ঝুঁকিতে চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো
নিউজ ডেস্ক : বিভিন্ন বাণিজ্যিক ভবনে অবস্থানসহ নানা সমস্যার কারণে চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন ব্যাংকের শাখাগুলো।
বিগত কয়েক বছরে অন্তত চারবার সিঁদ কেটে এবং দেয়াল ভেঙে টাকা লুটের চেষ্টা করেছে দুর্বৃত্তরা। এসময় তারা টাকা নিতে ব্যর্থ হলেও প্রতিবারই ব্যাংকের ভেতরে ঢুকতে সক্ষম হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ ও বগুড়ায় সোনালী ব্যাংকের দুটি শাখায় সুড়ঙ্গ খুঁড়ে টাকা চুরির ঘটনার মধ্যে গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামের দুটি বাণ্যিজিক ব্যাংকের ভল্টের চাবি হারিয়ে গেছে। এ বিষয়ে থানায় জিডির ঘটনাও ঘটেছে। একটি ভল্টের ব্যাংকের চাবি পাওয়া গেলেও রাষ্ট্রায়ত্ত্ব অগ্রণী ব্যাংকের ভল্টের চাবির হদিস মেলেনি এখনো।
এ অবস্থায় ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েই দায় সেরেছে পুলিশ প্রশাসন।
জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলায় সরকারি-বেসরকারি ৫২টি ব্যাংকের ৫শর বেশি শাখা রয়েছে। যেখানে প্রতিদিন লেনদেন হয় হাজার কোটি টাকা। আর অধিকাংশ ব্যাংকের শাখা বাণিজ্যিক ভবনে হওয়ায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়। বিশেষ করে এসব ব্যাংকের বেশিরভাগ শাখা অবস্থিত খাতুনগঞ্জের মত গিঞ্জির ও ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায়। পুলিশ বলছে, গত কয়েক বছরে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের চারটি শাখায় ঢুকে পড়েছিলো দুর্বৃত্তরা।
সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) প্রকৌশলী বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘ব্যাংকের ওপরে অনেক সময় বিভিন্ন বাণিজ্যিক অফিস থাকে। এগুলো থাকা ব্যাংকের জন্যে আসলে বিপদজনক, কারণ যে কোন সময় দুর্বৃত্তরা ব্যাংকের ভল্টের পাশের দেয়াল ব্যাংকে বা অন্যকোন উপায়ে ব্যাংকের টাকা লুট করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘গত এক মাসে কিশোরগঞ্জ এবং বগুড়ার দুটি ঘটনার প্রক্ষিতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ব্যাংকের যারা কর্মকর্তা আছে নিরাপত্তা দেয়া তাদের দায়িত্ব না হলেও এসব এড়িয়ে গেলে চলবে না।’
নগর পুলিশের সিনিয়র সহকারি কমিশনার (কোতোয়ালী) শাহ মোহাম্মদ আব্দুর রউফ বলেন, ‘আমার এলাকায় অনেক ব্যাংক আছে আমরা তাদের কয়েকবার তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোড়দার করতে বলেছি। তাছাড়া আমারাও চট্টগ্রামের ব্যাংকগুলোকে যথাযথ নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’
তিনি বলেন, ‘ব্যাংক চুরির ঘটনারোধে বেশ কিছু পদক্ষেপ ইতিমধ্যে নেয়া হয়েছে। ব্যাংকের নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মীদের পাশাপাশি আমরাও টহল ও নজরদারি বাড়িয়েছি। এছাড়া ব্যাংকের নিরাপত্তা কর্মীদেরও আমরা নজরদারিতে রাখছি।’
এদিকে মঙ্গলবার নগরীতে ইউসিবিএল ব্যাংকের জুবিলী রোড শাখার রিজার্ভ ভল্টের হারানো চাবি মিলেছে নগরীর জামালখানে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চাবি হারানো যাওয়ার পর ওই দিন রাতেই ব্যাংকে ফোন করে হারিয়ে যাওয়া চাবির হদিস দেন এক অটোরিক্সা চালক। তবে একই সময়ে হারিয়ে যাওয়া অগ্রণী ব্যাংকের ভল্টের হারানো চাবি এখনও পাওয়া যায়নি।
একই সময়ে দুটি ব্যাংকের চাবি হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় পুলিশ ও ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের মধ্যে রহস্যেও সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশও বলছে, এসব ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের চুরির মত ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা জড়িত থাকতে পারেন।
কোতোয়ালী থানার ওসি (তদন্ত) নেজাম উদ্দিন বলেন, ‘মঙ্গলবার দুপুরে ইউসিবিএল ব্যাংক নগরীর জুবলী রোড শাখার ব্যাবস্থাপক চাবি হারিয়েছে মর্মে একটি জিডি করার পর এরপর সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাষ্ট্রয়াত্ত অগ্রণী ব্যাংকের নিউমার্কেট শাখার দু’জন কর্মকর্তা কোতয়ালী থানায় চাবি হারানোর বিষয়ে জিডি করতে আসেন। তবে আমরা জিডি না নিয়ে এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করি। ওই ব্যাংকের চাবি এখনো পাওয়া না গেলেও পুলিশ অনুসন্ধান কাজ করছে।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অঞ্চলের নির্বাহী পরিচালক মাসুম কামাল ভূইয়া বলেন, ‘চট্টগ্রামে অবস্থিত সব ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।’
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক, চট্টগ্রাম অঞ্চলের আওতায় বৃহত্তর চট্টগ্রামে ৫২টি ব্যাংকের মোট শাখা রয়েছে ১ হাজার ৭৯৩টি। এর মধ্যে রাষ্ট্রয়াত্ত্ব চারটি ব্যাংকের ৬৯২টি এবং বেসরকারি ও বিশেষায়িত ব্যাংকের ১ হাজার ১০১টি শাখা রয়েছে।