ইন্দোনেশিয়ায় নতুন যৌন আইন, ক্ষেপেছে পর্যটন ব্যবসায়ীরা
করোনাভাইরাস মহামারির ক্ষতি থেকে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার পর্যটন ব্যবসায়ীরা। এরই মধ্যে দেশটির পার্লামেন্টে নতুন আইন পাস হয়েছে।
ওই আইনে বলা হয়েছে, বিয়ে না করে শারীরিক সম্পর্কে জড়ালে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ ধরনের অপরাধ প্রমাণ হলে এক বছরের বেশি সময়ের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার পার্লামেন্টে আইনটি পাস হয়েছে।
সমালোচকরা বলছেন- এই আইনের ফলে রাজনৈতিক স্বাধীনতা খর্ব হতে পারে। আইনটি কার্যকর হলে ইন্দোনেশিয়ার নাগরিকদের পাশাপাশি বিদেশিদের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য হবে।
আইনটির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে ইন্দোনেশিয়ার কয়েকটি ইসলামী সংগঠন। তবে বিরোধীরা বলছেন, আইনটি ১৯৯৮ সালে ইন্দোনেশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট সুহার্তোর পতনের পর কার্যকর উদার সংস্কারগুলোর পরিপন্থী।
চলতি সপ্তাহে জাকার্তায় ওই আইনের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ হয়েছে এবং আইনটির ব্যাপারে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নতুন ফৌজদারি আইনে পর্যটকদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা কম। কারণ, এ ধরনের মামলা চলার ক্ষেত্রে অভিযুক্ত দম্পতির সন্তান, পিতামাতা বা স্ত্রীর দ্বারা দায়ের করা অভিযোগের প্রয়োজন হবে।
তবে মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থার একজন গবেষক বলেছেন, এ ধরনের আইন বিদ্যমান থাকলে সমস্যার সৃষ্টি হবে।
ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতি অস্ট্রেলিয়ার পর্যটনের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে। করোনা শুরু হওয়ার আগে ইন্দোনেশিয়ার এক নম্বর পর্যটন উৎস ছিল দেশটি।
হাজার হাজার অস্ট্রেলীয় প্রতি মাসে বালি দ্বীপে বেড়াতে যেত। সেখানকার পরিবেশ পর্যটকরা উপভোগ করতো এবং মদ্যপান ও রাতভর সৈকতে পার্টিতে আনন্দ করতো।
বালি দ্বীপে হানিমুনে যাওয়া ও অস্ট্রেলিয়ার হাজার হাজার স্নাতক সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীদের ‘শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি’ উদযাপন করতে যাওয়ার বিষয়টি একেবারে সাধারণ ঘটনা। কিন্তু নতুন আইনের ফলে সেখানে অনেকেই যেতে চাইবে না বলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সেখানে পর্যটকদের গাইড ইয়োমান জানান, এই আইনের ফলে আমি খুব খুব বেশি আতঙ্কে আছি। কারণ, আমি পর্যটনের ওপর নির্ভর করে জীবন ধারণ করি।
তিনি আরো জানান, বালি দ্বীপে প্রাকৃতিক এবং মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগের বহু উদাহরণ রয়েছে। সেসব কারণে এখানে পর্যটক কমেছে।
তিনি বলেছেন, উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় বালিতে বোমা পড়েছিল। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত হয়েছে, করোনার ধাক্কা এসেছে। সব সময়ই পর্যটক কমেছে। বালির পর্যটন সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
নতুন আইনে বলা হয়েছে, ইন্দোনেশিয়ান এবং বিদেশি উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। এতে বেশ কয়েকটি নৈতিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, অবিবাহিত যুগল একসঙ্গে বসবাস করা এবং শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা অবৈধ।
নতুন আইনটি আরো তিন বছর কার্যকর হবে না। দেশটির প্রেসিডেন্টকে অপমান করা এবং রাষ্ট্রীয় মতাদর্শের পরিপন্থী মত প্রকাশের ব্যাপারেও নিষেধাজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এর আগে ইন্দোনেশিয়ার উপ-আইনমন্ত্রী এডওয়ার্ড ওমর শরিফ হিয়ারিয়েজ বলেছেন, নতুন ওই আইনটির খসড়া কয়েক দশক ধরে প্রস্তুত করা হয়েছে। ইন্দোনেশীয় মূল্যবোধের সঙ্গে সংগতি রেখে অপরাধ দমন আইনটি প্রণয়ন করতে পেরে আমরা গর্বিত।