রানির শেষকৃত্যের পর এবার যুক্তরাজ্যের ভবিষ্যতে নজর
যুক্তরাজ্যের সরকারি ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থেকে ফিরেছে পুরনো রূপে। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে ১০ দিনব্যাপী বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা শেষে চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান। দেশের রাজতন্ত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় সিংহাসনে আসীন থাকা রানিকে বিদায় জানিয়ে স্বাভাবিক হচ্ছে ব্রিটেনের জনজীবন। তবে রাজপরিবার শোক পালন করবে আরো এক সপ্তাহ।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এত সব আয়োজন শেষে এখন সবার দৃষ্টি থাকবে রানি-পরবর্তী যুক্তরাজ্যের ঐক্য নিয়ে। রানিকে মনে করা হতো স্বাতন্ত্র্যের দাবিতে সদা সোচ্চার যুক্তরাজ্যের জাতিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ রাখার এক বড় সহায়।
যুক্তরাজ্যের সরকার জানিয়েছে, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আগে রানির কফিনে শ্রদ্ধা জানাতে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ সারিতে দাঁড়িয়েছিল। ন্যাশনাল গ্রিড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যে গতকাল সোমবার শেষকৃত্যের দিনে স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত দুই গিগাওয়াট বিদ্যুৎ কম খরচ হয়েছে। দুই গিগাওয়াট বিদ্যুৎ দিয়ে প্রায় ২০ কোটি বাতি জ্বালানো যায়।
ন্যাশনাল গ্রিডের মুখপাত্র জানান, এর কারণ হলো এ সময় বহু মানুষ নিজেদের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ করে টিভিতে নজর রেখেছিল।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য সরকারি ছুটির পরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো আবারও চালু হয়েছে। সরকারি শোক শেষে স্বাভাবিক হচ্ছে রাজনৈতিক কার্যক্রমও। নতুন রাজার প্রতি আনুগত্যের শপথ নিতে প্রস্তুত সংসদ সদস্যরা।
যুক্তরাজ্যের সংস্কৃতিমন্ত্রী মিশেল ডোনেলান বলেন, রাজা তৃতীয় চার্লসের অভিষেক অনুষ্ঠান কবে কখন হবে তা এখনো স্থির হয়নি। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রাজ্যাভিষেকের মাধ্যমে আবারও আলোচনায় আসবে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবি। আর অচিরেই আভাস মিলবে নতুন রাজা সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রাখায় রানির মতো সফল ভূমিকা পালন করতে পারবেন কি না তার।
এদিকে রানিকে চিরবিদায় জানানোর পর যুক্তরাজ্যের মানুষের মনোযোগ আবার ফিরছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধজনিত ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির দিকে।
রানি-পরবর্তী ব্রিটেনের সংহতির সংকট আরো গভীর হতে পারে, কারণ স্কটল্যান্ডের জাতীয়তাবাদী সরকার স্বাধীনতার জন্য আরেকটি গণভোটের জন্য আন্দোলন করছে। উত্তর আয়ারল্যান্ডেও প্রথমবার ক্যাথলিক খ্রিস্টানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তারা ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের প্রতি কম অনুগত হিসেবেই পরিচিত।
গার্ডিয়ান পত্রিকায় বিশ্লেষক জোনাথন ফ্রিডল্যান্ড বলেন, “উইন্ডসর ক্যাসলে যাকে (রানি) সমাহিত করা হয়েছে, তিনিই সম্ভবত যুক্তরাজ্যকে একত্র রাখতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছেন। গত ১০ দিন রাজনৈতিক মেরুকরণ সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। শেষ শ্রদ্ধায় সারিতে মানুষের অবস্থান যদি সাম্রাজ্যের জন্য না হয়ে কেবল রানির সম্মানে হয় তাহলে এটা স্পষ্ট নয় যে চার্লস রাজত্ব করার জন্য কত দিন ‘যুক্তরাজ্য’ পাবেন। ভবিষ্যতের এসব বিষয়েই এখন নজর থাকবে ব্রিটেনে। ”