স্ত্রীসহ পুলিশ কর্মকর্তা খুনঃ ঐশী একাই বাবা-মাকে হত্যা করে
ডেস্ক রিপোর্ট : পুলিশ (সিআইডি) কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী মা স্বপ্না রহমানকে হত্যার দায়ে মেয়ে ঐশী রহমানকে প্রধান আসামি করে দুটি অভিযোগপত্র আজ রবিবার আদালতে দাখিল করা হচ্ছে। চাঞ্চল্যকর এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রবিবার আদালতে দাখিল হতে যাওয়া দুটি অভিযোগপত্রেই ঐশীকে প্রধান অভিযুক্ত করা ছাড়াও তার বন্ধু জনি, রনি ও বাসার গৃহকর্মী সুমীকে দায়ী করা হয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঐশী ও তার দুই বন্ধুকে অভিযুক্ত করে একটি ও অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় বাসার গৃহকর্মী সুমীর জন্য আলাদা অভিযোগপত্র দেয়া হচ্ছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ঐশী একাই হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছেন। হত্যার আগে মা-বাবাকে ৬০টি ঘুমের ট্যাবলেট মিশ্রিত কফি খাইয়েছিলেন। রাসায়নিক পরীক্ষায় ঘুমের ওষুধে নাইট্রাস, টেনিন ও ট্রমাজিপাম-৩-এর উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে। কফি খাওয়ানোর মগটিও জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া স্বপ্না রহমানের ব্রোঞ্জের রক্তমাখা চুড়ি ও ঐশীর রক্তমাখা কাপড়ের রক্তের মিল পাওয়া গেছে। মামলার বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে আটটি জব্দ তালিকা করা হয়েছে।
গৃহকর্মী সুমী ছাড়াও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে নিহত দম্পতির ছোট ছেলে ঐহী রহমানের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। মামলার একমাত্র সাক্ষীই ঐহী।
সূত্র আরো জানায়, গৃহকর্মী সুমী হত্যাকান্ডের প্রধান সহায়তাকারী ও মামলার অন্যতম সাক্ষী। অন্যদিকে ঐশীর বন্ধু জনি প্ররোচনাকারী ও রনি আশ্রয়দাতা হিসেবে অভিযুক্ত হয়েছেন। তবে তারা সরাসরি হত্যাকান্ডে জড়িত ছিলেন না।
গত বছর ২৪ অক্টোবর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন ঐশী ও সুমী। এছাড়া ডিএনএ টেস্ট ও রাসায়নিক পরীক্ষায় হত্যাকান্ডের সঙ্গে ঐশীর সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ডিবি পুলিশ পরিদর্শক আবুল খায়ের জানান, দীর্ঘ তদন্ত শেষে রবিবার আদালতে দুটি চার্জশিট জমা দেয়া হচ্ছে। হত্যাকান্ডের প্রধান অভিযুক্ত নিহত পুলিশ দম্পতির একমাত্র মেয়ে ঐশী রহমান। অন্যদিকে হত্যায় সরাসরি জড়িত না থাকলেও বিভিন্নভাবে ঐশীকে সহায়তা করায় দুই বন্ধু ও গৃহকর্মী সুমী অভিযুক্ত হয়েছেন।
উল্লখ্য, ২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট পুলিশ (সিআইডি) কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও স্ত্রী স্বপ্না রহমান রাজধানীর চামেলীবাগে নিজ বাসার বেডরুমে নৃশংসভাবে খুন হন। ১৬ আগস্ট সন্ধ্যায় দম্পতির ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে তাদের একমাত্র মেয়ে ঐশী রহমান নিখোঁজ ছিলেন। পরে ১৭ আগস্ট মা-বাবাকে হত্যার দায় স্বীকার করে পল্টন থানায় আত্মসমর্পণ করেন ঐশী। ঐশী ছাড়াও মাহফুজ-স্বপ্না দম্পতির ঐহী রহমান নামে একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
জানা গেছে, ঐশী ও তার দুই বন্ধু ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন। অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় গৃহকর্মী সুমীকে গাজীপুরের কাশিমপুর কিশোর সংশোধনী কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। ঐশী ধানমন্ডির অ্ক্স্ফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ‘ও’ লেভেলের ছাত্রী ছিলেন। ঐশীর ছোট ভাই ঐহী ময়মনসিংহে তাদের চাচার হেফাজতে রয়েছে।