কালিয়াকৈরে হাইটেক পার্ক কবে হবে?
প্রযুক্তি ডেস্ক : তথ্যপ্রযুক্তি অঙ্গনকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশে একটি ‘হাইটেক পার্ক’ বা ‘আইটি ভিলেজ’ গড়ার পরিকল্পনা চলছে সেই ১৯৯৯ সাল থেকে৷ কিন্তু আজও প্রত্যাশিত পার্কটি তৈরি হয়নি৷ কেন এই ব্যর্থতা?
হানোফারে অনুষ্ঠিত তথ্যপ্রযুক্তি মেলা সেবিট-এ এসেছেন বাংলাদেশ ‘হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের’ ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম৷ একান্ত সাক্ষাৎকারে চলতি বছরের মধ্যেই হাইটেক পার্কের কাজ শুরুর ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি৷
তবে বাস্তবতা হচ্ছে, ১৯৯৯ সাল থেকে হাইটেক পার্ক তৈরির পরিকল্পনা চললেও গাজীপুরের কালিয়াকৈরে এখনো অবকাঠামোই পুরোপুরি তৈরি সম্ভব হয়নি৷ কয়েক বছর আগেও সেখানে গরু চরতো৷
বর্তমানে একটি মূল ফটক এবং দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভবন রয়েছে সেখানে৷ কিন্তু মূল কাজ এখনো বাকি৷ তাই চলতি বছরের মধ্যে কীভাবে হাইটেক পার্কের কাজ শুরু হবে সেটাও এক বড় প্রশ্ন৷
হোসনে আরা অবশ্য হাল ছাড়তে রাজি নন৷ জানালেন, ১৯৯৯ সালে পরিকল্পনা নেয়া হলেও জমি বুঝে পাওয়া থেকে শুরু করে ‘অন্যান্য কাজে’ সময় লেগেছে অনেক৷ তবে ২৩২ একর খাস জমি এখন তৈরি৷ প্রয়োজনে আশেপাশের জমিও দিতে প্রস্তুত স্থানীয়রা৷
কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কের কাজ এগিয়ে নিতে কয়েক বছর আগে গঠিত হয় ‘হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ৷’ ঢাকার বিসিসি ভবনে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এই অথরিটি৷ দ্রুত হাইটেক পার্ক তৈরির ব্যাপারে তারা সচেষ্ট হলেও বিশেষ প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে রাজনৈতিক চাপ তাদের পিছিয়ে দিচ্ছে বারবার৷ অভিযোগ রয়েছে, পার্ক নির্মাণের কাজ একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে পাইয়ে দিতে গত বছর একটি দরপত্র বাতিল করা হয়েছে৷
এখন আবার পুনরায় দরপত্র আহ্বানের কাজ চলছে৷ ফলে পিছিয়ে যাচ্ছে হাইটেক পার্ক তৈরির কাজ৷
হোসনে আরা অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বরং জানালেন হাইটেক পার্কের সম্ভাবনার কথা৷ তিনি মনে করেন, তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞানের দিক থেকে বাংলাদেশের তরুণরা অন্যান্য দেশের তরুণদের থেকে পিছিয়ে নেই৷ সুবিধাজনক ব্যাপার হচ্ছে, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে থেকে স্বল্প খরচে কাজ করিয়ে নেয়া সম্ভব৷ বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো তাই হাইটেক পার্কে বাংলাদেশি শ্রমশক্তি কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক মানের কাজ করিয়ে নিতে চাচ্ছে৷ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এ ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে৷ আর এই আগ্রহ বিবেচনায় এনে দ্রুত হাইটেক পার্ক নির্মাণের দিকে মনোযোগী হোসনে আরা৷
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিভিন্ন শহরে ‘হাইটেক পার্ক’ তৈরি হয়েছে বহু আগেই৷ তথ্য প্রযুক্তি বিশ্বে ভারত ইতোমধ্যে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছে৷ বাংলাদেশ সে ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে অনেক৷ মেধাশক্তি থাকলেও পরিকাঠামো বড় অন্তরায়৷ এই অন্তরায় কাটিয়ে তুলতে কালিয়াকৈর ছাড়াও বিভিন্ন শহরে তথ্য প্রযুক্তি কেন্দ্র বা হাইটেক পার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন হোসনে আরা৷ পাশাপাশি বিভিন্ন শহরে সভা, সমাবেশ আয়োজনের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ বাড়ানোর চেষ্টা করে হবে বলেও জানান তিনি৷
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সাল থেকে নিয়মিত সেবিটে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ৷ চলতি বছর দশটির বেশি প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকজন প্রতিনিধিরা ছাড়াও পাঁচজন সরকারি কর্মকর্তা মেলায় রয়েছেন৷ বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই তথ্যপ্রযুক্তি মেলা চলবে ১৪ মার্চ পর্যন্ত৷- ডিডব্লিউ।