বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Monday, December 23, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » আর্ন্তজাতিক » ইমরানের কথিত ষড়যন্ত্র চিঠির ‘পেছনের কাহিনী’

ইমরানের কথিত ষড়যন্ত্র চিঠির ‘পেছনের কাহিনী’ 

114540imran800x483_(1)

ইমরান খান যে ‘লেটারগেট’ কেলেঙ্কারি তথা বিদেশি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন, তার পেছনে ছিল কিছু কথোপকথন। ৭ মার্চ আলাপচারিতাটি হয় পাকিস্তানি ও মার্কিন কূটনীতিকদের মধ্যে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন একজন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাও। আর ঘটনাস্থল যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত তৎকালীন পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত আসাদ মজিদ খানের ওয়াশিংটনের বাসভবনে অনুষ্ঠিত বিদায়ী মধ্যাহ্নভোজ।

সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান দৃশ্যত উল্লিখিত চিঠির ভিত্তিতেই বলে আসছিলেন, বিদেশি মদদে তার সরকার উৎখাতের ‘ষড়যন্ত্র’ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ওই চিঠির তারিখের পরের দিনই পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দিয়েছিল ইমরানবিরোধীরা।

‘ডন’ পত্রিকার সঙ্গে কথা বলা কূটনৈতিক এবং সরকারি সূত্র জানিয়েছে, উপলক্ষটি মধ্যাহ্নভোজ হলেও একজন নোট গ্রহণকারী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রদূত আসাদ মজিদ খান পরে ইসলামাবাদে যে বার্তাটি পাঠিয়েছিলেন, তা ওই নোট গ্রহণকারীর নেওয়া বিবরণীর ওপর ভিত্তি করেই লেখা। নোট গ্রহণকারীও পাকিস্তান দূতাবাসের লোক ছিলেন।

মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেওয়া মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এবং ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি লেসলি সি ভিগেরি। পাকিস্তানের পক্ষে আরো ছিলেন ডেপুটি চিফ অব মিশন সৈয়দ নাভিদ বোখারি এবং প্রতিরক্ষা অ্যাটাশে।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রুশ আগ্রাসন শুরু হওয়ার দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে মধ্যাহ্নভোজটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল বলে আগ্রাসনটি কথোপকথনে প্রাধান্য পেয়েছিল।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের মধ্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মস্কোতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় মার্কিন পক্ষ এসময় ‘হতাশা’ প্রকাশ করে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, বিদায়ী রাষ্ট্রদূতকে মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, রাশিয়ার ওই সামরিক অভিযান গোটা যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষুব্ধ করেছিল। তারা মনে করেন ইমরান খানের সফরটি স্থগিত করা উচিত ছিল।

অন্য একটি সূত্র বলেছে ডোনাল্ড লু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ওয়াশিংটন মনে করে রাশিয়ার আক্রমণের পরেও সফরটি  এগিয়ে নেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন ইমরান খান নিজে। যদিও কিছুসংখ্যক পাকিস্তানি কর্মকর্তা এটি স্থগিত করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

সূত্র জানায়, রাষ্ট্রদূত মজিদ খান তখন বলেছিলেন, এটি আসলে সম্মিলিত সিদ্ধান্ত। পাকিস্তান কয়েক বছর ধরেই মস্কো সফরের জন্য চেষ্টা করছিল। আমন্ত্রণ পাওয়ার পর তারা আর তা প্রত্যাখ্যান বা স্থগিত করতে পারেনি।

সূত্র আরো বলেছে, কথোপকথনটি এরপর পাকিস্তানের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে চলে যায়। ডোনাল্ড লু উল্লেখ করেন, ওয়াশিংটন গভীরভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের ফলাফল মার্কিন-পাকিস্তান সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে।

একটি সূত্র দাবি করেছে ,ডোনাল্ড লুর কথার সুর ছিল উদ্বেগজনক এবং নৈমিত্তক ধরন থেকে অনেকটাই ভিন্নরকম। কিন্তু তিনি ঠিক সরকার পরিবর্তনের হুমকি দেননি। সূত্রটি আরও দাবি করেছে, মধ্যাহ্নভোজ বৈঠকে উপস্থিত কেউই মনে করেননি, মার্কিন কর্মকর্তারা পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ সরকারের পতন ঘটানোর ষড়যন্ত্র করছেন। সূত্রটি যোগ করেছে, ‘তবে তারা বলেছিলেন, অনাস্থা ভোটের ফলাফল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলবে। একে কেউ অন্যভাবেও ব্যাখ্যা করতে পারে। ‘

অন্য একটি সূত্রও বলেছেন, ‘আমার কখনই মনে হয়নি এটি একটি মার্কিন ষড়যন্ত্র। তবে এটি কিছু প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল যা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করেছে। ডোনাল্ড লু যা বলেছেন তা বাইডেন প্রশাসনের অনুভূতি ও চিন্তাভাবনাকে প্রতিফলিত করেছিল। এটা ছিল খুব অস্বাভাবিক। মোটেও গতানুগতিক অভিমত নয়। ’

সূত্র আরো দাবি করেছে, যে বৈঠকে পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা অ্যাটাশে উপস্থিত ছিলেন। ইউক্রেন ইস্যুতে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার আগেও যোগাযোগ হয়েছিল। এ থেকে ইউক্রেনের বিষয়ে পাক সেনাপ্রধান জেনারেল কামার বাজওয়ার ইমরান সরকারের নীতির পুরো বিপরীত কথা বলার কারণ বোঝা যায়।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছিলেন, পাকিস্তান স্নায়ুযুদ্ধের সময় পশ্চিমাদের পক্ষে থেকে ভুল করেছে। আরো বলেছেন, সাম্প্রতিক রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে তার দেশের নিরপেক্ষ থাকা উচিত। তিনি মস্কোর আক্রমণের নিন্দা করতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

ইমরানের ক্ষমতার শেষদিকে ইসলামাবাদে এক সেমিনারে ভাষণ দেওয়ার সময়, জেনারেল বাজওয়া ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার নিন্দা করেন। তিনি একে একটি ছোট দেশের ওপর “বিশাল ট্র্যাজেডি” হিসাবে বর্ণনা করে তা অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

গত বৃহস্পতিবার পাক সশস্ত্রবাহিনীর মিডিয়া শাখা আইএসপিআর মার্কিন ষড়যন্ত্রের বিষয়ে ইমরান খানের অভিযোগ নাকচ করে দেয়। তবে আইএসপিআর এর বিবৃতিতে স্বীকার করা হয়, ওয়াশিংটন মধ্যাহ্নভোজ বৈঠকে এমন ভাষা ব্যবহার করেছিল যা পাকিস্তানের বিষয়ে হস্তক্ষেপের সমান।
ইমরান খান হুমকিদাতা হিসেবে প্রথমে কারো নাম না বললেও এক পর্যায়ে ডোনাল্ড লুর নাম বলেছিলেন।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone