ইউক্রেনের চার অঞ্চলে গণভোটের ঘোষণা করল রাশিয়া
যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই ইউক্রেনের চার অধিকৃত অঞ্চলে গণভোটের ঘোষণা করল রাশিয়া। ইউক্রেনের ডোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলের (যাদের একত্রে ডনবাস বলা হয়) পাশাপাশি খেরসন এবং জাপোরিজায়া রয়েছে এই তালিকায়। শুক্রবার থেকে আগামী মঙ্গলবার (২৩ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর) এ চার অঞ্চলে গণভোট হবে।
ভোটে রাশিয়ার পক্ষে ফলাফল অনিবার্য বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
খবর বিবিসি।
ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর চারটি অঞ্চলের প্রতি রাশিয়া সবচেয়ে বেশি মনযোগী ছিল। এই চার অঞ্চল ইউক্রেনের মোট এলাকার ১৫ শতাংশ। শুক্রবার থেকেই শুরু হয়েছে ওই চার অঞ্চলে গণভোটের প্রক্রিয়া। ফেব্রুয়ারি মাসে যুদ্ধের শুরুতেই এই চারটি এলাকার দখল নিয়েছিল রাশিয়া। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনের সেনারা ওই অঞ্চল বেশ কিছু অংশ পুনরুদ্ধার করেছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অনুগত সেনাবাহিনী গত এক মাসে যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। দক্ষিণের খেরসন থেকে উত্তর-পশ্চিমের খারকিভ পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে হামলাকারী রুশ সেনারা এখন আত্মরক্ষার জন্য পিছু হটছে। পুতিনের ডাকে সেনাবাহিনীতে ব্যাপক সেনা নিয়োগের ভয়ে দেশ ছাড়তে শুরু করেছেন রুশ যুবকদের একাংশ। জোর করে যুদ্ধে পাঠানো হতে পারে এই আতঙ্ক থেকেই তারা দেশ ছাড়তে শুরু করছে। এই পরিস্থিতিতে মস্কোর গণভোটের ঘোষণা ইউক্রেনকে ভেঙে একাংশ দখলের রাখার প্রচেষ্টা বলেই মনে করা হচ্ছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সেনা অভিযানের ঘোষণা করেছিলেন পুতিন। তার আগে রুশ সীমান্ত লাগোয়া পূর্ব-ইউক্রেনের ডোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলকে ‘স্বাধীন রাষ্ট্র’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন তিনি। ওই দুই অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর বড় অংশ রুশ। মস্কো-পন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলিও কয়েক বছর ধরে সেখানে সক্রিয়। কিন্তু সাত মাসের যুদ্ধেও সেখানে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি রুশ সেনারা।
জাপোরিজিয়ায় গণভোটের ঘোষণার পিছনে মস্কোর ‘অন্য পরিকল্পনা’ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। গণভোটের মাধ্যমে জাপোরিজিয়াকে ‘স্বশাসিত’ ঘোষণা করে সেখানকার পরমাণুকেন্দ্রটি দখলে রাখাই পুতিনের মতলব বলে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলির একাংশ মনে করছে।
ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররা রাশিয়ার এ পদক্ষেপকে ‘ভূমি দখল’ আখ্যা দিয়ে নিন্দা জানিয়েছে। নির্বাচনে ব্যালটে আসা ফলাফলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না বলেও জানিয়েছে তারা। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, এটি একটি বিপজ্জনক সিদ্ধান্ত। বৃহস্পতিবার ২২ সেপ্টেম্বর, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তিনি জোর গলায় বলেন, ইউক্রেনের মাটিতে রাশিয়ার কোনো দাবিই ইউক্রেনীয়দের আত্মরক্ষার অধিকার কেড়ে নিতে পারে না। রাতে দেওয়া এক ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, এ নির্বাচন একটি প্রতারণা ও অগণতান্ত্রিক।
রুশ গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, আয়োজিত গণভোটে নিযুক্ত কর্মকর্তারা শুক্রবার থেকে সোমবার পর্যন্ত পোর্টেবল ব্যালট বাক্স নিয়ে লুহানস্ক, দোনেৎস্ক খেরসন ও জাপোরিঝিয়া প্রদেশে ঘরে ঘরে যাবেন। পঞ্চম দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার ২৭ সেপ্টেম্বর ভোট কেন্দ্রের কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে।