বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Monday, December 23, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » নতুন অফিস সময়ে পুরনো যানজট

নতুন অফিস সময়ে পুরনো যানজট 

111015235033Kk-221116-51

বেসরকারি এক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মো. সোবহান। অফিসের সময় পরিবর্তন হওয়ায় একটু দেরিতেই বাসা থেকে বের হয়েছেন; কিন্তু সড়কে যানজট পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন দেখছেন না। অফিসের নতুন সময় এসেছে। তাই নতুন সময়ে পুরনো যানজটের দেখা মিলছে।

বিজ্ঞাপন

কথা হলে সোবহান বলেন, ‘অফিসের সময়সূচি পরিবর্তন হলেও সড়কে যানজট কমেনি। প্রতিদিনের মতো আজও (গতকাল) যানজটের কারণে অফিসে যেতে দেরি হবে। এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চাই। ’

শীতকাল চলে আসায় সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধাস্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস সময়সূচি পুনর্নির্ধারণ করেছে সরকার। গতকাল মঙ্গলবার থেকে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিসের কার্যক্রম। নতুন সময়সূচি অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানগুলো চলবে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

kalerkantho

গতকাল বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে গাড়ির চাপ বাড়তে থাকে। দুপুর ১২টার দিকে মিরপুর থেকে গুলিস্তানের পথে কল্যাণপুর ও গণভবন এলাকায় যানজট দেখা যায়। তবে গণভবন পার হলে সায়েন্সল্যাব পর্যন্ত রাস্তা ছিল ফাঁকা। সায়েন্সল্যাব থেকে গুলিস্তান পর্যন্তও হালকা যানজট দেখা যায়।

অফিসের কাজে মিরপুর থেকে গুলিস্তান প্রতিদিনই যাতায়াত করেন ইমরান হোসেন। তিনি বলেন, ‘নিউ মার্কেট অঞ্চল বন্ধ থাকার কারণে আজ এদিকে যানজট কম দেখা যাচ্ছে। নইলে সব সময় খুব যানজট থাকে। ’

তবে এই চিত্রের উল্টো দেখা গেছে বিকেল ৩টার পর। গুলিস্তান থেকে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত পুরো সড়কে ব্যাপক যানজট ছিল। এমনকি মালিবাগ এলাকায় উড়ালসেতুর ওপরও ব্যাপক যানজট দেখা যায়। কাকরাইল মোড়, মালিবাগ, রামপুরা, উত্তর বাড্ডা এবং নতুনবাজারের অবস্থাও ছিল প্রায় একই রকম।

এই যানজটে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। পল্টন মোড় থেকে উত্তর বাড্ডা আসছিলেন রিফাত হাসান। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরে রাস্তায় এখন দুই-তিন ঘণ্টা চলে যায়। তাইলে আর দিনের কী বাকি থাকে?’

যানজটের কারণে ঠিকমতো ট্রিপ মারতে পারছেন না বলে জানান ভিক্টর বাসের চালক আলিফ মিয়া। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘দুই ট্রিপ দিতেই পুরো দিন চলে যায়। এভাবে গাড়ি চালাইয়া নিজে না পাই দুই টাকা, না মালিককে দিতে পারি। ’

সকাল ৯টা থেকেই রাজধানীর মিরপুর সড়ক, ফার্মগেট থেকে শাহবাগ, পল্টন, মগবাজার, বাড্ডা ও বিমানবন্দর সড়কে ব্যাপক যানজটের কারণে অফিসগামী ও কর্মজীবী মানুষ ভোগান্তিতে পড়ে। এ সময় দীর্ঘ যানজটের কারণে সড়কে যানবাহনের চাপ দেখা যায়, যা বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরো বাড়তে থাকে।

যানজটের সার্বিক চিত্র ও নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মনিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সড়কে এমনিতেই ধারণক্ষমতার চেয়ে গাড়ির চাপ বেশি। এর বাইরে কখনো কখনো বিশেষ কারণে যানজট সৃষ্টি হয়। তবে আমরা বরাবরই চেষ্টা করি রাজধানীকে যানজটমুক্ত রাখতে। এই চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ’

গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার যানজটের কারণ প্রসঙ্গে মনিবুর রহমান বলেন, সকালে মোহাম্মদপুর এলাকায় সড়কে একটি বড় লরি নষ্ট হয়ে যায়। এতে দুপুর ১২টা নাগাদ সেটি সড়ক থেকে সরানোর আগ পর্যন্ত ওই এলাকায় যানজট ছিল। এর বাইরে খিলক্ষেত এলাকায় একটি গাড়ি সড়কে নষ্ট হলে সেটি সরানোর আগ পর্যন্ত ওই সড়কে কিছুটা যানজটের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া বনানী চার লেন সড়কের কাজ চলছে। এতে সেখানে ধীরগতিতে গাড়ি চলে। এটাও যানজটের একটা কারণ। আবার সকালের দিকে পরীক্ষার কারণে সড়কে গাড়ির চাপ ছিল। এতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যানজট ছিল। তবে দুপুরের পর যানজট অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ছিল।

যানজটের নিয়মিত ভোগান্তি নিয়ে সরকারি চাকরিজীবী মো. আরমান বলেন, যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে অফিসের সময় পরিবর্তন করে কতটুকু সুফল পাওয়া যাবে? মাঝেমধ্যেই শহরে তীব্র যানজট হয়। এতে চরম ভোগান্তি হয়। অফিসে যেতে আবার অফিস থেকে বাসায় ফিরতেই অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়।

বিকেলে শহীদ তাজউদ্দীন এভিনিউ, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, মহাখালী, মগবাজার, কাকলী হয়ে বনানী পর্যন্ত তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। তবে ফার্মগেট, বিজয় সরণি হয়ে মিরপুর রোড, খিলক্ষেত ও জোয়ারসাহারা হয়ে উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টর পর্যন্ত যান চলাচল ছিল প্রায় স্বাভাবিক।

মিরপুর থেকে সদরঘাট কর্মক্ষেত্রে যাতায়াতের বর্ণনা দিয়ে সরকারি চাকরিজীবী জালিজ মাহমুদ বলেন, অন্যান্য দিনের মতোই যানজট ছিল। তবে এদিন সড়কে গণপরিবহনের সংখ্যা ছিল তুলনামূলক কম। ফিরতি পথে তীব্র যানজটে পড়তে হয়েছে। মগবাজার হয়ে ফিরতি পথে অতিরিক্ত দেড় ঘণ্টা যানজটে পড়তে হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১ নভেম্বর সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধাস্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিসের সময়সূচি পুনর্নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আগের দিন ৩১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে গত ২৪ আগস্ট থেকে অফিসের সময়সূচি পরিবর্তন করে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা করা হয়ছিল।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone