তেহরানে ক্যামেরায় ধরা পড়ল যাত্রীদের ওপর নিরাপত্তাকর্মীদের গুলিবর্ষণ
ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী তেহরান মেট্রো স্টেশনে কয়েক ডজন যাত্রীর ওপর গুলি চালাচ্ছে। এএফপির শেয়ার করা একটি যাচাইকৃত ভিডিওতে এমনই দেখা গেছে। ক্যামেরায় ধরা পড়ে, সাদা পোশাক পরা অফিসারসহ নিরাপত্তা বাহিনী হিজাবহীন নারীদের ওপর হামলা করছে।
সেপ্টেম্বরে আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে ইরানজুড়ে রাস্তায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
বিজ্ঞাপন
হেফাজতে থাকা অবস্থায় মাসা আমিনির মৃত্যু নিয়ে নারী-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ বুধবার তৃতীয় মাসে যখন প্রবেশ করে তখন ইরানি কর্তৃপক্ষ আরো কঠিন অবস্থান নিয়েছে। ইরান একাধিক নারীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ জারি করেছে। সংঘর্ষে দুই দিনে অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
সর্বশেষ ঘটনায়, ইরানে চলমান বিক্ষোভে ‘দাঙ্গাকারীদের’ হাতে ইরানি রেভল্যুশনারি গার্ডের দুই সদস্য ও আধাসামরিক বাহিনীর এক সদস্য নিহত হয়েছেন। বুধবার দেশটির রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে আরব নিউজ। নিহতদের মধ্যে আছেন কর্নেল রেজা আলমাসি। তিনি মঙ্গলবার ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ পশ্চিম আজারবাইজানের কুর্দি সংখ্যাগরিষ্ঠ শহর বুকানে অজ্ঞাত ‘দাঙ্গাকারীদের’ গুলিতে নিহত হয়েছেন। ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা আইআরএনএ এ খবর নিশ্চিত করেছে।
গার্ডের আরেক সদস্য নিহত হয়েছেন কুর্দি অধ্যুষিত কামিয়ারান শহরে। আর দক্ষিণের শহর সিরাজে একটি মলোটভ ককটেলের আঘাতে মারা যান আধাসামরিক বাসিজ বাহিনীর আরেক সদস্য।
অসলোভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হেনগাও জানিয়েছে, বুধবারের বিক্ষোভে কুর্দিস্তান প্রদেশে নিরাপত্তারক্ষীদের গুলিতে বুরহান করিমি নামের এক বিক্ষোভকারী মারা গেছেন।
সংস্থাটি জানায়, ফুয়াদ মোহাম্মদি নামের নিহত হওয়া আরেকজনের শেষকৃত্যে বিক্ষোভকারীরা যোগ দিতে গেলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে নিহত হন বুরহান। হেনগাও আরো জানায়, ইরানের সরকারি বাহিনী বুধবার পশ্চিমাঞ্চলীয় সানন্দাজ শহরের ফ্ল্যাশপয়েন্টে কুর্দিস্তান বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের পর শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালায়।
বুধবার ইরান হিউম্যান রাইটস প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, আমিনির মৃত্যুর পর থেকে নিরাপত্তা বাহিনী অন্তত ৩৪২ জনকে হত্যা করেছে। যার মধ্যে ৪৩টি শিশু ও ২৬ জন নারী রয়েছে।
সংস্থাটির মতে, ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে এ পর্যন্ত ১৫ হাজার বিক্ষোভকারী গ্রেপ্তার হলেও ইরান সরকার সংখ্যাটি স্বীকার করেনি।
আইআরএনএ জানায়, বুধবার কুজেস্তানের একটি বাজারে দুটি মোটরসাইকেলে করে আসা ‘সশস্ত্র জঙ্গিরা’ বিক্ষোভকারী ও নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় পাঁচজন নিহত হওয়ার দাবি করেন কুজেস্তানের ডেপুটি গভর্নর ভালিওল্লাহ হায়াতি। তবে ওই হামলার দায় এখনো কেউ স্বীকার করেনি।
এদিকে বুধবার ইরানের বিচার বিভাগ জানিয়েছে বিপ্লবসংক্রান্ত বিচারকাজের জন্য গঠিত আদালত ‘রায়ট’-এর কারণে আরো তিনজনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন। আগের দিন মঙ্গলবারও একজনের মৃত্যুদণ্ড দেন ইরানের আদালত। এই দণ্ডের কঠোর নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন আইএইচআরের পরিচালক মাহমুদ আমিরি-মোঘাদ্দাম। তার মতে, বিক্ষোভকারীদের ধরে ধরে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হচ্ছে।