েছে। যানজট আগের মতোই থাকলেও সেটা আমার জন্য কোনো সমস্যা নয়।’
২০১১ সালে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পরও পুরোনো ছাত্র, সহকর্মী এবং ঢাকার বন্ধুদের অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ ছিল সিডন্সের। ২০১২ সালে তো তামিম ইকবালকে নিউজিল্যান্ডে ডেকে নিয়ে খেলালেন নিজের দল ওয়েলিংটন ফায়ারবার্ডস দলে!
মাঝের বছরগুলোয় সিডন্সের কাছ থেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ব্যাটিংয়ের টিপস নিয়েছেন, এমন ক্রিকেটারও আছেন বাংলাদেশে।
এখনো কাজ শুরু না করলেও বাংলাদেশে পুরোনো কোচের ‘প্রত্যাবর্তন’ ইনিংসে সিডন্সের সঙ্গে যোগাযোগ হয়ে গেছে প্রায় সবারই।
সিডন্সই বলছিলেন, ‘আমার সময়ের খেলোয়াড়েরা, এখন যাঁরা সিনিয়র, তাঁরা সবাই আমাকে স্বাগত জানিয়েছেন। ওদের সবার সঙ্গেই আমার কথা হয়েছে, শুধু মুশি (মুশফিকুর রহিম) ছাড়া।’
মুশফিকের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ না হওয়ার কারণ হতে পারে বিপিএলের ব্যস্ততা। টুর্নামেন্টের বাকি সময়ে নিশ্চয়ই তাঁরও দেখা পেয়ে যাবেন সিডন্স। আর সেটা না হলেও সমস্যা নেই। আফগানিস্তান সিরিজে তো ব্যাটিং কোচ হিসেবে ড্রেসিংরুমে সিডন্সকেই পাচ্ছেন মুশফিকরা!
সিডন্সও এখন অধীর অপেক্ষায় সেটারই, ‘ওরা (খেলোয়াড়েরা) বিপিএল শেষ করার পরপরই আমি কোচিংয়ে নেমে যেতে চাই। আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না…।’
অপেক্ষায় বাংলাদেশের ক্রিকেটও। পুরোনো জেমি সিডন্স বাংলাদেশে তাঁর এবারের ‘লং ড্রাইভে’ নতুন কী দেন, সেটা দেখার অপেক্ষা।