গ্রেপ্তার এড়াতে বাড়িছাড়া বিএনপির নেতাকর্মীরা
রাজশাহীর দুর্গাপুরে গত ২১ নভেম্বর রাতে চারটি ককটেল উদ্ধারের ঘটনায় বিএনপি-যুবদল ও ছাত্রদলের ১৬ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরো ১৫০-১৬০ জনের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা করা হয়েছে। মামলার পর থেকে উপজেলাজুড়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে রাত-বিরাতে অভিযান চালানো হচ্ছে পুলিশ। বাধ্য হয়ে মামলার আসামিরা গত বৃহস্পতিবার উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে আসেন। তবে অজ্ঞাতপরিচয়দের গ্রেপ্তার করতে এখনো অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।
বিজ্ঞাপন
তাই গ্রেপ্তারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহীতে বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে ককটেল উদ্ধার ও বিস্ফোরণের ঘটনায় একের পর এক মামলা হয়েছে। সবমিলিয়ে রাজশাহীসহ বিভাগের আট জেলায় এ পর্যন্ত ৬৪টি মামলা করেছে পুলিশ। এসব মামলায় অন্তত দেড় হাজার আসামি করা হয়েছে।
এদিকে রাজশাহী নগরীর মাদরাসা মাঠে আগামী ৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য নাশকতা ঠেকাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগও। রাজশাহী মহানগরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ-যুবলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ মিছিল ও সভা করা হচ্ছে প্রতিদিনই। সমাবেশের দিনও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নগরীর জিরোপয়েন্ট ও আলুপাট্টিতে অবস্থিত মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিবেন দলের নেতাকর্মীরা। অপরদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে এরই মধ্যে নগরীর বিভিন্ন প্রবেশদ্বারগুলোতে পুলিশি তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে।
স্থানীয় বিএনপি নেতা কামরুজ্জামান আয়নাল বলেন, ‘গণসমাবেশের প্রস্তুতি সভায় দুর্গাপুরে ইউনিয়ন পর্যায়ে কয়েকটি সমাবেশে হাজার হাজার নেতাকর্মী উপস্থিতি ছিল। কিন্তু একটি কৃত্রিম ঘটনা সাজিয়ে পুলিশ ১৫০-১৬০ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। মামলার পর নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। দুর্গাপুরে গণসমাবেশ করায় সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে পুরনো মামলায়। এ কারণে অনেক নেতাকর্মী ভয়ে রাতে বাড়িতেই থাকছেন না। তবে সমাবেশের তিন আগেই আমরা রাজশাহী শহরে গিয়ে অবস্থান নেব। ’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ‘গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজশাহীসহ সাংগঠনিক ৯ জেলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৬৪টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তারসহ হয়রানি করা হচ্ছে। তবে রাজশাহীর সমাবেশ হবে স্মরণকালের সর্বোচ্চ বড় সমাবেশ। সে লক্ষ্যে আমরা নানা প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছি। ’
এদিকে নওগাঁর আত্রাইয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর হামলার অভিযোগে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৪০-৪৫ জন বিএনপির নেতাকর্মীদের আসামি করে মামলা করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে উপজেলার পাঁচুপুর ইউনিয়ন শ্রমীকলীগের সহ-সভাপতি কাউসার ইসলাম বাদী হয়ে আত্রাই থানায় এই মামলা করেন। মামলার প্রেক্ষিতে রাতেই অভিযান চালিয়ে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এই হামলার ঘটনায় গতকাল শনিবার সকালে প্রতিবাদ মিছিল বের করে আওয়ামী লীগ। সেখানে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই হামলায় চারজন আহত হয়েছে বলে দলীয়ভাবে দাবি করা হয়েছে। ঘটনাস্থল আত্রাই সেতু এলাকা থেকে দুটি বিস্ফোরিত ও একটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে আত্রাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আক্কাস আলী বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার পাঁচুপুর গ্রামে বিএনপির লোকজন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে আহত করে। ওই হামলার প্রতিবাদে শনিবার সকালে থানা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ মিছিল বের করে। মিছিলটি আত্রাই সেতুর কাছে পৌঁছালে বিএনপির লোকজন পরপর তিনটি ককটেল নিক্ষেপ করে। ’
আত্রাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল জলিল বলেন, ‘আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী মহাসমাবেশে এই এলাকা থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা অংশ নেবেন। তাই তাঁদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টির লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিজেরাই ককটেল নিক্ষেপ করেছেন। ’
তিনটি ককটেল উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে আত্রাই থানার ওসি তারেকুর রহমান সরকার বলেন, হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার দুইজনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।