পানি গবেষণায় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ যুক্তরাষ্ট্র-ফ্রান্সের
\পৃথিবীর প্রায় সমস্ত জলাশয়ের জরিপ করার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্স যৌথভাবে একটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জলাশয়গুলো কিভাবে প্রভাবিত হয় তা খুঁজে বের করাই এ মিশনের লক্ষ্য।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যানডেনবার্গ স্পেস ফোর্স ঘাঁটি থেকে স্পেসএক্স রকেটে করে স্যাটেলাইটটি স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ১১টা ৪৬ মিনিটে যাত্রা শুরু করে। সারফেস ওয়াটার অ্যান্ড ওশান টপোগ্রাফি (এসডাব্লিউওটি) স্যাটেলাইটটি একটি বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প।
বিজ্ঞাপন
এটি মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা এবং ফ্রান্সের মহাকাশ সংস্থা সিএনইএস যৌথভাবে তৈরি করেছে।
নাসার বিবৃতি অনুসারে, ছয় মাস ধরে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর স্যাটেলাইটটি বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ শুরু করবে। এ প্রকল্পের প্রধান থিয়েরি লাফন বলেছেন, মিশনটি সাড়ে তিন বছর ধরে চলবে, তবে পাঁচ বছর বা তারও বেশি সময় পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে।
নাসার আর্থ সায়েন্স ডিভিশনের পরিচালক কারেন সেন্ট গার্মেইন উৎক্ষেপণের আগে বলেছেন, ‘আমাদের গ্রহের চারপাশে পানি কিভাবে চলাচল করে তা নিয়ে আমাদের ধারণায় এসডাব্লিউওটি স্যাটেলাইটটি একটি বৈপ্লবিক অগ্রগতি নিয়ে আসবে। এর মাধ্যমে আমরা পানির ঘূর্ণন,স্রোত এবং মহাসাগরে প্রচলন বিশদভাবে দেখতে পারব, যা আমরা আগে কখনো দেখতে পারিনি। ’ এ ছাড়াও এটি অত্যধিক পানির অঞ্চলে বন্যার পূর্বাভাস দিতে এবং খরাপ্রবণ অঞ্চলে পানি ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করবে বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে ফরাসি মহাকাশ সংস্থা সিএনইএসের সেলমা শাখশালি মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, স্যাটেলাইটটি পানিবিদ্যায় একটি বিপ্লবের প্রতিনিধিত্ব করবে। যার মাধ্যমে বর্তমান প্রযুক্তির চেয়ে ১০ গুণ সূক্ষ্মভাবে জলাশয়গুলো পর্যবেক্ষণ করার লক্ষ্য রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, ৮৯০ কিলোমিটার উচ্চতা থেকে স্যাটেলাইটটির মাধ্যমে বিশ্বের মহাসাগরগুলোর এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে পরিষ্কার দৃশ্য দেখা যাবে। এ ছাড়াও এটি সমুদ্রপৃষ্ঠের বৃদ্ধির পাশাপাশি নদী এবং হ্রদগুলোকেও অনুসরণ করতে পারবে। গবেষকরা বর্তমানে মহাকাশ থেকে কয়েক হাজার হ্রদের তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। কিন্তু নতুন এই প্রযুক্তির মাধ্যমে তারা লাখ লাখ হ্রদের তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন।
নাসার গবেষণা বিজ্ঞানী বেঞ্জামিন হ্যামলিংটন বলেন, ‘আমরা জানি যে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর পানিচক্র ত্বরান্বিত হচ্ছে। যার অর্থ কিছু জায়গায় খুব বেশি পানি রয়েছে এবং কিছু জায়গায় পর্যাপ্ত পানি নেই। আমরা আরো চরম খরা, বন্যার আশঙ্কা করছি। বৃষ্টিপাতের ধরনগুলো পরিবর্তিত হচ্ছে, আরো অস্থির হয়ে উঠছে। তাই ঠিক কী ঘটছে তা বোঝার জন্য এটি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। ’
মার্কিন এবং ফরাসি মহাকাশ সংস্থা দুটি ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এ ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করছে। এর আগেও তারা একটি স্যাটেলাইট তৈরি করেছিল, যার মাধ্যমে সমুদ্রের সঞ্চালন এবং বৈশ্বিক জলবায়ুর ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে উন্নত ধারণা পাওয়া গেছে।