মাঠ পরীক্ষা ছাড়াই কীটনাশক ক্রয় করতে যাচ্ছে সিএমএসডি
কীটনাশক আইন অনুযায়ী কোনো কীটনাশক ক্রয়ের ক্ষেত্রে দেশীয় আবহাওয়ায় দুই মৌসুমে পূর্ণাঙ্গ মাঠ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু কোনো ধরনের মাঠ পরীক্ষা ছাড়াই বেলে মাছি মারা এবং ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণের কীটনাশক ক্রয়ের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সরকারি কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি)। বিতর্কিত একটি পাকিস্তানি কম্পানির বাংলাদেশীয় এজেন্ট কম্পানির কাছ থেকে কীটনাশক ক্রয়ের জন্য বিধি লঙ্ঘন করা হচ্ছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে অভিযোগ করা হয়েছে।
এসিআই ফরমুলেশনস লিমিটেডের উপদেস্টা ড. পবিত্র ভান্ডারী ওই অভিযোগে জানিয়েছেন, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি জনস্বাস্থ্যে ব্যবহারের জন্য কীটনাশক ক্রয় প্যাকেজের প্রীবিড মিটিং-এ ৭টি কম্পানি অংশগ্রহণ করে।
বিজ্ঞাপন
মিটিংয়ে ৬টি প্রতিষ্ঠান মৌখিক ও লিখিতভাবে উল্লেখ করে যে, কীটনাশক যেহেতু একটি বিষাক্ত উপাদান সেহেতু এটি ব্যবহারের ক্ষেত্র মৃত্যুঝুঁকি, শিশুস্বাস্থ্য ও পরিবেশের বিষয়টি মাথায় রেখে দরপত্র স্পেসিফিকেশনে দেশীয় পরিবেশে পূর্ণাঙ্গ মাঠ পরীক্ষা থাকা বাধ্যতামূলকভাবে সংযোজন করতে হবে। কিন্তু অজানা কারণে দুটি কীটনাশক ক্রয়ে যে দরপত্র তৈরি করা হয় সেখানে লট-১-এ কোনো মাঠ পরীক্ষা চাওয়া হয়নি। তবে লট-২-এ মাঠ পরীক্ষা চাওয়া হয়েছে।
মাঠ পরীক্ষার বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কীটনাশক আইন অনুযায়ী দেশীয় আবহাওয়ায় দুই মৌসুমে পূর্ণাঙ্গ মাঠ পরীক্ষা থাকতে হবে। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ মাঠ পরীক্ষা তুলে দেওয়ার জন্য নোকন নামে একটি পাকিস্থানি মালিকানাধীন কম্পানি এর আগে উচ্চ আদালতে মামলা করে এবং পরবর্তীতে শুনানি সাপেক্ষে আদালত এ মামলা খারিজ করে দেয়। যাতে প্রতিয়মান হয়, কীটনাশক আইন অনুযায়ী দেশীয় আবহাওয়ায় পূর্ণাঙ্গ মাঠ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। কিন্তু চলতি কীটনাশক ক্রয় প্রক্রিয়ার এ-২১০২ প্যাকেজে দুর্নীতির দায়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলীপ্রাপ্ত একজন ডাক্তারসহ সিএমএসডির কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজসে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি বিভ্রান্ত করে একটি নির্দিষ্ট কম্পানিকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টায় তৎপর। অথচ ওই কম্পানির কীটনাশক সরবরাহের কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। লট-১ ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণের কীটনাশক বেনডায়োকার সরবরাহের জন্য এক কোটি ৮০ লাখ টাকার কাজের অভিজ্ঞতা এবং লট-২ এ বেলে মাছি মারার কীটনাশক ডেল্টা মেথ্রিন ৫ শতাংশ সরবরাহের ক্ষেত্রে ৮ কোটি ৪০ লাখ টাকার কাজের অভিজ্ঞতা থাকার নিয়ম রয়েছে। তবে যে প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে কর্মকর্তাদের সিন্ডিকেট তৎপর ওই কম্পানির এই অভিজ্ঞতা নেই বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
এবিষয়ে ২৮ মার্চ সিএমএসডি কর্তৃপকে লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করা হলেও কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ করা হয়েছে। বিষয়টি সিএমএসডি পরিচালককে লিখিতভাবেও জানিয়েছেন এসিআই’র উপদেষ্টা পবিত্র ভান্ডারী। একটি পাকিস্থানি কম্পানি দেশীয় একটি প্রতিষ্ঠানকে সামনে রেখে কালাজ্বর নিয়ন্ত্রণের জন্য উক্ত কীটনাশক ক্রয়ে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে, ফলে কালাজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর হার দিন দিন বেড়ে চলেছে। সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য উদ্দেশ্যমুলকভাবে এটা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।