পূর্ণতার পথে মেসির বিশ্বকাপ, কথা রেখেছেন খুদে জাদুকর!
প্রতিশোধের হাওয়া তুলেছিল আর্জেন্টাইন সমর্থকরা। সে নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না বললেও যেন লিওনেল মেসির মনে ছিল। যে সমর্থকরাই তাদের জ্বালানি, তাদের একটি দাবি কি ফেলা যায়। খুদে জাদুকর কথা রেখেছেন।
বিজ্ঞাপন
পায়ের জাদুকরীতে ফুটবলকে শিল্পিত রূপ দিয়ে দুবারের বিশ্বজয়ীদের নিয়ে গেছেন আরেকটি শিরোপার দুয়ারে। রাশিয়া বিশ্বকাপে ঠিক যেভাবে হেরেছিল, সেই ৩-০ গোলের হার ক্রোয়েশিয়াকে ফিরিয়ে দিয়েই আর্জেন্টিনা পৌঁছে গেছে কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে।
মিনিট বিশেক পর্যন্ত খেলাটা ক্রোয়েশিয়ার পায়েই ছিল। দুই মিনিট বাদে লিওনেল মেসির পায়ে বল পড়তেই যেন বদলে গেল খেলার গতি। আর্জেন্টাইন অধিনায়ককে ঘিরে ধরে চার ডিফেন্ডার, পরে ক্লিয়ার করেন গাভারদিওল। ওই এক ঝলকে তেমন কিছুই হয়নি, তবে পুরো দল যেন ফিরে পেয়েছে সামনে এগোনোর বিশ্বাস। ক্রোয়েশিয়ার দাপট কমতে থাকে, এর মধ্যেই এঞ্জো ফের্নান্দেস এক শটে পরীক্ষা নেন লুভাকোভিচের। অমন হালকা শটে ক্রোয়েশিয়ার শেষ প্রহরীর কিছু হওয়ার নয়। ৩২ মিনিটে হয়েছে নিজের ভুলে। তাঁর সেই ভুল না করেও উপায় ছিল না। আলভারেস থ্রু বলটি ধরলেই বিপদ হতো।
আর্জেন্টিনার এই নম্বর নাইনকে ফাউল করে ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক পেনাল্টির সুযোগ করে দেন মেসিকে। তাঁরও তো পেনাল্টি মিস হয়। হয়েছিল পোল্যান্ড ম্যাচেও। তা ছাড়া লুভাকোভিচের জন্য একটা লাইফলাইনও বটে। কিন্তু কিসের কি, পেনাল্টিতে লক্ষ্যভেদ করে তিনি লুসাইল মাতিয়ে তোলেন। তাতে রাঙান বিশ্বকাপে যৌথ সর্বোচ্চ ২৫ ম্যাচ খেলার উপলক্ষটা। আর গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে পেছনে ফেলে হয়ে যান আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ ১১ গোলের মালিক।
৩৪ মিনিটের এই গোলে লিওনেলসুলভ কোনো মাধুরী নেই। শুধু সংখ্যাটা বেড়ে ৫ হয়েছে আর জাগিয়েছেন পুরো দলকে। তারপর খেলেছেন
তিনি মনের মাধুরী মিশিয়ে। কোনো মার্কার, ফাউল কিছুই আর টিকছে না তাঁর সামনে। পঁয়ত্রিশেও জাদুকরের আস্তিনে লুকিয়ে আছে অনেক কিছু। এই গোলের মিনিট চারেক বাদে আলভারেসের প্রতি আক্রমণের গোলের সূত্রধরও তিনি। নিজের সীমায় মেসি বলটা তুলে দেন তাঁর পায়ে। এরপর মাঝমাঠ ধরে তিনি এক ভোঁ দৌড়ে তিন ডিফেন্ডারকে পেছনে ফেলে দুর্দান্ত এক গোল করে ব্যাকফুটে ঠেলে দেন ক্রোয়েশিয়াকে।
ফাইনালের আগে এই নম্বর নাইনকে যেন আরো আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে চান। তাই ৭০ মিনিটে ডানদিকে জাদুকরের পায়ে জন্ম হয় এক অদ্ভুত সুন্দর মুভের। আবারও সেই বাঁ পায়ের শিল্প, সেই পায়ে চড়কির মতো ঘুরিয়েছেন ক্রোয়েশিয়ার সেরা গাভারদিওলকে। শেষে তাঁকে ফাঁকি দিয়ে বাইলাইন থেকে কাটব্যাক করে আলভারেসের পায়ে তুলে দেন জোড়া গোল। ফাইনালের আগে ম্যানসিটির এই ফরোয়ার্ডের হয়ে গেল চার গোল। এখন নিশ্চয়ই ফাইনালে ‘মেসির বিশ্বকাপে’র জন্য লড়তে আত্মবিশ্বাসের অভাব হবে না এই স্ট্রাইকারের।