জি-২০ সম্মেলন : কিয়েভের শান্তি প্রস্তাব নাকচ রাশিয়ার
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির দেওয়া শান্তি প্রস্তাব গ্রহণ করেনি রাশিয়া। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ২০টি অর্থনীতির দেশ নিয়ে গঠিত জি-২০ জোটের সম্মেলনে মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) জেলেনস্কি ১০ দফা শান্তি প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
বিশ্বনেতাদের তীব্র নিন্দার পরিপ্রেক্ষিতে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ সম্মেলন শেষ না করে এ দিনই রাশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন।
জি-২০ সম্মেলনের ঘোষণার ফাঁস হওয়া খসড়ায় দেখা গেছে, নেতারা ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের নিন্দা করেছেন।
বিজ্ঞাপন
তবে এ খসড়া চূড়ান্ত হওয়ার কথা শেষদিন বুধবার।
ইন্দোনেশিয়ার পর্যটন দ্বীপ বালিতে মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে জি-২০ সম্মেলন শুরু হয়। বুধবার ঘোষণা গ্রহণের মাধ্যমে তা শেষ হওয়ার কথা। মঙ্গলবার এতে ভিডিও মাধ্যমে যুক্ত হয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি ১০ দফা শান্তি প্রস্তাব দেন। জি২০ থেকে রাশিয়ার নাম বাদ দিয়ে জোটটিকে জি১৯ সম্বোধন করে জেলেনস্কি এই প্রস্তাব তুলে ধরেন।
সিএনএনের খবরে বলা হয়, জেলেনস্কির দেওয়া শান্তি প্রস্তাবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- পরমাণু হামলা থেকে সুরক্ষার নিশ্চয়তা, খাদ্য নিরাপত্তা, জ্বালানি নিরাপত্তা এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে রুশ যুদ্ধাপরাধের বিচার করা। এ ছাড়া মস্কোর সঙ্গে একটি চূড়ান্ত শান্তিচুক্তির দাবি করেন জেলেনস্কি।
এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে রাশিয়াকে এখন ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে এবং তা করা সম্ভব। ‘ ভিডিও মাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ার সময় জেলেনস্কি জি-২০ নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়াকে চাপ দেন।
ভোলোদিমির জেলেনস্কির এই প্রস্তাব রাশিয়া গ্রহণ করেনি। প্রস্তাব পেশের পর ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা দেখেছি (প্রস্তাবটি)। …মূল বিষয়টি হচ্ছে, ইউক্রেন প্রকৃতপক্ষে এবং বৈধ উপায়ে কোনো শান্তি আলোচনা করতে পারে না এবং করতে চায় না। ‘
জি-২০ সম্মেলনে রাশিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত হওয়া রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ সম্মেলনের মাঝপথে বালি ত্যাগ করেন। জেলেনস্কির শান্তিপ্রস্তাব উত্থাপনের সময় তিনি হোটেলকক্ষে ছিলেন। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের প্রস্তাব সামনে আসার পর একে ‘অবাস্তব’ আখ্যা দিয়েছেন লাভরভ।
জেলেনস্কির প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায় লাভরভ বলেন, ‘সব সমস্যা ইউক্রেনের দিক থেকেই এসেছে। তারা স্পষ্টভাবে আলোচনা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এমন কতগুলো শর্ত পেশ করেছে, যা আসলেই অবাস্তব। ‘
লাভরভ দাবি করেন, পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেন আক্রমণের প্ররোচনা জুগিয়েছে রাশিয়াকে। তিনি অভিযোগ করেন, মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো সামরিক জোট এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ইউক্রেন যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করছে।
সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা নেতারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে জি-২০ নেতাদের একজোট করতে সচেষ্ট ছিলেন। তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘যৌথ নিন্দা প্রস্তাব’ তৈরি করতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু ‘বেশির ভাগ’ নেতা এতে রাজি হলেও কেউ কেউ সরাসরি রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে রাজি ছিলেন না।
নিন্দাপ্রস্তাব আনা সম্পর্কে মঙ্গলবার ফ্রান্সভিত্তিক সংবাদ সংস্থা এএফপি দাবি করে, তাদের কাছে একটি খসড়া বিবৃতি এসেছে।
এতে দেখা গেছে, যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টির বিষয়ে একমত হয়েছেন জি-২০ নেতারা। কিন্তু যুদ্ধের দায় চাপিয়ে রাশিয়ার নিন্দা করার বিষয়ে দেশগুলো বিভক্ত। তবে বিশ্বনেতারা যুদ্ধ বন্ধের জন্য আলোচনার কথা বলেছেন এতে।