কৌশলে তাইওয়ানকে কাবু করছে চীন: বিশ্লেষক
চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর বন্ধ করতে না পারলেও দেশের সামরিক বাহিনীকে আরো বেশি আক্রমণাত্মক মহড়া দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন দেখিয়ে দিচ্ছে সরাসরি আক্রমণ না করেও তাইওয়ানকে কিভাবে কাবু করা সম্ভব।
গত বৃহস্পতিবার থেকে তাইওয়ানকে ঘিরে শুরু হওয়া চীনের এ যাবত্কালের সর্ববৃহত্ সামরিক মহড়া রবিবার শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সোমবার থেকে পীত সাগর ও দক্ষিণ চীন সাগরে নতুন সামরিক মহড়া শুরু করেছে বেইজিং। এই মহড়ায় আরো বেশি সামরিক শক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
আগামী ১৫ আগস্ট পর্যন্ত মহড়া চলবে বলে জানিয়েছেন চীনের জ্যেষ্ঠ সামরিক উপদেষ্টা। তাইওয়ানকে ঘিরে মোট ছয়টি অঞ্চল চিহ্নিত করে মহড়া চালাচ্ছে চীন।
এ প্রসঙ্গে বিশ্লেষকরা বলছেন, তাইওয়ান নিয়ন্ত্রণের জন্য আক্রমণ করার দরকার নেই বরং বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে তাইপেকে যে কাবু করা সম্ভব তা মহড়ার মাধ্যমে দেখিয়ে দিচ্ছে চীন।
চীনের পিএলএ ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মেং জিয়াংকিং বলেন, ‘কিভাবে তাইওয়ানের বন্দর বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব, কিভাবে স্বশাসিত দেশটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনায় আক্রমণ করা সম্ভব এবং কিভাবে বিদেশি বাহিনীর প্রবেশ বন্ধ করা যাবে; এই ছয় অঞ্চল বাছাইয়ের মাধ্যমে সে কৌশল দেখিয়েছে চীন। ’ এই ছয়টি অঞ্চল তাইওয়ানের জন্য গলার ফাঁসের মতো বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
চীন কখনো তাইয়ান দখল না করলেও এটাকে নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে মনে করে। একে আবার চীনের সঙ্গে যুক্ত করা চীনা নীতির অংশ। শি চিনপিংও দ্বীপটিকে বেইজিংয়ের নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগের হুমকি দিয়ে রেখেছেন।
জিয়াংকিং বলেন, তাইওয়ানের উত্তরে মহড়ার মাধ্যমে ওকিনাওয়া দ্বীপ থেকে তাইপেকে বিচ্ছিন্ন করেছে চীন। ওই দ্বীপে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের যথেষ্ট সামরিক সম্পদ রয়েছে। দক্ষিণে বাশি চ্যানেল নিয়ন্ত্রণে রেখেছে চীন। বাশি চ্যানেল তাইওয়ান থেকে দক্ষিণ চীন সাগরে যাওয়া-আসার একমাত্র জলপথ। পূর্বে চীনের বাহিনী দেখিয়েছে, সঠিক চীনা ক্ষেপণাস্ত্র বিদেশি যুদ্ধজাহাজকে তাইওয়ানের জলসীমায় প্রবেশে বাধা দিতে সক্ষম। অর্থাত্ চীন তাইওয়ানকে এক রকম ঘেরাও করে রেখেছে এই মহড়ার মাধ্যমে।
ইউএস প্যাসিফিক কমান্ডের গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক পরিচালক কার্ল শুস্টার বলেছেন, ‘মহড়াটি দেখিয়েছে একটি সংঘাতে অবরোধের জন্য উপকূলে অবিরাম নৌ উপস্থিতির প্রয়োজন হয় না। ’
সিঙ্গাপুরের এস রাজারত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক লি মিংজিয়াং বলেছেন, ‘এই প্রথম চীনের মহড়া তাইওয়ানের নিরাপত্তার স্থিতাবস্থাকে বদলে দিয়েছে। মহড়াটি চীনের সামরিক বাহিনীকে মজবুত ভিত্তি দিচ্ছে। ’
তিনি আরো বলেন, ‘বেইজিংয়ের এই অবরোধ কার্যকর করার ক্ষমতা যেকোনো দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে আলোচনার টেবিলে তাইওয়ানকে টেনে আনতে সুবিধা দেবে। তাইওয়ান প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হতে না চাইলে এবং রক্তপাতহীনভাবে চীনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া মেনে নিলে বেইজিং তার দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য অর্জনেও সক্ষম হবে। ’
যদিও তাইওয়ানের জনসাধারণ বেইজিংয়ের ক্রমাগত হুমকিতে অভ্যস্ত, তার পরও তাইপের সামরিক নেতাদের চিন্তিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা।
চীন তার সামরিক সক্ষমতা ও কৌশলের মাধ্যমে তাইওয়ান ইস্যুতে একধাপ এগিয়ে গেলেও শিগগির কোনো যুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা নেই, এমনটা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
অবসরপ্রাপ্ত ব্রিটিশ কূটনীতিক চার্লস পার্টন বলেন, যদি যুদ্ধ শুরু হয় এবং সেখানে চীন ব্যর্থ হয় তবে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব থেকে সরতে হতে পারে চিনপিংকে।