সম্রাটের জামিন বাতিলের আদেশ বহাল আপিল বিভাগে
অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের জামিন বাতিল করে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। আজ বুধবার (১০ আগস্ট) বিচারপতি মো. নূরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালত গত ১১ মে সম্রাটকে জামিন দেন। সে জামিন বাতিল চেয়ে গত ১৬ মে হাইকোর্টে আবেদন করে দুদক।
বিজ্ঞাপন
ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ১৮ মে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ সম্রাটের জামিন বাতিল করে আদেশ দেন। তাকে সাত দিনের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশও দেওয়া হয়।
হাইকোর্টের এ আদেশ স্থগিত চেয়ে সম্রাট আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেন। আবেদনটির ওপর শুনানি নিয়ে গত ২৩ মে আদেশ দেন চেম্বার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম। হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত না করে সম্রাটের আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন।
পরে গত ৩০ মে সম্রাটের আইনজীবীর সময় আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. নুরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন আপলি বেঞ্চ শুনানি পিছিয়ে দেন। সে ধারাবাহিকতায় বুধবার আবেদনটি খারিজ করে আদেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। দুদকের আইনজীবী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ আদেশের ফলে সম্রাটকে কারাগারেই থাকতে হচ্ছে। ’
এদিকে হাইকোর্টে জামিন বাতিল হওয়ার পর গত ২৪ মে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এ আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন সম্রাট। কিন্তু বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান জামিন আবেদনের শুনানির তারিখ রেখে সম্রাটকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।
সম্রাটের বিরুদ্ধে চার মামলার মধ্যে অস্ত্র ও অর্থ পাচারের দুই মামলায় জামিনে আছেন তিনি। এ দুই মামলায় গত ১০ ও ১১ এপ্রিল তাকে জামিন দেন বিচারিক আদালত।
২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে গ্রেপ্তারের পর ৩১ মাস ধরে কারাগারে ছিলেন তিনি। ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম দুই কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৮৭ টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগে সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, সম্রাট বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত এই বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন। তিনি মতিঝিল ও ফকিরাপুল এলাকায় ১৭টি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং সেগুলোতে লোক বসিয়ে মোটা অঙ্কের কমিশন নিতেন বলেও অভিযোগ আছে। অনেক সময় ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনো ব্যবসা পরিচালনা করতেন।
তিনি অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে ঢাকার গুলশান, ধানমণ্ডি, উত্তরাসহ বিভিন্ন স্থানে একাধিক ফ্ল্যাট, প্লট কিনেছেন এবং বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এ ছাড়া তার সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই ও যুক্তরাষ্ট্রে নামে-বেনামে এক হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে ভাষ্য দুদকের।
মামলাটি তদন্ত করে ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম। এরপর গত ২২ মার্চ অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য মামলাটি ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে পাঠানো হয়। আগামী ৯ জুন এ মামলায় অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানির তারিখ রয়েছে।